প্রযুক্তি, রুচি, আধুনিকতা ও বাজার বিশ্বায়নের ফলে বাঙালির সংস্কৃতির অংশ মৃৎশিল্প এখন উৎখাত হওয়ার পথে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া এই পেশা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। তার ওপর আবার গেল অতিমারি করোনা মৃৎশিল্পকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।
সবমিলিয়ে ভাল নেই মৃৎশিল্পীরা। তবু শখ, বংশগত ঐতিহ্য বা জীবিকার তাগিদে শেরপুরের যে কজন এখনও এই ক্ষুদ্র শিল্পকে ধরে রেখেছেন তারা বাঙালির উৎসব ‘বৈশাখ’ উপলক্ষে মাটির পণ্য প্রস্তত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তবে বৈশাখে রোজা আর সামনে ঈদ আবার মন্দাও রয়েছে। এর মধ্যে মাটির এসব জিনিস পত্র কতটুকু কাটবে তা নিয়েও শিল্পীদের মধ্যে বেশ শংকা আছে।
মৃৎশিল্পীরা বলেছেন, একদা এই মৃৎশিল্পের উৎপাদিত পণ্য গ্রাম শহরের মানুষ ব্যবহার করতো। বছর ব্যাপী পণ্যের চাহিদাও বেশ ছিল প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্পের উৎপাদিত পণ্য এখন মানুষের শুধুই শখের বস্তু। কাজের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্পটি।
মৃৎশিল্পী কাঞ্চন রাণী পাল, উষ্টো রাণী পাল, রমেন চন্দ্র পাল, সুধা রাণী পাল বলেছেন, গাছ লাগানোর টব ,দই মিষ্টির হাড়ি বানানোর কাজ ছাড়া তেমন কাজ এখন নেই। যে শ্রম ব্যয় করে পণ্য তৈরি করা হয় তার কদর ও মূল্য কোনটিই নেই। বৈশাখের জন্য কিছু কাজের ফরমায়েস পেয়েছি। এসব মৃৎশিল্পীর অভিযোগ সব জিনিসের দাম বাড়ে এই পণ্যের দাম বাড়ে না। এক সময় বাঙালির রান্নাবান্নায় মাটির হাড়িপাতিল ব্যবহার হতো।
বাসাবাড়িতে ব্যবহার হতো বাহারি নকশার মাটির তৈরি জিনিষপত্র। কালের বিবর্তনে আজ সব হারিয়ে গেছে। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য জায়গা করে দিয়েছে বাসাবাড়িতে। এই শিল্পকে বাঁচাতে মৃৎশিল্পীরা সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ‘এসকল মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে পেট চলে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাপ-দাদার পুরনো এ পেশা বদলাতে হচ্ছে। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৃৎশিল্পের সোনালি অতীত ফিরে পাবে।’
উদ্যোক্তা কমিউনিটি শেরপুরের প্রধান সমন্বয়ক ইমরান হাসান রাব্বী বলেছেন, মৃৎশিল্প এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনও কজন আছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পরিবেশবান্ধব এ শিল্প থেকে ভালো কিছু করা সম্ভব। সারা বছর এ ব্যবসায় মন্দা থাকলেও বৈশাখী মেলায় বেশি পণ্য বিক্রি করে লাভ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা এ উদ্যোক্তার।
জেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা লুতফুন কবির বলেছেন, এ শিল্পের সাথে জড়িতদের বেশিরভাগই নারী। তাদের আর্থিক সহযোগিতার কিছু সুযোগ আছে।তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখবেন, কি সহযোগিতা করা যায়।
জেলা বিসিক কর্মকর্তা বিজয় কুমার দত্ত বলেছেন, মৃৎশিল্প আবহমান গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। প্লাস্টিক পণ্যের সাথে মৃৎশিল্প তাল মেলাতে পারছে না। জেলায় এখনও তিনশতাধিক পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত আছে। মৃৎশিল্পটি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেকোনো পরামর্শ ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে তাদের সহায়তা করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল