৭ আগস্ট, ২০২৩ ১৯:১৯

মাছ কেটে সংসার চলে জয়ন্তী রায়ের

দিনাজপুর প্রতিনিধি

মাছ কেটে সংসার চলে জয়ন্তী রায়ের

বিভিন্ন হাট-বাজারে মাছের ব্যবসা না করে শুধুমাত্র মাছ কেটে দিয়ে নিজের সংসার চালান এক বিধবা নারী। হাট- বাজারে সাধারণত পুরুষ মানুষকে মাছ কেটে দিতে দেখা যায়। হাট বাজারে বসে মাছ কেটে দিতে নারীদের খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে জীবনের কঠিন সময় মোকাবিলায় বাজারে বসে মাছ কেটে দেওয়ার পেশা বেছে নিয়ে সংসার চালান দিনাজপুরের বীরগঞ্জের জয়ন্তী রায় (৬০) নামে এক বিধবা নারী।

বীরগঞ্জ পৌর বাজারে মাছ কেটে দিয়ে সংসার চলে জয়ন্তী রায়ের। এই পেশায় তার একমাত্র সহায়-সম্বল একটি বটি।

জয়ন্তী রায় জানান, ২০ বছর আগে স্বামী পুরানু রায় অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গেলে জীবনের কঠিন সময় পার করতে হয় তাকে। এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়। সন্তানদের মানুষ করতে অধিক আয়ের আশায় স্বামীর ভিটে বীরগঞ্জের নিজপাড়া ইউপির দামাইক্ষেত্র গ্রাম ছেড়ে উপজেলা সদরে এসে বসবাস শুরু করেন। পৌর শহরের মাদরাসাপাড়ায় সাড়ে ৫০০ টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া নেন। সেখান থেকে শুরু জীবনের বাকি পথচলা।

অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে কঠিন শ্রমের কাজ করতে হয়েছে। এরপর ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অনেকটা একা হয়ে পড়েন। বয়সের ভাড়ে শরীরে বাসা বাধে নানা রোগ। আগের মতো কাজ করতে না পারায় কমে যায় আয়ের উৎস। কোনোমতে বয়স্ক ভাতা দিয়ে জীবন চললেও বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আকাশ ছোঁয়া দামে কঠিন হতে থাকে জীবন চলার গতি। তাই বাধ্য হয়ে একটি বটি নিয়ে পৌর বাজারে মাছ কাটার কাজে নেমে পড়েন। মাছ কেটে যে যার মতো ১০ টাকা ২০ টাকা আবার কেউ খুশি হয়ে ৪০ টাকাও দেয়। সকাল ৮টা থেকে ১২টা অবধি মাছ কেটে কোনোদিন ১০০ টাকা কোনো দিন ১২০ টাকা আয় হয় বলে তিনি জানান।

মাছ কাটতে আসা শহরের বাসিন্দা মো. শাহজাহান বুলবুল জানান, ২ কেজি বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ কিনেছি। এখানে মাছ বিক্রেতারা বড় বড় মাছ কেটে দিলে ছোট মাছ কেটে দেয় না। কাজের লোকের সমস্যার কারণে এই ছোট ছোট মাছগুলো এখান থেকে কেটে নিয়ে যাচ্ছি। প্রতি কেজি মাছ কাটার জন্য ২৫ টাকা করে দিতে হয়েছে।

বীরগঞ্জ পৌর বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ২ মাস ধরে প্রতিদিন সকালে বটি নিয়ে এসে চুপচাপ বসে থাকেন। বাড়িতে ছোট ছোট মাছ কাটার ঝামেলা এড়াতে সবাই এখন এখান থেকে মাছ কেটে নিয়ে যান। মাছ কেটে মোটামুটি আয় করেন।

বীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. মোশারফ হোসেন বাবুল বলেন, বিধবা নারী হয়েও জয়ন্তী রায় সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কারণ ভিক্ষা করে মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে কাজ করে খাওয়া অনেক সম্মানের। এখানে লজ্জার কিছু নেই।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর