২৮ আগস্ট, ২০২৩ ১৫:৩৪

পাহাড়ি ঝর্ণার স্রোতধারায় উচ্ছ্বসিত পর্যটক

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড়ি ঝর্ণার স্রোতধারায় উচ্ছ্বসিত পর্যটক

যৌবন ফিরেছে পাহাড়ি ঝর্ণায়। ঝর্ণার কলকল স্রোতধারায় উচ্ছ্বসিত স্থানীয়সহ আগত অন্য পর্যটকরা। টানা খড়ার পর ঝর্ণার এমন রূপ দেখেনি কেউ আগে। বর্ষার পর আবারও ভিন্ন রূপে ফিরেছে পাহাড়ের ঝর্ণাগুলো।

জলপ্রপাতে ভরপুর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বইয়ে চলা ঝর্ণাগুলো। আবার কোথাও কোথাও পাহাড়ের বুক চিরে আছড়ে পড়ছে প্রবহমান সুরূল জলধারা। গুঁড়ি গুঁড়ি জলকনাগুলো আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশার আভা। ঝর্ণার শীতলতার পরশ যেন সবুজ অরণ্যের প্রাণের ছোয়া এঁকেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব নৈসর্গিক সৃষ্টি রাঙামাটির পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো। যার টানে প্রতিদিনই স্থানীয় পর্যটকদের ভিড় জমছে ঝর্ণাস্থলে। মন কেড়েছে আশ-পাশে জেলার পর্যটদেরও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলায় অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়ি ঝর্ণা থাকলেও নয়নাভিরাম ও বিষ্ময়কর প্রাকৃতিক প্রাচুর্য শুধুমাত্র রাঙামাটির বরকল উপজেলার শুভলং ইউনিয়ন ও ঘাগড়া ইউনিয়নে দৃশ্যমান। রাঙামাটি শহর থেকে ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে বরকল উপজেলার শুভলং ইউনিয়ন। ইঞ্জিন চালিত বোট বা স্পিড বোটে যেতে সময় লাগে এক থেকে ২ ঘণ্টা। ওই এলাকায় দু’পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে ছোট-বড় অন্তত ৮টি ঝর্ণা। এর মধ্যে মূল অর্থাৎ গিরিনির্ঝর ঝর্ণাটি সত্যিই আকর্ষণীয়। প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে বর্ষায় জলধারার অবিরাম পতনে সৃষ্ট নিক্কন ধ্বনিসমেত অপরূপ দৃশ্য চোখে না দেখলে কল্পনায়ও সে ছবি আঁকা অসম্ভব।

বৃষ্টির প্রবল বর্ষণে গিরিনির্ঝর ঝর্ণা ফিরে পেয়েছে তার আদিরূপ। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এ ঝর্ণা সেজেছে নবরূপে। ঝর্ণা সতেজতায় পাহাড়ি ঝিরিগুলো হয়ে উঠেছে প্রাণচঞ্চল। সাঁই সাঁই করে ধেয়ে চলে ঝিরির জলরাশি মিলেছে হ্রদের প্রাণে। বহু আগেই দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতির বিস্তৃতি ঘটেছে রাঙামাটি শুভলং গিরিনির্ঝর ঝর্ণার। পাহাড়ে ঝর্ণার শীতল ও চঞ্চলা জলধারা সকল পর্যটককেই কাছে টানে সহজে। তাই বর্ষা এলেই ঝর্ণা স্পটে ভিড় জমে দেশি-বিদেশি পর্যটকের। এছাড়া স্থানীয়দের পদাচারণায় মুখর ঝর্ণা স্পটগুলো। যা দেখে হৃদয়-মন জুড়ে সৃষ্টি করে শিহরণ।

একই দৃশ্য রাঙামাটির ঘাগড়া কলাবান ঝর্ণার। রাঙামাটি কলা বাগান ঝর্ণা। এটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন অবস্থিত। এ ইউনিয়নের আশ-পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া। এ পাহাড়ি ছড়ার একমাত্র উৎপত্তিস্থল ঘাগড়া ঝর্ণাটি। যা সবার কাছে আপাতত ‘কলাবাগান’ ঝর্ণা নামে পরিচিত। এখানে শুধু দেশি-বিদেশি পর্যটক নয়, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ আশপাশের জেলার স্থানীয়দের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ারমতো। কলা বাগান ঝর্ণা স্থল এখন যেন আনন্দ উৎসবের ফোয়ারা।

রাঙামাটি শহরে থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হলেও গাড়ি থেকে নেমে ছড়ার পথে হাঁটতে হয় আরও চার কিলোমিটার। কিছুটা সামনে এগুলেই দেখা মিলে ঝর্ণার স্বচ্ছ জল। অসংখ্য ছোট-বড় পাথরের গা ঘেষে ধেয়ে চলেছে স্রোতধারা। এ ঝর্ণার শীতলতায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে পর্যটকরা। দূর হয়ে যায় সমস্ত ক্লান্তি। ঝর্ণার পানিতে গা ভিজিয়ে আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে ভ্রমণ পিপাসু নারী-পুরুষ। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদাভারে মুখরিত হয়ে থাকে ঝর্ণা স্পটটি।

ঝর্ণা ঘুরে এসে স্থানীয় পর্যটন সুবর্ণা ও জসিম জানান, জনপ্রিয়তা থাকলেও এ পাহাড়ি ঝর্ণাকে ঘিরে এখনো গড়ে উঠেনি কোন পর্যটন কেন্দ্র। এ ঝর্ণা রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে, এটিকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে রাঙামাটির সম্ভাবনাময় অণ্যতম পর্যটন কেন্দ্র।

একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মো. ইমরান বলেন, রাঙামাটির বিভিন্ন পাহাড়ে ছোট-বড় অসংখ্য ঝর্ণা রয়েছে। যা সত্যি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এসব ঝর্ণাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই প্রয়োজন। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর