৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১৪:২৯

ঝুড়ির মোয়ার গ্রামে দুঃখের আঁচ

দিনাজপুর প্রতিনিধি

ঝুড়ির মোয়ার গ্রামে দুঃখের আঁচ

একসময় দিনাজপুরের বিরলের মাটিয়ান ও নলদিঘী গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত ঐতিহ্যবাহী ঝুড়ির মোয়া (নাড়ু) বানানোর দৃশ্য।নলদিঘী গ্রাম ঝুড়ির মোয়া তৈরির গ্রাম নামেই পরিচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই মোয়া। নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতি আবার উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে দিনাজপুরের বিরলের দুইটি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার। 

স্থানীয়রা মনে করেন এটি বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা খুবই প্রয়োজন। 

বিরল উপজেলার ধামইড় ইউপি’র মাটিয়ান গ্রাম ও ফরক্কবাদ ইউপির নলদিঘী গ্রাম দুইটির বেশিরভাগ পরিবারের প্রধান কাজ ও আয়ের উৎস এ ঝুড়ির মোয়া (নাড়ু) তৈরি করে বিক্রি করা। এসব পরিবারের নারী-পুরুষ একসাথে সকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই ঝুড়ির মোয়া (নাড়ু) তৈরির কাজে। 

আব্দুর রহিমসহ অনেকে জানান, ঝুড়ির মোয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয় হাতে তৈরি কাঠের ঝর্না মেশিন, আতপ চালের আটা, তেল, গুড়, কড়াই, পাতিল ও খড়ি। প্রথমে আটা সিদ্ধ করে নিয়ে খামির তৈরি করতে হয়। তারপর খামির ভালোভাবে মন্থন করে কাঠের মেশিন বা হাতের সাহায্যে চিকন সেমাইয়ের মত তৈরি করতে হয় ঝুড়ি। এরপর সেটা রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে বালুতে ঝুড়িগুলি মুড়ির মত করে ভেজে নিতে হয়। এরপর এসব ঝুড়ি গুড়ের বা চিনির সিরা বা গাঢ় রসে হালকা মেখে নিতে হয়। ঝুড়িগুলি আঠালো হলে তার পর হাতে তেল মেখে নিয়ে ছোট ছোট গোল গোল আকারে তৈরি করা হয় ঝুড়ির মোয়া বা নাড়ু। ওই গ্রাম দুইটির নারী পুরুষসহ পরিবারের প্রায় সকলেই এই কাজটি করতে পারে। মোয়া বা নাড়ু তৈরি হয়ে গেলে তা গ্রামে ও শহরে বাজারজাত করা হয়। 

স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস জানান, বর্তমানে নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতির কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় সে তুলনায় লাভ না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলো। কিন্তু কালের বিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বিরলের এই ঝুড়ির মোয়া (নাড়ু)। আগের মত লাভ না হওয়ায় অনেকে এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে বাপ-দাদার আমল থেকে আসা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার কারণে অন্য পেশায় যেতে পারেননি। তাদের অভিযোগ বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির কারণে আগের মত আর লাভ হচ্ছে না। যা হয় তা দিয়ে পরিবার চলে না। এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষোকতার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর