৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:০৭

কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে চিরসবুজ বেত ঝাড়

আবদুল বারী, নীলফামারী

কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে চিরসবুজ
 বেত ঝাড়

নীলফামারীতে হারিয়ে যাচ্ছে বেত শিল্প। কালের বিবর্তনে এখন আর সহজে সেই চিরসবুজ বেত ঝাড় দেখা যায় না। গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে ঝোঁপ-ঝাড়ে এক সময় বেড়ে উঠত বেত গাছ। অনেকটা অযত্ন-অবহেলায় বাড়ত বেতগাছ। বেতের কদর কিন্তু এতটুকু কম ছিল না। তখন বেতের তৈরী বিভিন্ন জিনিসপত্র হাটবাজারের পাশাপাশি শহরেও বিক্রি হতো। নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বন বিভাগের রাস্তার পাশে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে  একটি ছোট বেত ঝাড়।

ডোমার বহুমূখি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাবেদুল ইসলাম সানবীম বলেন, এক সময় নীলফামারীর গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের পতিত জমিতে বিশাল বিশাল জঙ্গল ছিল। সেসব জঙ্গলে রোপণ ছাড়াই প্রকৃতির নিয়মেই বেত গাছ জন্মাত। আর কাঁটা ভরা লম্বা চিকন গাছে সবুজ পাতা অবিরাম দোল খেত। বেত গাছের ফলকে বেতফল বলা হয়। এই ফল গোলাকার বা একটু লম্বাটে গোলাকার, ছোট ও কষযুক্ত টকমিষ্টি। এর খোসা শক্ত হলেও ভেতরটা নরম। বীজ শক্ত। কাঁচা ফল সবুজ ও পাকলে সবুজাভ ঘিয়ে বা সাদা রঙের হয়। এটি থোকায় থোকায় ফলে। বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে। এটি অপ্রচলিত ফল হলেও অনেকের কাছে খুবই প্রিয়। এটি যেমন পুষ্টিকর তেমন সুস্বাদু ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। মূলত মাটির অবস্থা ভেদে এই ফল খুব মিষ্টি হয়। আবার স্থান ভেদে একটু টকও হয়। গ্রামের কৃষকের অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেতগাছ।

নীলফামারী পলাশবাড়ি কলেজের প্রভাষক জাফর সাদেক বলেন, চিরসবুজ এই উদ্ভিদটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। এদের কাণ্ড দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত এবং শাখাহীন। সরু ও নলাকার কাণ্ড প্রস্থে সাধারণত ৫-১৫ মিলিমিটার। প্রতিটি কাণ্ডের আগা থেকে নতুন পাতা বের হয় ও বেড়ে ওঠে। কাণ্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশ পোক্ত হতে থাকে। কোনো ধারককে ধরে রাখার জন্য কাঁটাযুক্ত ধারক লতা বের হয়। বেতে ফুল ধরার আগে গাছ থেকে একধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ আসে। তখন মৌমাছি, পিঁপড়া, মাছি এই রস খেতে বেত গাছে ভিড় জমায়।

ডোমার সাহিত্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, মূলত আগে গ্রামের মানুষের ব্যবহারের জন্য চাল ও ধান পরিমাপের টালা, পাল্লা, ঝুড়ি, ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি, শীতল পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠিসহ বেতের চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরি হতো। প্রতিটি বাড়িতে ওইসব পণ্যের প্রচুর চাহিদা ছিল। তবে ধীরে ধীরে এখন এসব পণ্যের কদর কমে গেছে। একদিকে পতিত জমিতে ফসল উৎপাদন করতে জঙ্গল কেটে ফেলছেন কৃষকেরা। সেখানে এখন চাষ করা হচ্ছে নানা জাতের কৃষি ফসল। 


বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর