৩ জুলাই, ২০২৩ ১৩:৫৬
অনলাইন সংস্করণ চালু থাকবে

বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদপত্রের প্রিন্ট সংস্করণ!

অনলাইন ডেস্ক

বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদপত্রের প্রিন্ট সংস্করণ!

সংগৃহীত ছবি

বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদপত্র 'ভিনার সাইটুং' এর প্রিন্ট সংস্করণ অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল। গতকাল (১ জুলাই) ৩২০ বছর পুরনো সংবাদপত্রটির সর্বশেষ প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।  

'ভিনার সাইটুং' মূলত অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভিয়েনাভিত্তিক একটি জাতীয় দৈনিক। গত এপ্রিলে দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোয়ালিশন সরকার সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট একটি আইন পরিবর্তন করে। 

পরিবর্তিত আইনের কারণে বর্তমানে পত্রিকাটির প্রিন্ট সংস্করণ আর লাভজনক করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই বিখ্যাত এ পত্রিকাটির প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পাশ করা আইন অনুযায়ী, 'ভিনার সাইটুং' এর মুদ্রণ সংস্করণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বদৌলতে এতদিন সরকারকে সংবাদপত্রটিকে যে অর্থ প্রদান করতে হতো, সেই বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে।

জাতীয়করণের পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাজেট আকারে সংবাদপত্রটিতে চাকরির বিজ্ঞপ্তি ও অফিসিয়াল নোটিশ ছাপানো হতো। এসব বিজ্ঞাপন থেকেই পত্রিকাটির বেশিরভাগ আয় হতো। একইসাথে সংবাদও প্রকাশিত হতো।

তবে সংবাদপত্রটি নিয়ে ২০২১ সালে অস্ট্রিয়ার সাবেক চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ বলেন, "একটি দৈনিক সংবাদপত্রকে অর্থায়ন ও পরিচালনা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়।"

যার ফলশ্রুতিতে এতদিন 'ভিনার সাইটুং' যে একটি সরকারি গেজেট হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছিল, আইনে পরিবর্তন আনার ফলে সেটি বাতিল হয়ে যায়। ফলে আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রিয়ার অন্যতম বিখ্যাত এ সংবাদপত্রটি। আইনটি পাশের পর থেকে সংবাদপত্রটি ১৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। 

ইতিমধ্যেই ৬৩ জন কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং এডিটরিয়াল স্টাফের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ২০ এ নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে সংবাদপত্রটির অনলাইন সংস্করণ চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

'ভিনার সাইটুং' কে শুধু দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে নয়, বরং 'প্রশিক্ষণ ও অধিকতর শিক্ষার' অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতি মাসে সংবাদপত্রটির একটি প্রিন্ট সংস্করণ বের করার পরিকল্পনা রয়েছে। অবশ্য সেই পরিকল্পনা এখনো বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে। 
 
১৭০৩ সালে 'ভিনারিস্খিস ডায়ারিয়াম' নামে এর প্রকাশনা শুরু হয়। ১৭৮০ সালে সংবাদপত্রটির নাম বদলে রাখা হয় 'ভিনার সাইটুং'। ১৮৫৭ সালে বেসরকারি পাক্ষিক পত্রিকাটিকে তৎকালীন অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথম ফ্রাঞ্জ জোসেফ সরকারি মালিকানায় নিয়ে আসেন। 

সংবাদপত্রটির প্রথম সংস্করণের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, "কোনো কথার ফুলঝুরি বা কাব্যিকতা নয়, আমরা সংবাদের সরল বিবরণ দিতে চাই।" 

এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হলে পত্রিকাটি শেষ হ্যাবসবার্গ সম্রাট কাইজার কার্লের পদত্যাগ নিয়ে একটি বিশেষ সংস্করণ ছেপেছিল সংবাদপত্রটি।

গতকাল সংবাদপত্রটির শেষ প্রিন্ট সংস্করণের সম্পাদকীয়তে সরকারের জারি করা নতুন আইনটির সমালোচনা করা হয়। একইসাথে বর্তমানে মানসম্মত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কঠিন সময় চলছে বলেও অভিহিত করা হয়।  

সংবাদপত্রটির প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধের বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভেরা জোরোভা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "আমি মনে করি, বছরের পর বছরে 'ভিনার সাইটুং' জনগণের কাছে তথ্য সরবারাহে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছিল।" 

দীর্ঘ তিনশত বছরেরও বেশি সময় ধরে মুদ্রণের ইতিহাসে 'ভিনার সাইটুং' এর প্রকাশনা বন্ধ হয়েছিল মাত্র একবার। ১৯৩৯ সালে হিটলার বাহিনী অস্ট্রিয়া দখলের পর নাৎসিরা সংবাদপত্রটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

৬ বছরের বিরতির পর ১৯৪৫ সালে ফের সংবাদপত্রটির প্রকাশনা চালু হয়। যদিও তখনও অস্ট্রিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির দখলে ছিল। 

অনলাইন সংস্করণ চালু থাকলেও পত্রিকাটির ডেপুটি এডিটর ইন চিফ থমাস সিফার্ট মনে করেন, "সিদ্ধান্তটি শুধু অনলাইন কিংবা প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশ নিয়ে নয়। বরং এর সাথে সংবাদপত্রটির স্পিরিট জড়িত।"
  
গত এপ্রিলে নতুন আইনটি প্রণয়নের সময় সাধারণ কর্মদিবসে সংবাদপত্রটির প্রচারসংখ্যা ছিল প্রায় ২০ হাজার কপি। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে প্রচারসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ হাজার কপি।

'ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজ পাবলিশার্স' ২০০৪ সালে সংবাদপত্র সম্পর্কিত একটি জরিপ করে। জরিপে 'ভিনার সাইটুং' কে চালু থাকা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পত্রিকাগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

'ভিনার সাইটুং' এর মুদ্রণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বর্তমানে বিশ্বের প্রাচীনতম সংবাদপত্রের জায়গা দখল করেছে জার্মান 'হিলডেসহাইমার অ্যালগেমেইনে সাইটুং'। ভিনার সাইটুং এর দুই বছর পরে অর্থাৎ ১৭০৫ সালে সংবাদপত্রটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সূত্র: গার্ডিয়ান

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর