৭ অক্টোবর, ২০২২ ১৬:২৫
ঝালকাঠী

‘নুনের গুণ’ আছে, তবুও ভুগছে এই শিল্প!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

‘নুনের গুণ’ আছে, তবুও ভুগছে এই শিল্প!

ব্রিটিশ রাজত্বে ভাটা পড়েছে, পাকিস্তানিদের তাড়িয়ে দিয়েছে বীর বাঙালি। এসেছে স্বাধীন দেশ, ফলেছে স্বাধীন স্বপ্ন। এর মাঝে আরও অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। বাঁকে বাঁকে হয়েছে নানা উত্থান।

আর সেই উত্থান পতনের হাওয়া লেগেছে ঝালকাঠির লবণ শিল্পের গায়। অনেক প্রযুক্তিও পরিবর্তন হয়েছে কালের পরিক্রমায়। আর সেসব পরিবর্তনের তালে তাল মিলিয়ে আর ঐতিহ্যকে আগলে এখনও সদর্পে টিকে আছে ঝালকাঠির লবণ শিল্প। তবে সেই দর্পের ভেতরেও এখন ভাঙনের সুর, টিকে থাকার আকুতি।

ঝালকাঠির লবণ (আঞ্চলিক ভাষায় সচরাচর লবণকে নুনই বলা হয়) যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে এই শিল্পের টিকে থাকতে এখনও পার করতে হচ্ছে নানা চড়াই-উৎরাতই। ব্যাংক ঋণ না পাওয়া এবং ঝালকাঠিতে গ্যাস লাইন না থাকার কারণে লবন মিলগুলোকে আধুনিক ঢঙে ঢেলে সাজানো যাচ্ছে না। আছে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। 

ঝালকাঠি বিসিক কর্তৃপক্ষও অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, লবণ শিল্প ঝালকাঠিতে প্রসারিত হচ্ছে, বিসিক ঝালকাঠির লবণ শিল্প প্রসারে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাবে।

ব্রিটিশ আমল থেকেই লবণ শিল্পে ঝালকাঠীর সুনাম থাকলেও এর মূল বিকাশ স্বাধীনতার পরপরই। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বাগেরহাট থেকে আনা অপরিশোধিত লবণ শোধন করা হয় ঝালকাঠির কারখানায়। 

তখন কারখানাগুলোতে যাতা প্রক্রিয়ায় লবণ তৈরি হতো। ঝালকাঠির শহরের বাসন্ডা নদীর দুই তীরে পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে ১৪টি লবণ কারখানা। এরপরে দেশে আধুনিক ভ্যাকুয়াম লবন মিল চালু হলে তার প্রভাব পরে ঝালকাঠিতে। কমে আসে লবন মিলের সংখ্যা। 

তারপরও দেশের ৮টি লবণ জোনের মধ্যে ৫টি জেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি লবণ জোনের ১৩টি মিলের ৮টিই ঝালকাঠিতে। এই ৮টির মধ্যে সেন্টিফিউজ  (সেমি ভ্যাকুয়াম) ৩টি ও ট্রাডিশনাল (সনাতন) ৫টি। 

লবণ মিল মালিকরা জানান, ঝালকাঠিতে গ্যাসের লাইন না থাকায় তারা ভ্যাকুয়াম পদ্ধতির লবণ মিল চালু করতে পারছেন না। অন্যদিকে লবণ খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ না থাকায় লবণ মিলে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া প্রনোদনা না পাবরও অভিযোগ রয়েছে তাদের।

লবণ মিল মালিক সমিতি কর্তৃপক্ষ জানান, বিসিক থেকে করোনাকালীন সময় ঝালকাঠি লবণ মিলগুলোতে ৬০ লাখ টাকা প্রনোদনা দেয়ার জন্য বরাদ্দ থাকলেও তারা পেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। তবে বিসিক কর্তৃপক্ষ বলেছেন ৬০ লাখ টাকা শুধু লবণ মিলের জন্য নয় ঝালকাঠির পুরো কুটির শিল্পেই বরাদ্দ হয়েছিলো। 

ঝালকাঠির মিলগুলোতে দুই প্রকারের লবণ উৎপাদিত হয়। একটি হচ্ছে ভোজ্য লবণ (প্যাকেটজাত)  ও অন্যটি  ইন্ডাস্ট্রি সল্ট (পশুখাদ্য)। মাসে ৩ হাজার ৫শ টন ভোজ্য লবণ ও ৭ হাজার টন ইন্ডাস্ট্রি লবণ উৎপাদিত হয়। প্রায় ৪শ শ্রমিক ঝালকাঠি লবণ মিলগুলোতে বর্তমানে কাজ করছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা ট্রলার যোগে লবণ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার বড় জাহাজে বিদেশ থেকে আনা ক্যামিক্যাল ও কাঁচামাল কারখানায় খালাস করা হচ্ছে। এখান থেকে লবণ যাচ্ছে পদ্মার এপারের সবকটি জেলাসহ কুষ্টিয়া, পাবনা ও সাতক্ষীরায়। 

বর্তমানে পদ্মা সেতু হওয়ায় ঢাকায়ও ঝালকাঠির লবণের বাজার সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। লবণের কাঁচামাল ও ক্যামিক্যাল আনা হয় কক্সবাজার, চট্ট্রগ্রাম ও ভারত থেকে।

স্থানীয়রা জানান, লবণ শিলেপ বিখ্যাত হবার কারণেই ঝালকাঠি বন্দর উপাধি পেয়েছিলো। তাই এই শিল্পের আরো অগ্রগতি হোক সে প্রত্যাশাই এখন সকলের।

ঝালকাঠি লবন মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল শরিফ জানালেন, গ্যাস, ব্যাংক ঋণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঝালকাঠি লবণ শিল্প প্রসারিত করা সম্ভব হবে।

ঝালকাঠি বিসিকের উপ ব্যবস্থাপক মো: সাফাউল করিম জানালেন, লবণ শিল্পে প্রসারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে। এছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকায়ও ঝালকাঠির লবনের বাজার তৈরি বলে জানান এ কর্মকর্তা।

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর