৮ অক্টোবর, ২০২৩ ১৯:৫৭

সাতক্ষীরায় জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুর মেলা

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুর মেলা

হিন্দু ধর্মের স্বর্পদেবী মা মনসা পূজার মধ্যদিয়ে প্রতিবছর বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরার ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের মেলা। এবছরও সব ধর্মের শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের মেলা প্রাঙ্গণ। সকাল ৮ থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। 

২০০২ সালে মেলার সার্কাস প্যান্ডেল ও রক্সি সিনেমা হলে বোমা হামলার পর মেলাটি এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ২০১১ সাল থেকে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে ফের চালু হয় মেলাটি। এবছরও যথা সময়ে মেলা শুরু হলেও মেলা কেন্দ্রিক শুরু হয়েছে মোটা অংকের বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে প্রতিদিন দোকানিদের নিকট থেকে মেলার চেয়ারম্যান হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। দোকান ভাড়ার নামে দূর দূরান্ত থেকে আসা পরসা সাজিয়ে বসা দোকানদারদের নিকট থেকে দৈনিক ভিত্তিতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। ইতিমধ্যে মেলাটি জমে উঠলেও লোকসান ঠেকাতে বাধ্য হয়ে মার্কেট ছাড়া বাড়তি দামে পন্য বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এতে করে বিপাকে পড়েছে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। 

মেলায় ঘুরতে ও কেনাকাটা করতে আসা ত্রিশমাইলের জাকির হোসেন, লাবসার সাগর হোসেন ও পাটকেলঘাটার লিটন ও সাতক্ষীরার হাফিজ ও কাটিয়া এলাকার শিউলি আক্তার জানান, বাইরের মার্কেটে যে সকল পণ্যের দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকা। সেই একই পন্য মেলায় দাম হাকানো হচ্ছে তিন থেকে চারগুন চড়া মূল্যে। এছাড়া মেলায় এবার মানহীন পন্যে সয়লাভ। যে কারণে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। তবে ঢাকা-খুলনা, যশোর নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা স্টল মালিকরা বলছে ৮ থেকে ১০ ফুট আয়তনের এক একটি দোকানভেদে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা করে প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে মেলার চেয়ারম্যান মানিক শিকদার ও তার ছেলেকে। বেচা বিক্রি হোক আর না হোক মেলার আয়োজক কমিটিকে টাকা গুনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। লোকসান ঠেকাতে যে কারনে একটু চড়াদামে পন্য বিক্রি করতে হচ্ছে। আর এই বাড়তি দামের কারণে ক্রেতা-সাধারণের ভিড় হলেও অধিকাংশরা পন্য না কিনে শুধু দাম শুনেই ফিরে যাচ্ছে। 

এদিকে শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলায় রয়েছে, ট্রেন, নাগরদোলা-হানি সুইং, ইলেকট্রনিক ভাসমান নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড। শিশুদের শখ ও বিনোদন মিটাতে বিভিন্ন রাইডে চড়তে গেলে মাথা প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা হারে টিকিট ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। টিকিটের মূল্য অতিরিক্ত ধরা হয়েছে যা অযৌক্তিক বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। 

এদিকে মেলায় অবস্থিত তিন শতাধিক স্টল মালিকদের নিকট থেকে মেলার আয়োজক কমিটি’র চেয়ারম্যান মানিক শিকদারসহ তার নিয়ন্ত্রিত একটি প্রভাবশালী মহল হাতিয়ে নিচ্ছে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা। এতে করে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা। 

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান মানিক শিকদারের দাবি, দোকানের নিচে বিছানো ইট, ঘরের ছাউনি ও বিদ্যুৎ বিল এবং জেনারেটর ভাড়া বাদে শুধুমাত্র প্রতিদিন দোকান প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে।

২২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হওয়া মেলা চলবে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। মেলার মেয়াদ আর যেন বৃদ্ধি না করা হয় সে জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, মেলায় রাত ১০টার পরে কোনো প্রকার বাদ্য-বাজনা ও মাইকে গান বাজনা না চলে সে জন্য মেলার চেয়ারম্যানকে নিষেধ করা হবে। এছাড়া মেলার সময়সীমা বৃদ্ধির ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সামনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গা পূজা। পূজা কেন্দ্রিক মেলার সময়সীমা বৃদ্ধি করা যাবে কিনা আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর