৩১ আগস্ট, ২০২১ ১২:১১

নীলফামারীতে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যের তালগাছ

আবদুল বারী, নীলফামারী

নীলফামারীতে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যের তালগাছ

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্য তালগাছ। কয়েকবছর আগেও গ্রামের রাস্তাঘাটে এই গাছের দেখা মিলত। গ্রামীণ রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো তাল গাছের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়তো। কালের পরিক্রমায় বাংলার ঐতিহ্যের অংশ তালগাছের অস্তিত্ব আজ বিলুপ্ত প্রায়। 

নীলফামারী ডিমলা উপজেলার সুটিবাড়ি হাটের পাশে পুকুর পাড়ে চোখে পড়ে একটি তাল গাছ। তবে এখনও দু’একটা তাল গাছ গ্রাম-গঞ্জের ঝোপ-ঝাড়ে দেখা গেলেও তা রক্ষায় নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। গ্রামীণ জনপদে যেসব তাল গাছ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু গাছ লাগানো হলেও মূলত বেশির ভাগ তালগাছ বেড়ে উঠে প্রাকৃতিকভাবে অযত্নে অবহেলায়।

নীলফামারী পলাশবাড়ি কলেজের প্রভাষক জাফর সাদেক বলেন, আগে জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় মাসে কাঁচা তাল ফলের শক্ত শাঁস খাওয়ার প্রতিযোগিতা চলতো। কে কতো খেতে পারে তা দেখাই ছিল গ্রামীণ মানুষের বিনোদনের অংশ। শ্রাবণ ভাদ্র মাসে পাকা তালের ম ম গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠতো গ্রাম বাংলা। পাকা তালের আটি পিষে হলুদ রস বের করে তালের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যেত।

তবে শুধু তালের পিঠাই নয় তাল থেকে তালের রুটি, তালের বড়াসহ আরও অনেক রকম পিঠাও একসময় তৈরি হয়েছে গ্রাম গঞ্জে। মেহমানদারিতে সকল পিঠা ছিল স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। তালের ফল এবং বীজ দুই-ই বাঙালির জন্য সুস্বাদু খাদ্য। তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ অনেক খনিজ উপাদান।

তালগাছ এক বীজ পত্রী উদ্ভিদ। শাখা প্রশাখা বিহীন এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যতম দীর্ঘ এই গাছের মাধ্যমে পাড়া, মহল্লা ও বাড়ির পরিচয় পাওয়া যেত। তালগাছ যা উচ্চতায় ৩০মিটার বা ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। 

ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাবেদুল ইসলাম সানবীম বলেন, গ্রামীণ জনপদে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে পরিবেশ বান্ধব তালগাছ। তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, তালপাতার চাটাই, মাদুর, আঁকবার পট, লেখবার পুঁথি, পুতুল ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রী তৈরি হয়। তালের পাতা পাখার মত ছড়ানো। তালগাছের অঙ্গ থেকে কিছু না কিছু কাজের জিনিস তৈরি হয়, প্রায় কিছুই ফেলা যায় না। 

কালের বিবর্তনে নীলফামারীর গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের এ তালগাছ। এতে নতুন প্রজন্ম তালগাছের বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা ও তাল ফলের স্বাদ ভুলতে বসেছে। কয়েক বছর আগেও বাজারে প্রচুর তাল বিক্রি হতো। কিন্তু এখন বাজারে তাল খুঁজে পেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। তালের পিঠা এখন অনেকটা স্বপ্নের মতোই।

উল্লেখ্য, নীলফামারী জেলায় গত দুই অর্থবছরে ৭২ হাজার ১১০টি তালের চারা রোপণ করা হয়। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ১০টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৮ হাজার ১০০টি চারা রোপণ করা হয়। তবে মাঠপর্যায়ে পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হতে বসেছে এসব চারা। কোথায় রোপণ করা হয়েছে, সেটিরও নিশ্চয়তা নেই। নেই চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থাও।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর