১ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:৪৯

পরিত্যক্ত সামগ্রী দিয়ে আধুনিক ব্যায়ামাগার

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

পরিত্যক্ত সামগ্রী দিয়ে আধুনিক ব্যায়ামাগার

হাতের কাছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইট-বালি, মাটি-সিমেন্ট, প্লাস্টিকের পাইপ, বোতল, গাছের ডাল, বাঁশ-খুঁটিসহ পরিত্যক্ত সব সামগ্রী হলো জিমের সরঞ্জাম। এসব দিয়ে গ্রামে বসেই এপি পলাশ নামের এক তরুণ ভিন্ন আঙ্গিকে উদ্ভাবন করেছেন ডাম্বেল, বারবেল, পুলআপ বার, দঁড়িলাফ সহ আধুনিক জিম বা ব্যায়ামাগারের সব যন্ত্রপাতি। তার সাথে রয়েছে একদল টেকনোলজি তরুণ। কোন রকম অর্থ বা পয়সা-কড়ি ছাড়াই তৈরী করছে ভারী ব্যায়ামের এসব যন্ত্রপাতি। শরীর-মন সুস্থ রাখতে প্রায় ২ বছর ধরে এমন সৃজনশীল আর চাঞ্চল্যকর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে সুঠাম আর সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে গ্রামের এই তরুণেরা সাড়া ফেলেছ। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে।

কোমলপানীয়র পরিত্যক্ত বোতলে বালু ভরে তৈরী করা হয়েছে বারবেল। ইট-সিমেন্ট আর বাঁশ দিয়ে বানানো হয়েছে ডাম্বেল। দঁড়ি, টায়ার, বাঁশ দিয়ে বানানো পুলআপ বার। সাইকেলের পুরাতন টিউ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে রেসিস্টেন্ট ব্যান্ড। শরীর ফিট রাখার কলাকৌশলের সব সরঞ্জাম বানিয়েছে পরিত্যক্ত এমন সব সামগ্রী দিয়ে। আর এসব দিয়েই যুবসমাজের বড় একটি অংশ প্রায় ২ বছর ধরে নিয়মিত শরীরচর্চা করে চলেছে। জিমে অংশগ্রহণকারী তরুণ কাঞ্চন, পারভেজ, রাব্বি, সবুজসহ কয়েকজন জানান, কোন রকম পয়সা খরচ ছাড়ায় পরিত্যক্ত সামগ্রী দিয়ে চলছে ব্যায়ামের কর্মযজ্ঞ।

শরীরচর্চার গুরুত্বকে অস্বীকার করা মানে রোগবালাইকে আমন্ত্রণ জানানো, তাই প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রমে শরীর গঠনের পাশাপাশি এসব তরুণদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে বহুগুণে এমনটি জানান অংশগ্রহণকারীরা। আর এমন উদ্যোগ এলাকার সচেতন মহলকে উচ্ছাসিত করে তুলেছে। শ্রীপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দলে দলে এখানে ব্যায়াম করতে আসে তরুণ যুবকেরা। তাদের এরকম কর্যক্রম দেখতেও খুব ভাল লাগে।

ব্যায়ামাগার বা জিম এক্সারসাইজ যন্ত্রপাতির কোনটার কত ওজন বা সঠিক হচ্ছে কি না তাও মাপঝোক করে তারা। শরীরের ধরণ অনুযায়ী ব্যায়াম সহ এসব নিয়ে ৬ মাস ধরে পড়াশোনাসহ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিত ইউটিউব কনটেন্ট দেখেন এই তরুণদের বডি বিল্ডিং উদ্যোক্তা শ্রীপুর গ্রামের এপি পলাশ।

কথায় বলে ‘শরীর ফিট তো আপনি হিট’ কিন্তু গ্রাম বা সাধারণ মানুষের পক্ষে কি সহজে জিম বা ব্যায়ামাগারে গিয়ে শরীর চর্চা সম্ভব বা শরীরটাকে ফিট রাখার চেষ্টা করতে পারে? একে তো ব্যয়বহুল তার উপর উপজেলা শহর এমন কি অনেক জেলা শহরেও পর্যাপ্ত ব্যায়ামাগার নেই। আর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাতেও এসেছে স্থবিরতা। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলাসহ এই উদ্যোগ গ্রাম-বাংলার সু-স্বাস্থ্যের ঠিকানা আখ্যা দিয়ে উদ্যোক্তা এপি পলাশ স্বপ্ন দেখেন একদিন বাংলাদেশের প্রতিটা গ্রামে এমন জিম-ব্যায়ামাগার গড়ে উঠবে।
শরীর চর্চার এমন সহজ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেয়া উদ্যোক্তা এপি পলাশ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে । শিক্ষাগত যোগ্যতায় এমবিএ করা এপি পলাশ পেশায় একজন ডিজিটাল মার্কেটার।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর