২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৭:০১

২৩ বছরে অজপাড়াগাঁ থেকে ‘চিকিৎসকদের গ্রাম’

অনলাইন ডেস্ক

২৩ বছরে অজপাড়াগাঁ থেকে ‘চিকিৎসকদের গ্রাম’

ঘরিবলী গ্রামের ৩০টি পরিবারের ২০ পরিবারে অন্তত একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়াও গ্রামের একাধিক তরুণ-তরুণী বর্তমানে ডাক্তারি পড়ছেন। কয়েক বছরের মধ্যে তারাও গ্রামের চিকিৎসকদের তালিকায় নাম লেখাবেন।

ঘরিবলী। ভারতের মহারাষ্ট্রের ঠাণে জেলার ছোট এক গ্রাম। সব মিলিয়ে কয়েকশো মানুষের বাস। আর সেই ছোট গ্রাম এখন পরিচিত ‘চিকিৎসকদের গ্রাম’ বা ‘এমবিবিএস গ্রাম’ নামে। কিন্তু কেন এমন নাম এই গ্রামের?

ভারতের বহু গ্রামে এখনও চিকিৎসা ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ দিন গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে পড়ে থাকতে হয় বহু মানুষকে। আর সেই জায়গায় ঘরিবলী গ্রামের চিত্র সম্পূর্ণ অন্য।

ঘরিবলী গ্রামের ৩০টি পরিবারের ২০ পরিবারে অন্তত একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন। অর্থাৎ, এই ছোট গ্রামে ২০ জনেরও বেশি চিকিৎসক। চিকিৎসার জন্য গ্রাম ছেড়ে দূরদূরান্তেও যেতে হয় না সে গ্রামের বাসিন্দাদের।

কীভাবে চিকিৎসকদের গ্রাম হয়ে উঠল ঘরিবলী? ঘরিবলীর চিকিৎসকদের গ্রাম হয়ে ওঠার গল্প শুরু হয় সঞ্জয় পাতিলের মাধ্যমে। ২০০০ সালে সঞ্জয় সেই গ্রামের এমবিবিএস ডিগ্রিধারী প্রথম চিকিৎসক হন।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান সঞ্জয় বৃত্তির টাকা দিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গ্রামের বাইরে পড়তে চলে যান। সঞ্জয় দ্বাদশ শ্রেণি পাস করার পরই তার বাবা মারা গিয়েছিলেন। তবে সঞ্জয়ের দাদা তাকে স্বপ্নপূরণে সাহায্য করেছিলেন।

সঞ্জয়ের কৃতিত্ব গ্রামের অন্য যুবকদেরও অনুপ্রাণিত করেছিল। গ্রামের পড়ুয়াদের নিজে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন সঞ্জয়। মজার বিষয় হলো, ঘরিবলী গ্রামে বর্তমানে যতজন চিকিৎসক আছেন, তারা কেউই নামীদামি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেননি। সকলেই স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর গ্রামের বাইরে গিয়েছেন।

৪৬ বছর বয়সী সঞ্জয়ের কথায়, “যখন আমি ছোট ছিলাম, আমি ভাবতাম চিকিৎসকরা দেবতার সমান। এই পেশা কত ভালো। একই সঙ্গে অর্থ, সম্মান এবং আশীর্বাদ পাওয়া যায়।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমায় পথ দেখানোর মতো সেভাবে কেউ ছিল না। তবে আমি আনন্দিত যে এখন আমি আমার গ্রামের তরুণদের লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করতে পারছি। আমাকে নিয়ে আমার জ্ঞাতিদের মধ্যে এখন পাঁচজন চিকিৎসক আছে।’’

সঞ্জয়ের পরিবারের সদস্য মনোজ পাতিলও একজন চিকিৎসক। সঞ্জয়কে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়ে চিকিৎসক হয়েছেন মনোজ। তিনি বলেন, “আমরা সবাই সঞ্জয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আমাদের গ্রাম বছরের পর বছর ধরে বহু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। আমার বাবার সময়ে গ্রামে একটি কারখানা ছিল। বহু গ্রামবাসীর রুজিরুটি ওই কারখানা থেকেই চলত। হঠাৎ এক দিন সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গ্রামের মানুষেরা কাজের খোঁজে কেউ রিকশা চালাতে শুরু করেন, কেউ দিনমজুরের কাজ শুরু করেন আবার কেউ ইটভাটায় কাজ শুরু করেন।

মনোজের কথায়, ‘‘সঞ্জয়কে দেখার পর আমার বাবাও চেয়েছিলেন যে আমি একজন চিকিৎসক হই। আমাদের গ্রামকে আজ চিকিৎসকদের গ্রাম বলা হয়। কারণ, গ্রামের প্রত্যেক বাবা-মা চান যে তাদের সন্তান যেন চিকিৎসক হয়।’’

বর্তমানে গ্রামের সর্বকনিষ্ঠ চিকিৎসক ঐশ্বর্য পাতিল। ২৬ বছর বয়সী ঐশ্বর্য এখন উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাকেও চিকিৎসক হওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন সঞ্জয়। এ ছাড়াও গ্রামের একাধিক তরুণ-তরুণী বর্তমানে ডাক্তারি পড়ছেন। কয়েক বছরের মধ্যে তারাও গ্রামের চিকিৎসকদের তালিকায় নাম লেখাবেন।

গ্রামের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সুভাষ পাতিল জানিয়েছেন, তিনি গ্রামের জন্য গর্বিত। তিনি বলেন, “আমি আমার গ্রামের জন্য গর্বিত। সবাই ভাবে সঞ্জয় যখন পেরেছিল, তা হলে আমাদের সন্তান পারবে না কেন?’’

সঞ্জয় এখন গ্রামে একটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনাও করছেন। যেখানে গ্রামের চিকিৎসকরাই বিনামূল্যে চিকিৎসা করবেন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, টাইমস অব ইন্ডিয়া

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর