১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৬:৩৭

টাঙ্গাইলের বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্য যাচ্ছে বিদেশেও

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্য যাচ্ছে বিদেশেও

টাঙ্গাইলে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের তৈরি হস্তশিল্প ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে এসব পণ্য। সদর উপজেলার কৈজুরী, দেলদুয়ার উপজেলার বর্ণী, প্রয়াগজানী ও কোপাখী গ্রামে বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের কাজ বেশি হচ্ছে। এ শিল্পের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন কারুশিল্পী নূরুন্নবী। তিনি তৈরি করেছেন কর্মসংস্থানের। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের বর্ণী, প্রয়াগজানী ও কোপাখী গ্রামের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে নারী-পুরুষ বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী তৈরি করছেন। দেখে মনে হবে পুরো গ্রামই যেন কুটির শিল্পের কারখানা। এসব গ্রামের প্রায় সকল বাড়ির অধিকাংশ লোকজনের প্রধান পেশা এটাই। তাদের মূল উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন বারপাখিয়া গ্রামের আর্ন্তজাতিক কারুশিল্পী নূরুন্নবী। তিনি বর্ণী দক্ষিণ পাড়ায় “নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্র্যাফ্ট” নামে একটি কারখানা গড়ে তুলেছেন। সেখানে প্রায় ৬০-৭০ জন নারী-পুরুষ প্রতিদিন কাজ করেন। এছাড়াও প্রায় শতাধিক পরিবার বাড়িতে বসে কাজ করেন। তাদের তৈরি করা পণ্য নূরুন্নবীর কারখানায় নিয়ে এসে বিক্রি করেন। 

স্থানীয় কারুশিল্পরা বলেন, আমাদের এলাকায় প্রত্যেক বাড়িতেই নারী-পুরুষরা এ কাজ করে থাকেন। নারীরা তাদের বাড়ির কাজের পাশাপাশি শিল্পের কাজ করেন। তাতে নারীরাই  মাসে ৭-৮ হাজার টাকা বাড়তি টাকা আয় করে থাকেন। 

নূরুন্নবীর কারখানায় কাজ করেন বারপাখিয়া গ্রামের মিল্টন মিয়া। তিনি বলেন, আমি এখানে ৬-৭ বছর ধরে কজি করছি। এখানে কাজ করে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার ভালোভাবে চলছে। প্রতি মাসে কাজ করে এখান থেকে ১৬-১৭ হাজার টাকা মাসে আয় হচ্ছে। এ আয়ের টাকা দিয়ে আমার পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারছি।
 
আরেক কারুশিল্পী বর্ণী গ্রামের মুনিয়া বেগম বলেন, বাড়ির কাজকর্ম করে এখানে কাজ করি। কাজ করে যে টাকা পাচ্ছি তা দিয়ে আমার সংসার ভালোভাবে চলছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে আমারও ইচ্ছে ছোট একটি কারখানা করার।  

কারুশিল্পের সিরাজ মিয়া বলেন, আমি এই শিল্পের সাথে জড়িত অনেক বছর ধরে। এই কাজ করে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি। তারা এখন বর্তমানে চাকুরি করেন। আমার বয়স হয়েছে ছেলে মেয়েরা কাজ করতে না করেন। আমার কাছে সব জানা-শোনা দেখে এ পেশা ছাড়তে ইচ্ছে করে না। আগে পণ্য তৈরি করে বিক্রির জন্য ঘুরতে হত। এখন পাশেই ‌‘ব্যাম্বো ক্র্যাফট’ নামে একটি কারখানাও গড়ে উঠেছে। সেখানেই পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারছি এলাকার সবাই। এ পণ্য বিক্রি করাও আগে জটিল কাজ ছিল। সরকারিভাবে আমাদের সহযোগিতা করলে এ পেশার সাথে যারা জড়িত সবাই আগাতে পারবে ও বেকারত্ব দূর হবে। 

কারুশিল্পের উদ্যোক্তা নূরুন্নবী বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে আমি হস্তশিল্পের কাজ করছি। ২০০৪ সালে এই কারখানাটি গড়ে তুলেছি। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের বাস্কেট, টেবিল ল্যাম্প, প্লেস ম্যাট, বিভিন্ন ধরনে ট্রে, মোড়া, ফলের ঝুড়ি, টিস্যু বক্স, গয়নার বাক্স, জানালার পদা, ওয়েস্ট পেপার ঝুড়ি, ড্রিংকস বোতলের ঝাড়, কোলাসহ নানা ধরনের সৌখিন পণ্য তৈরি করছি। রাজধানী ঢাকার বড় বড় শপিং মলগুলো আমার প্রধান ক্রেতা। এছাড়াও বিভিন্ন রফতানিকারকদের মাধ্যমে প্রায় ১০-১২ টি দেশে আমার বাঁশ-বেতের তৈরি হস্তশিল্প রফতানি হচ্ছে।
 
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে ও পাশাপাশি বেকার দূর হবে। এই এলাকার মানুষ এখন বেকার হয়ে বসে থাকে না। প্রায় সবাই এখন বাশঁ-বেতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন ।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জামিল হুসাইন বলেন, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের শিল্পের আরও সম্প্রসারণ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যদি কোন ব্যাক্তি ঋণের জন্য প্রয়োজন মনে করেন তাকে সহজ শর্তে ঋণ দেওযার ব্যবস্থা করে দিব। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর