৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১১:৩৮

এখন ২০২৩ নয়, বছরের হিসাবে নাকি কারচুপি হয়েছিল!

অনলাইন ডেস্ক

এখন  ২০২৩ নয়, বছরের হিসাবে নাকি কারচুপি হয়েছিল!

‘টাইম মেশিনে’ আমাদের এগিয়ে আনা হয়েছে প্রায় ৩০০ বছর

এটা কত সাল, কত খ্রিস্টাব্দ? প্রশ্ন শুনে মনে হতে পারে, বছর ঘুরতে চলল এখনও জানা নেই কোন সাল! সত্যি বলতে, একটি বিশেষ তত্ত্ব যদি সত্যি হয়, তবে আপনারও জানা নেই এটা কোন সাল। কারণ, ওই তত্ত্ব বলছে এক বিশেষ ‘টাইম মেশিনে’ আমাদের এগিয়ে আনা হয়েছে প্রায় ৩০০ বছর।

২০২৩ সালে আমরা চলে এসেছি ওই টাইম মেশিনের জোরেই। না হলে এখন আমাদের একবিংশ শতকে পা রাখার কথাই নয়। সবে অষ্টাদশ শতাব্দীতে পৌঁছানোর কথা আমাদের পৃথিবীর। আরও নিখুঁত ভাবে বললে, ওই তত্ত্বের হিসাবে আমরা এখন রয়েছি ১৭২৬ সালে! অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক   ২৯৭ বছর পেছনে। 

জার্মানির এক ইতিহাসবিদের দাবি তেমনটাই। ওই ইতিহাসবিদের নাম হেরিবার্ট ইলিগ। যদিও ইতিহাস নিয়ে প্রকৃত গবেষণাকারীরা তাকে ‘ইতিহাসবিদ’ বলেই মানতে নারাজ। ইলিগ পেশায় ছিলেন একজন সাংবাদিক এবং লেখক। তবে তার বাইরে ইতিহাস নিয়েও বরাবরের আগ্রহ ছিল তার।

মানবজাতি এবং প্রকৃতির ইতিহাস নতুন করে খতিয়ে দেখা এবং পুনর্বিন্যাস করার একটি সমিতি ছিল জার্মানিতে। তিনি ছিলেন সেই সমিতির সদস্য। এ ছাড়া বহু পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন ইলিগ। ইতিহাস নিয়ে তার বহু লেখার প্রশংসাও করেছেন পণ্ডিতেরা। সেই সব লেখায় ইতিহাস সংশোধনের নানারকম প্রস্তাব ছিল। তার মধ্যেই একটি ছিল এই টাইম মেশিন তত্ত্ব। যার ভাল নাম ‘ফ্যান্টম টাইম কনস্পিরেসি থিয়োরি’ বা ভৌতিক সময়-ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।

ইলিগের বক্তব্য ছিল, ৬১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে স্রেফ মুছে ফেলা হয়েছে পৃথিবী থেকে। আর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। ইলিগ বলেছিলেন, কয়েকজন ক্ষমতাবান মিলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে মুছে দিয়েছিলেন ওই ২৯৭টি বছর। আর এই কাণ্ডটি ঘটানো হয় রোমের এক রাজার শাসনকালকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য।

রোমের ওই রাজা আসলে রোমান সম্রাট তৃতীয় অটো। ইলিগ বলেছিলেন, সম্রাট তৃতীয় অটো যাতে মিলেনিয়াল বর্ষ অর্থাৎ ঠিক ১০০০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করতে পারেন, সে জন্যই এগিয়ে দেওয়া হয়েছিল সময়। রোমান সম্রাটের ইচ্ছেতেই পোপ সিলভেস্টার দ্বিতীয় এবং বাইজেনটাইনের সম্রাট সপ্তম কনস্ট্যানটাইন মিলিত ভাবে বদলে দিয়েছিলেন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সময়।

ইলিগের দাবি, তারা শুধু ক্যালেন্ডারের বর্ষই এগিয়ে দেননি। সেই সময়ের যাবতীয় নথি এবং ঘটনার ইতিহাসও বদলেছিলেন। বদলেছিলেন বহু তারিখ। ইলিগের তত্ত্ব অনুযায়ী, এই তিন ক্ষমতাবান গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের অ্যানো ডমিনি ডেটিং সিস্টেমকেই জাল করেছিলেন। নষ্ট করেছিলেন আবার তৈরিও করেছিলেন বহু প্রমাণ।

ইলিগ ওই ২৯৭ বছরে সময়কালকেই ভৌতিক সময় ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। ইলিগ তার তত্ত্বটি নিয়ে এতটাই বিভোর ছিলেন যে শার্লেমান নামে এক রোমান সম্রাটের অস্তিত্বই অস্বীকার করেছিলেন। অথচ ইতিহাস বলছে, এই শার্লেমানের প্রভাব ছড়িয়েছিল দূর দূরান্তে। রোমান সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করেছিলেন তিনিই। যদিও ইলিগের দাবি, শার্লেমানের ইতিহাস পুরোটাই বানানো। আর তা বানিয়েছিল ওই ত্রয়ী।

১৯৯১ সালে এই তত্ত্বটি প্রকাশ করেছিলেন ইলিগ। তিনি নিজের তত্ত্বের পক্ষে চারটি যুক্তি দিয়েছিলেন। ইলিগ বলেছিলেন, প্রথমত ‘‘৬১৪-৯১১ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়ের ঐতিহাসিক নিদর্শন মেলে না।’ দ্বিতীয়ত, রোমান স্থাপত্যগুলি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, রোমান যুগ যত প্রাচীন ভাবা হয়েছিল, আদতে তত প্রাচীন নয়। তৃতীয়ত, সময় ‘চুরি’ যে হয়েছে তার প্রমাণ ১৫৮২ সালেই পাওয়া গিয়েছিল। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধনের সময়েই প্রথম ‘চুরি’ ধরা পড়ে। পোপ গ্রেগরি ত্রয়োদশের অধীনে ক্যালেন্ডার নিয়ে কাজ করছিলেন কিছু গণিতজ্ঞ। হিসাব করে তারা দেখেছিলেন, ক্যালেন্ডার ১৩ দিন এদিক ওদিক করতে হবে।

কিন্তু সংশোধনের সময় সময় নাকি দেখা যায়, মাত্র ১০ দিনের হিসাব ঠিক করলেই সব হিসাব মিলে যাবে। তা হলে বাকি তিন দিন কোথায় উধাও হল। ইলিগের দাবি ওই তিন দিন আসলে ওই তিন শতাব্দীর হিসাব। যা ষড়যন্ত্র করে গায়েব করে দিয়েছিলেন রোমান সম্রাট তৃতীয় অটো এবং তার দুই শুভার্থী। যদিও ইলিগের এই তত্ত্ব ইতিহাসবিদেরা মেনে নেননি। তবে তারা তার কোনও যুক্তি খণ্ডনও করেননি। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদেরা এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তত্ত্বটি এতটাই আজগুবি যে, তারা সেটিকে খণ্ডন করার প্রয়োজনই বোধ করেননি।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর