৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৬:৪২

বাবলা গাছে বাবুইর বাসা

ঝিানইদহ প্রতিনিধি

বাবলা গাছে বাবুইর বাসা

একসময় গ্রামগঞ্জে তালগাছ থেকে তালগাছ, দেখা যেত সুনিপুণ এক শিল্পীর কারুকাজ। বাতাসে দুলে উঠত শিল্পীর যত্নে গড়া সেই নন্দনকানন। চোখ জুড়ানো সেই দৃশ্যে মনে উঠতো আলোড়ন। সময়ের আবর্তে অনেক কিছু খোয়া গেছে, এখনো যাচ্ছে। বাবুই শিল্পীর সেই নান্দনিক বাসাও আছে খোয়া যাওয়া সেসবের তালিকায়। 

আমাদের শৈশব তো মজে আছে রজনীকান্ত সেনের সেই ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায়। যার পঙক্তিগুলো এখনো ভাবায় এভাবেই, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে।”বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তাই ? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”

পরের অধীনে না থেকে নিজের কাচা ঘরে খাসা জীবনযাপনের শান্তির এক অমীয় প্রতীক হয়ে আছে বাবুই পাখি। যা কাছে পরের পাকা বাড়ির চেয়ে নিজের কুঁড়ে ঘরই অনেক ভালো। কবিতায় পড়া সেই বাবুই পাখিদেরও একরকম নির্বাসনে পাঠিয়েছে মানুষ। তাদের সেই কাঁচা ঘরের খাসা সুখটুকুও হাওয়াই মিঠাইর মতো উবে গেছে। দিন দিন তালগাছও যেমন কমছে, তার চেয়েও বেশি কমেছে বাবুই পাখির বাসা। বড়দের কাছে বাবুই যেমন স্মৃতি আর নস্টালজিয়া, নতুন প্রজন্মের কাছে বাবুই তেমন এক পৌরাণিক মিথের মতো। যার গল্প শ্লোকে আছে কিন্তু সামনে নেই!

ঝিনাইদহের গ্রামগুলোতে আগে বাবুইর আনাগোনা ছিল সর্বত্র। গ্রামীণ জীবন আর বাবুই ছিল মিলেমিশে একাকার। একসময় চোখে পড়ত বাবুই পাখির নয়নাভিরাম বাসা। সেই সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কিন্তু নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক বাসার ঐতিহ্য। এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও পাখিপ্রেমী সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানাচ্ছে। তবে বর্তমানে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফকিরাবাদ ইলিয়াস হোসেন সড়কের পাশের একটি বাবলা গাছে বাবুই পাখির বাসা দৃষ্টি কাড়ছে পথচারীদের। এই বাসা দেখতে শহর থেকে প্রতিদিন অনেক আসছেন। কেউ ছবি তুলছেন কেউবা ভিডিও ধারণ করে নিয়ে যাচ্ছেন। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ঝিনাইদহ শাখার আহ্বায়ক ও সাবেক অধ্যক্ষ খোন্দকার হাফিজ ফারুক জানান, বাবলা গাছে বাবুই পাখির বাসা সচরাচর দেখা যায় না। বিরল দৃশ্য বাবলা গাছে বাবুই পাখি বাসা বাঁধছে। এমন দৃশ্য পরিলক্ষিত হলো ঝিনাইদহে। এটি পাখিগুলো যতদিন ওই গাছটিতে থাকবে ততদিন আমাদের নজর রাখতে হবে। যাতে তাদের বসবাসের জন্য বিরক্ত কোন কিছু সৃষ্টি না হয়।
 
ঝিনাইদহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আনন্দ মোহন ঘোষ জানান, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অনেক প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শ্রীরুপ মুজুমদার বলেন, বাবুই পাখি জীববৈচিত্র্যের একটি উপাদান। পাখি না থাকলে বাস্তুসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে। নানা কারণে গাছ নিধন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর