২৯ আগস্ট, ২০২১ ১৫:০৪

দেশেই উৎপাদন হচ্ছে 'বিশ্ব সেরা চা'

জাপানের মাচা গ্রিন ও ইংল্যান্ডের আলগ্রে টি

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

দেশেই উৎপাদন হচ্ছে 'বিশ্ব সেরা চা'

দেশেই উৎপাদন হচ্ছে 'বিশ্ব সেরা চা'

এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে বিশ্ব সেরা চা জাপানের মাচা গ্রিন টি ও ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় আলগ্রে টি। বিশ্বে চায়ের বাজার এ দুটি চায়ের রয়েছে একচেটিয়া আধিপত্য। ঔষধি ও খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ এ চায়ের ক্রেতা রয়েছে দেশের বাজারেও। বিশ্ব বাজারে সেরা এই দুটি চা উৎপাদন করছে মৌলভীবাজারের শাহবাজপুর চা বাগান। 

পরিক্ষামূলক উৎপাদনের তারা পেয়েছে আশাতিত সাফল্য। তাদের উৎপাদিত এই নতুন দুই জাতের চা চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্র বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ দামে। রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। চা বিষেজ্ঞরা জানান, পুষ্টিগুণ বিচারে মাচা গ্রিনটি সেরাদের সেরা। দশ কাপ গ্রিন টি’র সমান উপকারী এক কাপ মাচা গ্রিন টি। আর স্বাদ গন্ধে জনপ্রিয় আলগ্রে টি। চা জগতের কুলিন এক কাপ আলগ্রে চা'য়ে রয়েছে আট প্রকারের গুণ। 

বাগান কতৃপক্ষ জানান, অভ্যান্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে মাচা গ্রিন টি ও আল-গ্রে টি বিদেশে রপ্তানীর পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। এতে তারা সফল হলে বিশ্বে বাংলার চায়ের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্জিত হবে বৈদেশিক মুদ্রা। আর এই স্বপ্ন দেখছেন ইন্টারন্যাশনাল টি মাস্টার শাহবাজপুর চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, তার এই স্বপ্ন পূরণ হলে দেশের চা শিল্পে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।  

শাহবাজপুর চা বাগান সুত্রে জানা যায়, আলগ্রে টি প্রথম চীন দেশে উৎপাদন হয়েছে। এটি ১৮০০ সালে শুরুতে ইংল্যান্ডের বাজরে প্রিমিয়াম চীনা চা হিসাবে প্রথম চালু হয়েছিল। পরে ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারের টি মাস্টার ইতালীর সুগন্ধি ফুল বার্গামন্ড ফ্লেভার ওয়েল বিটি-২ চা'র সাথে সংমিশ্রণ করে নতুন একটি চা তৈরী করেন। এই চায়ের নাম দেয়া হয় আলগ্রে টি। 

সেই থেকে ইংল্যান্ডে এই চা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বর্তমানে এটি ইংল্যান্ডে সবচেয়ে জনপ্রিয় চা। সর্বশেষ ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে আলগ্রে টির চাহিদা ছিল ৬.৫ মিলিয় টন। চলতি বছরে এই চাহিদা আরো ৩.৫ বৃদ্ধি পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে কিছু কোম্পানী বিদেশ থেকে এনে প্যাকেজাত করে এই চা বিক্রি করছে। 

আলগ্রে গরম পানিতে ২ গ্রাম চা দিয়ে ২/৩ মিনিট রেখে দিতে এই চা পান করতে হয়। এই চায়ের ঔষধি গুণ হলে এটা দাঁতের জন্য খুব উপকারি। হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরে শক্তি বাড়ায়। এছাড়া বিষন্নতা দূর করে। হার্টের রোগীদের জন্যও এই চা ভাল উপকারি। 

জাপানের মাচা গ্রিন টি'ও এখন দেশে উৎপাদন হচ্ছে। বিশ্বে ছয় প্রকারের গ্রিন টি'র মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মাচা গ্রিন টি। জাপান ও চীন দেশে এই চায়ের ব্যাপক বাজার রয়েছে। এছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই চায়ের চাহিদা রয়েছে। 

বর্তমানে বিশ্বে এই চায়ের বাজার হয়েছে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বার্ষিক ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাপান ও চীনে চায়ের বাজারে ৬০ শতাংশ আয় আসে মাচা টি থেকে।  ইউনিয়র্কে ২৯ শতাংশ ও ক্যালিফোর্নিয়ার ৩০ শতাংশ মানুষ মাচা গ্রিন টি ক্রয় করে থাকেন। 

ইউএস চা অ্যাসোসিয়েশেন’র এক লাইফষ্টাইল জরিপে দেখা যায়, প্রতিদিন ১৫ শতাংশ মানুষ মাচা গ্রিন টি পান করে থাকেন। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রসাধনী এবং খাদ্যাসামগ্রী তৈরী ও রূপচর্চায় এই চা ব্যবহার করা হয়। 

এটি পাউডার জাতীয় চা। চা গাছ থেকে পাতা তুলার আগে ওই গাছগুলো ১৪ দিন ডেকে রাখা হয়। যেন গাছে আলো না পারে। এতে করে গাছের পাতা নিজের শরীরে এন্টিঅক্সিজেন ধরে রাখে। তাই বিশ্বের সব চা'য়ের থেকে মাচা চা'য়ে প্রচুর এন্টিঅক্সিজেন থাকে। এই চা'কে বিশ্বে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর চা হিসেবে মনে করা হয়। এই চা শরীরে ওজন কমায়। এছাড়া বিষন্নতা বা হার্টের রোগীদের জন্য উপকারি। 

শাহবাজপুর চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, নিলামে এক কেজি মাচা টি এক হাজার ৫০০ টাকা ও এক কেজী আলগ্রেটি ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। বাজারে এই চা'য়ের অনেক চাহিদা আছে। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে একসময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব হবে। 

বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মাচা গ্রিন টি ও আলগ্রে টি আমাদের দেশে চায়ের মধ্য নিউ এডিশন। এই চা জাপান ও চীনারা করে থাকে যা এখন দেশে তৈরী হচ্ছে। শৌখিন ব্যক্তিরা এই চা পান করেন।  


বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর