১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:৩৮

ফুচকা বিক্রেতার হাতে শিল্পের ছোঁয়া

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

ফুচকা বিক্রেতার হাতে শিল্পের ছোঁয়া

প্রতিটি মানুষের মাঝে সুপ্ত প্রতিভা থাকে। শুধু সেই প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগের প্রয়োজন। কেউ হয়ত পারে আবার কেউ হয়ত ব্যর্থ হয়। আর যারা পারে তাদের জীবনের গল্পগুলোই হয় অন্যরকম। সেটিই প্রমাণ করলেন প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী ঠাকুরগাঁওয়ের ফুচকা বিক্রেতা আব্দুল আজিজ। যিনি শুধুমাত্র কাঠ পেন্সিলের মাধ্যমে তৈরি করেন তার চিত্রকর্ম। এখন সকলের কাছে তিনি শুধু ফুচকা বিক্রেতা না একজন চিত্র শিল্পীও।

সবার কাছে তিনি আজিজ মামা নামেই পরিচিত। শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পাশের একটি ছোট ফুচকার দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সারাদিন অনেক কিছু খাওয়া হলেও তার হাতের ফুচকা না খেলে মনের তৃপ্তি মেটে না এমটাই মনে করেন ফুচকা প্রেমিরা।

দিন শেষে রাতে অবসর সময় পার করেন কাঠ পেন্সিল দিয়ে বিভিন্ন ছবি একেঁ। যেমন নিপুন হাতে সুস্বাদু ফুচকা বানান তিনি। ঠিক তেমনি তিনি ইতিপূর্বে কাঠ পেন্সিলের মাধ্যমে প্রায় ১শত বিভিন্ন ছবি অংকন করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা না থাকলেও তার এই প্রতিভা দেখে   সবাই অবাক।

ফুচকা ব্যবসায় তিনি জড়িত আছেন ১৯৭৯ সাল থেকে। কাজের অবসরে বসে বসে আঁকতেন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন বিভিন্ন ছবি। তিনি এখন পর্যন্ত ১ শতাধিক ছবি এঁকেছেন শুধুমাত্র পেন্সিলের মাধ্যমে। 

এ প্রসঙ্গে চিত্র শিল্পী আজিজ বলেন, ‘আমি নাইট স্কুলে পড়ালেখা করেছি। দিনের বেলা হোটেলে কাজ করে রাতে পড়তে যেতাম। বাবা যুদ্ধে মারা যান। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করত। সংসার মূলত বড় ভাই চালাত। পরবর্তীতে ভর্তি হই ঠাকুরগাঁও রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে যেখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করি। মেট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হই।’ 

এরপর তিনি ঢাকায় চলে যান। পরবর্তিতে তিনি ঢাকাতে একটি ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতেন ও রাতে পেন্সিল আর কাগজ দিয়ে তিনি ছবি আঁকতেন। ফুচকা বিক্রেতা ছবি আঁকাকে নেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল, যার দরুন নানা প্রতিকুলতা তাকে দমাতে পারেনি।

ছবি আঁকার অনুপ্রেরণার কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছবি আঁকার আগ্রহ ছিল ছোট থেকেই। আমার বন্ধুরা ছবি আঁকা শিখত ওদের বলেছিলাম আমাকে শেখাতে। কিন্তু ওরা আমাকে বলেছিল তুই তো পড়ালেখা জানিস না তুই আর কি আঁকবি। এই কথাটা শোনার পর আমার মধ্যে একটা জেদ সৃষ্টি হয় যে আমি দেখিয়ে দিব সেই জেদ থেকেই আমার আঁকা শুরু। দেখি আমি ছবি আঁকতে পারি কিনা, মানুষ আমাকে শিল্পী বলে ডাকে কিনা, কাগজ পত্রিকায় শিল্পী নামটা উঠে কিনা দেখি চেষ্টা করে।’

ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে শিল্পকর্মটা আমার খুব ভালো লাগে। কে দেখল, কে দেখলনা কি হইলনা এটা আমার আসে যায় না। আমার স্বপ্ন এটা। আমি ঢাকায় এতদিন থাকলে হয়ত ভালো জায়গায় যেতে পারতাম কিন্তু আমি পারিনি সংসারের কারণে, পরিবারের কারণে। এখন ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বড় করে প্রদর্শণী করতে পারলে আমার সব ইচ্ছে ও স্বপ্ন পূরণ হবে।’

আজিজের দোকানে ফুচকা খেতে আসা ওমর ফারুক বলেন, আমি ছোট থেকে আজিজ মামা’র দোকানে চটপটি ফুচকা খাই। অনেক মজাদার ও সুস্বাদু তার হাতের ফুচকা। আজ জানতে পারলাম তিনি একজন চিত্র শিল্পী। তার বাসায় গিয়ে চিত্রগুলো দেখার পরে মনে হয়েছে এজন্যই এত সুন্দর ফুচকা বানান তিনি। কারণ তার হাত দুটো দিয়ে আকাঁ ছবিগুলো অসম্ভব সুন্দর। একজন সাধারণ মানুষের মাঝে এমন প্রতিভা লুকিয়ে আছে তাকে দেখে বোঝাই যায় নাই।

আরেক ফুচকা খেতে আসা অভিভাবক শাহদাৎ হোসেন বলেন, আজিজ ভাই এর প্রতিভা হচ্ছে একটি ছাই চাপা আগুন। এটা যে কোন সময় বের হয়ে আসত। আজিজ ভাই এর মত এমন অনেক শিল্পী ঠাকুরগাঁওয়ে আছে যাদের একাডেমিক শিক্ষা নেই কিন্তু সুন্দর আর্ট করেন।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর