১৪ আগস্ট, ২০২৩ ১৬:৪১

বগুড়ায় কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ছাতার কারিগরদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ায় কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ছাতার কারিগরদের

বগুড়ায় কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ছাতার কারিগরদের। ছবি : শহরের কাঁঠালতলা এলাকা থেকে তোলা।

বগুড়ায় কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে ছাতার কারিগরদের। সকাল থেকে সারাদিন তারা পুরাতন ছাতা মেরামতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বর্ষা মৌসুমে তাদের কাজের চাপ অন্যান্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বলে জানান ছাতার কারিগররা। তারা বলছেন, বর্ষা যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ বর্ষা এলেই কদর বাড়ে তাদের।

জানা যায়, ঋতু বৈচিত্র্য ও ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। আষাঢ়-শ্রাবণ এ দু’মাস বর্ষাকাল। প্রকৃতিতে এখন বর্ষা মৌসুম। তবে এবছর আষাঢ় মাসে বৃষ্টি একেবারেই কম ছিল। শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি থেকে বগুড়ায় শুরু হয় বৃষ্টি। এখন প্রায় প্রতিদিনই নামছে থেমে থেমে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে থাকছে রোদও। তবে এই রোদ-বৃষ্টির অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ছাতা। যাদের ছাতা নষ্ট হয়ে গেছে, তারা ছুটছেন ছাতার কারিগরের কাছে। আর যাদের ছাতা নেই, তারা নতুন ছাতা কিনছেন। ফলে এ ঋতুতে বগুড়ায় ছাতা তৈরি-মেরামত কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে।

বগুড়া শহরের প্রতিটি ছাতার মার্কেট এখন সরগরম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শহরের কাঁঠালতলার ছাতা মার্কেট, নিউ মার্কেট ও হকার্স মার্কেটে ছাতা কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার মার্কেট ও বাজারের দোকানগুলোতে সাধারণ ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন।

এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে দেশি-বিদেশি ছাতা। শিশুদের জন্য আছে বাহারি নকশার ছাতাও। এছাড়া ঘরে সংরক্ষণ করে রাখা পুরাতন ছাতা ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য মানুষ ছুটছেন ছাতার কারিগরদের কাছে। সকাল থেকে বিকেল অবধি কারিগররা করছেন ছাতা মেরামতের কাজ। ছাতার কারিগররা শহরের কাঁঠালতলা, নিউ মার্কেট এলাকাসহ অন্যের দোকানের সামনে এবং রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে ছাতা মেরামতের কাজ করছেন। অনেক ভ্রাম্যমাণ ছাতা কারিগররা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে ছাতা মেরামত করছেন। এ পেশায় নিয়োজিতরা অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ হওয়ায় মেরামতের কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন।

শহরের কাঁঠালতলা এলাকার ছাতার কারিগর জফলু মিয়া জানান, ২০ বছর ধরে তিনি ছাতা মেরামতের কাজ করছেন। ছাতা মেরামতের পাশাপাশি তালা, চাবি ও লাইট মেরামতের কাজও করছেন। দৈনিক এ কাজ করে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করা যায়। এখন বর্ষা মৌসুম থাকায় ছাতা মেরামতের চাপ অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কাজ করেই চলছে তার সংসার।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ছাতার কাপড়, হাতল, স্প্রিং প্রভৃতি জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। সরবরাহ রয়েছে অনেক কম। তারপরেও প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি ছাতা মেরামত করে থাকি।

ভ্রাম্যমাণ ছাতার কারিগর কেরামত আলী জানান, বছরের অন্যান্য সময় খুব একটা কাজ থাকে না। বর্ষা মৌসুমে কাজের চাপ বেড়ে যায়। প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী তাদের মজুরি তেমন বাড়েনি। তিনি বলেন, বর্ষা এলেই বাড়ি থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি ছাতা মেরামতের জন্য। গ্রামে ঘুরে ঘুরে পুরাতন ছাতা মেরামত করি।

পুরাতন ছাতা ঠিক করতে আসা পৌর শহরের কলোনি এলাকার মো. হাসান আলী জানান, গত কিছু দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া রোদও থাকছে ভালো। এই রোদে হাঁটা চলা করা খুবই কষ্টকর হয়ে উঠছে। ঘরে দুটি ছাতা বেশ কিছুদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বৃষ্টির সময় ছাতার দরকার হয়ে পড়ায় মেরামত করতে এসেছি। এই দুইটি ছাতা সারাতে কারিগরকে ৯০ টাকা দিতে হয়েছে। নতুন একটি ছাতা কিনতে গেলে কম করে হলেও ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা লেগে যেতো।

ছাতা কিনতে আসা শহরের খান্দার এলাকার নান্নু সরকার জানান, আমি শহরে ব্যবসা করি। এক মেয়ে কলেজ ও এক ছেলে স্কুলে পড়ছে। এখন বৃষ্টির সময়, তাছাড়া প্রচণ্ড রোদও আছে। বৃষ্টির সময় পরিবারের সকলেরই ছাতার প্রয়োজন। তাই ছাতা কিনতে এসেছি। দুটি ছাতা ৬০০ টাকায় কিনলাম।

শহরের কাঁঠালতলা এলাকার ছাতা ব্যবসায়ী মো. হাফিজার রহমান জানান, তার দোকানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকমের ছাতা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ভাঁজহীন দেশি ছাতা ১৫০-৩৫০ টাকা, দেশি-বিদেশি দুই ভাঁজের ছাতা আড়াইশ টাকা থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর