২৯ আগস্ট, ২০২২ ১৩:০১
ঐতিহ্য

এখনো টিকে আছে গরুর গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

এখনো টিকে আছে গরুর গাড়ি

ফাইল ছবি

গরুর গাড়ি। উনিশ শতকের মানুষদের একটি সুপরিচিত যান। এককালে এ গাড়িটি ব্যবহৃত হতো গৃহস্থালির নানা কাজে। শুধু কি তাই! বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রীরা কনের বাড়ি যেতেন গরুর গাড়িতে চড়ে। আর নতুন বউকেও শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসা হতো গরুর গাড়িতেই। তাই তো কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল লিখেছিলেন ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গানটি। তবে কালের বিবর্তনে হারাতে বসেছে কাঠনির্মিত দুই চাকার এ যানটি। 

সময়ের পরিক্রমায় এখন এসেছে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনসহ বিভিন্ন জ্বালানিচালিত দ্রুতগামী সব যানবাহন। ফলে জাদুঘরের চার দেয়ালের ভিতর গিয়ে স্থান নিয়েছে গরুর গাড়ি। তবে জাদুঘরে স্থান পাওয়া সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো হামেশাই চোখে পড়ে পরিবেশবান্ধব এ যানটি। ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে, স্টেডিয়ামের আশপাশে, চারুকলা কিংবা বধ্যভূমি এলাকায় প্রায়ই দেখা মেলে গরুর গাড়ির।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের জমিগুলোয় বছরজুড়েই নানা ধরনের ফসলের চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে আখ, গম, ধান ও ডাল উল্লেখযোগ্য। আখসহ অন্যান্য ফসল তুলে নিয়ে আসার জন্য এসব গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যান্ত্রিক গাড়ি যেতে পারে না ক্যাম্পাসের এমন জায়গায়ও অনেক সময় ঝড়ে গাছ পড়ে গেলে, সেসব গাছ নিয়ে আসার কাজে গরুর গাড়ি ব্যবহার করা হয়। আর গরুগুলো ক্যাম্পাসের ঘাস ও চাষাবাদের ধানের খড় খেয়েই বড় হয়।

কৃষি প্রকল্পের সহকারী রেজিস্ট্রার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমার জানা মতে ক্যাম্পাসে ১৯৭৪ কিংবা ’৭৫ সাল থেকে গরুর গাড়ি প্রচলিত। আগে আমাদের ১০ জোড়া গরু ছিল। বর্তমানে তিন জোড়া গরু ও পাঁচটি গাড়ি রয়েছে। সর্বশেষ গত বছর বেশি বয়স্ক হয়ে যাওয়ায় দুই জোড়া গরু নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর নতুন গরু কেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা নির্ধারিত বাজেট আসে বলে জানান তিনি।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, গরুর গাড়িকে কেবল টিকিয়ে রাখতেই নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাস্তা পাকা না হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় গরুর গাড়ির প্রয়োজন। সে প্রয়োজন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গরুর গাড়ি টিকে থাকবে।

প্রসঙ্গত, একসময় উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। বিশেষ করে এই জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল এটি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই বাহন। বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ। এখনকার মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা ইত্যাদি। 

যার ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না। অথচ যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুরগাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর