ছোটখাট গড়ন। লিকলিকে শ্যামলা বর্ণ। প্রথম দেখায় তাকে কেউ খুব একটা গুরুত্ব দিবে না। তবে তার সংগ্রামী জীবনের কথা শুনলে বিস্মিত হবে। তিনি সুনীতি রাণী বিশ্বাস। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
১৫ বছর আগে এই স্কুলে আসেন। তখন স্কুল ছিলো ভাঙাচোরা। গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। সড়কগুলো ছিল যেন ধানক্ষেত। শিক্ষকরা এই স্কুলে বেশিদিন থাকতে চাইতেন না। স্কুলে ছাত্র কম ছিল, তাদের বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়ে আনতে হতো। সেই এলাকা এখন বদলে গেছে। পিচঢালা সড়ক হয়েছে। হয়েছে স্কুলে বহুতল ভবন। গ্রামে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। স্কুলে শিক্ষার্থী বেড়েছে। স্থানীয় শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করায় এখন বদলি কমেছে। 'বি' ক্যাটাগরির স্কুল এখন 'এ' ক্যাটাগরি হয়েছে।
স্কুলের সূত্র জানায়, সুনীতি রাণী বিশ্বাস ১৯৬৫ সালে বরুড়া উপজেলার দোঘই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শীতল চন্দ্র বিশ্বাস ও মা কামিনী সুন্দরী বিশ্বাস। শৈশবে ১৯৭০ সালে বাবাকে হারিয়েছেন। তাই একরকম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লেখাপড়া করেছেন। ১৯৮৬ সালে যোগ দেন বরুড়ার খাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপরে কাজ করেন একই উপজেলার লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন চিতোষী রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৮২ সালে বাঁধা পড়েন সাতপাকে। স্বামী একই উপজেলার দৌলতপুরের নিখিল দেওয়ানজী। তিনিও হাইস্কুল শিক্ষক ছিলেন। ২০০০ সালে পরলোকগমন করেন।
স্কুলের বিষয়ে সুনীতি রাণী বলেন, বিদ্যুতের জন্য পাশের চান্দিনা উপজেলার পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে গিয়ে দরখাস্ত দিয়েছি। তারপর এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে। এভাবে ছাত্র জোগাড়, স্কুল ভবন করা ও সড়কের বিষয়ে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করতে হয়েছে। আমাদের উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্কুল কমিটির সবার সহযোগিতায় কাজগুলো করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ৩৭ বছর কর্মজীবন শেষে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি তিনি অবসরে যাবেন। অবসরে কথা মনে হলে তার চোখ জলে ভেসে যায়। সকালে আর স্কুলে আসার তাড়া থাকবে না। কেউ তার নিকট ছুটির দরখাস্ত নিয়ে আসবে না। শিক্ষক জীবনের আনন্দের স্মৃতির বিষয়ে তিনি বলেন, তার হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা সমাজ আলোকিত করছে। পথে দেখা হলে তারা পা ছুঁয়ে সালাম করে।
ছেলে নয়ন দেওয়ানজী বলেন, মায়ের ত্যাগ ও আত্মবিশ্বাসের কারণেই আমরা আজ গর্বিত শিক্ষক পরিবার। স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. মুহতাছিম বিল্লাহ বলেন, চাকরি জীবনে এমন প্রধান শিক্ষক আর পাইনি। তিনি একজন গোছানো মানুষ। তার থেকে অনেক কাজ শিখেছি।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ডা.দুলাল দাস বলেন, আমি দীর্ঘদিন এই স্কুলের সাথে জড়িত। এই প্রধান শিক্ষক খুবই পরিশ্রমী। তিনি উপজেলায় ২০১০ ও ২০১৫ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকার পুরস্কার পান। তার বিদায় আমাদের জন্য কষ্টের হবে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ