২১ আগস্ট, ২০২৩ ১৮:০১

পানি নামলেও দুঃখ কমেনি রাঙামাটির সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পানি নামলেও দুঃখ কমেনি রাঙামাটির সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের

ময়লা আর স্যাঁতসেঁতে কাদামাটি। এরই মধ্যে দুমড়েমুচড়ে পড়েছে বসতঘর, দোকান পাট ও ফসল। আবার কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে সড়কের দেয়াল, উঠে গেছে বিটুমিন। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এমন চিত্রের দেখা মিলছে রাঙামাটির সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ৫টি উপজেলায়। সেগুলো হচ্ছে, বিলাইছড়ি, বরকল, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও লংগদু উপজেলা। সম্প্রতি হঠাৎ বন্যায় তলিয়ে যায় ওই সব এলাকার নিম্নাঞ্চল। সে সময় পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল প্রায় অর্ধলাখ পরিবার। এখন পানি কমে গেলেও হিসেব গুনতে হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারে সহায়তা নাপেলে অনেকের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়বে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, এবার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ফারুয়া ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের সাড়ে ১২শ’ পরিবার। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হয়েছে ফরুয়া বাজারসহ ১৫৪টি পরিবার। এছাড়া ৬টি বাজারের মধ্যে ফারুয়া, একুজ্জ্যছড়ি, ওরাছড়ি, তক্তানালা, উলুছড়ি ও ছাইন্দ্যা বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনিয়নের একমাত্র বৃহত্তম ফারুয়া বাজারটি। বানের জলে ভেসে গেছে বাজার ব্যবসায়ীদের দোকানঘর, মালামাল। এছাড়া ৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাড়া কেন্দ্র, মসজিদ, মন্দির ও গীর্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঘরবাড়ি থেকে বিদ্যালয়গুলো এখনো কাদামাটি ভরপুর। তাই বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

স্থানীয়রা বলেন, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল বিলাইছড়ি ফারুয়া। মিজোরাম রাজ্যের পর্বত শ্রেণি থেকে উৎপত্তি রাইন খেং নদী। এ নদী মিলিত হয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে। তাই প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় ফারুয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। 
ফারুয়া বাজারের ব্যবসায়ী থোই মাচিং মারমা (৫০) জানান, টানা বৃষ্টিপাতে সময় হঠাৎ বৃদ্ধি পায় হ্রদের পানি। মুহূর্তেই ডুবে যায়  দোকানসহ মামলামাল। মালামাল সরানোর সময়টাকু পাইনি। সব ভেসে গেছে।
 
একই অভিজ্ঞতার কথা জানায় ৬৬ বৎসর বয়সী সত্য কুমার তংঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বলেন, এ বয়সে দুইটা পাহাড়ি ঢল দেখেছি। একটি ১৯৭৪ সালে অন্যটি ২০২৩ সালের এ বন্যা। যা আসলেই ভয়াবহ ছিল।  আমাদের সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন নিঃস্ব সবাই। 

যুমানছড়ি বম পাড়ার হেডম্যান গ্রাম প্রধান পালোম বম জানান, এ পাড়ার ১৮০টি পরিবারের মধ্যে ৪৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, পাড়া কেন্দ্রসহ অনেক প্রতিষ্টান নষ্ট হয়ে গেছে। 

ফারুয়া ইউনিয়নের ৩নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তংঞ্চঙ্গ্যা জানান, টানা বৃষ্টিপাতে বন্যায় ঘরবাড়ি ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসানালয়, সড়ক ও ফসলী জমি মাছের ঘের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা আসলে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। তবে এ সহায়তা পর্যাপ্ত না। শুধু ফারুয়া বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি অনুসারে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে এ ইউনিয়নে ১৫টি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাইন খেং নদী এক সময় তলদেশ গভীরতা ছিল। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে ও পাহাড় ধসে তলদেশ ভরাট হয়ে পলি জমে গেছে। এখন অল্প বৃষ্টিতে বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। যদি এ নদীটি খনন করা হয় তাহলে ইউনিয়নবাসী বন্যা থেকে রক্ষা পাবে। 
 
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, পাহাড়ের মানুষ খুবই সংগ্রামী। এ দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি তারা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আমাদের শুধু তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ফসলের ক্ষতির জন্য কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি ঋণ ও যুব ঋণ আরো বৃদ্ধি করা যায় লক্ষ্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ফারুয়া বাজারটি সম্পূর্ণ বিধস্ত হয়েছে। এসব দোকান সংস্কার করা অনেক কঠিন। স্থানান্তর করা শ্রেয়। এরকম বন্যা আরো হতে পারে । তাই ঝুঁকিপূর্ণ বাজার স্থাপন করা সম্ভব না। আমরা চেষ্টা ও আলোচনা করছি। কারো ক্ষতি না করে বাজারটি অন্যত্র কোন উচু স্থানে কিভাবে স্থানান্তর করা যায় কিনা। 
 
বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বীর উত্তম তংচংগ্যা তংঞ্চঙ্গ্যা জানান, বন্যা পরবর্তী বিলাইছড়িতে ৫০ মেট্রিক টন চাউল পেয়েছি। তার মধ্যে  ফারুয়ায় ৩০ মেট্টিক টন দিয়েছি। তবে যা খাদ্যশস্য পেয়েছি তা পর্যাপ্ত নয়। কারণ তাদের ঘরবাড়ি ও প্রচুর ফসলী জমির ক্ষতি হয়েছে।  তারপরও  স্থানীয় সংসদ সদস্য, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর