১২ এপ্রিল, ২০২৩ ১২:২০

পাহাড়ে ফুল বিজুর উৎসব

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড়ে ফুল বিজুর উৎসব

‘টুরু টুরু বাজি র-অ, বাজি বাজেত্তে, পাড়ায় পাড়ায় বেড়েবং বেক্কুন মিলিনেই, ইচ্ছা বিজু, ইচ্ছা বিজু’  অর্থাৎ (টুরু টুরু বাঁশির সুর, বাঁশি বাজছে, পাড়ায় বেড়াব সবাই মিলে আজ বিজু, আজ বিজু)। এটি চাকমা সম্প্রদায়ের বৈসাবি উৎসবের গান। সারা বছর অপেক্ষার পর বৈসাবি আসলেই ফুলবিজুর দিন পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীদের এ গানের তালে তালে উৎসবে মেতে উঠে। 

বুধবার ছিল রাঙামাটিতে ফুল বিজুর উৎসব। তখন আকাশে সূর্য্য উঠেনি। তার আগেই রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ পাড়ে হাজির ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ। হরেক রকম বাাহারি ফুলে সাজে সাজানো হয়েছে হ্রদ পাড়। রক্তিম সূর্য্য যখন ধরনির বুকে উকি দিচ্ছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় ফুলভাসানো উৎসব। গঙ্গাদেবিকে ফুল উৎর্সগ করে চলে প্রার্থনা। পুরো বছরের গ্লানি, অশান্তি  অশুভ শক্তি দূর করে নতুন বছর ফুলের মতো সুখ শান্তির জন্য চলে মঙ্গল প্রার্থনা। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের মধ্যে চাকমা, ত্রিপুরা ও তংঞ্চঙ্গ্যাদের বিশ্বাস ফুল বিজুর মধ্যে দিয়ে পুরো বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করা হয়। 

জনা গেছে, চাকমা, ত্রিপুরা ও তংঞ্চঙ্গ্যারা একইভাবে পালন করে এ ফুল বিজুর উৎসব। তবে  কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে মারমা ও রাখাইয়নদের মধ্যে। মূলত বৈসাবিকে চারটি অংশে ভাগ করে পালন করা হয় এ উৎসব। যেমন- ফুলবিজু, মুলবিজু, প্রহেলা বৈশাখ ও জলখেলি। পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাসির ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী এ বৈসাবিকে তাদের নিজস্ব রিতিনিতি আর প্রথায় পালন করে থাকে। 

এসব উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে আর্কষনীয় ফুলবিজু। ফুল বিজুর দিনে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা সবাই তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে নেচে গেয়ে পালন করে এ উৎসব। শুধু তাই নয়, ফুল বিজুর দিন চলে ফুল বিনিময় আর ভালবাসা অর্থাৎ কোচপানা আদান প্রদান।

সকাল ৭টায় রাঙামাটির গর্জনতলীতে কাপ্তাই হ্রদে ফুলভাসিয়ে ফুলবিজুর আনুষ্ঠনিকতা শুরু করেন খাদ্য মন্ত্রাণলয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য দীপর্ংকর তালুকদার। এসময় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অং সুই প্রু চৌধূরী ও ত্রিপুরা কল্যাণ ফান্ডিসনের আহবায়ক ঝিনুক ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন। 

আলোচনা সভা শেষে বয়ষ্কোস্নান আর নতুন বস্ত্রদান আর নাচ গান শুরু হয় ত্রিপুরা পল্লীতে। গড়াই নৃত্য আর বতল নৃত্য বেশ জনপ্রিয় এ ফুলবিজুর উৎসবে। সারাদিন উৎসবের পর সন্ধ্যা নামলে ত্রিপুরা পল্লিতে বসবে গ্যাঙ্গুলি গানের আসর। সবমিলে উৎসবে পার হবে দিন বলে জানায় ও ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেসনের আহ্বায়ক ঝিনুক ত্রিপুরা।

উৎসবে যোগ দিতে এসে খাদ্য মন্ত্রাণলয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, সরকারের কারণে পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ আনন্দের সাথে সব উৎসব পালন করতে পারছে। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীরা তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের পরিচিত পাওয়ার পর পাহাড়ের রঙিন হয়ে উঠেছে এ বৈসাবি উৎসব। শুধু তাই নয় এ বৈসাবি পালন করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর সহায়তার অব্যাহত রাখা হয়েছে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর