১২ অক্টোবর, ২০২৩ ১৩:৩৪

১০ হাজার বাঁশে তৈরি হচ্ছে ব্যতিক্রমী দুর্গা মণ্ডপ, থাকবে তিনশ’ প্রতিমা

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

১০ হাজার বাঁশে তৈরি হচ্ছে ব্যতিক্রমী দুর্গা মণ্ডপ, থাকবে তিনশ’ প্রতিমা

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে পুকুরের পানির ওপর ১০ হাজার বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ৬টি মণ্ডপ। দুই তলা উচ্চতার মণ্ডপগুলো নির্মাণে বাঁশ, কাঠ, পাট ও সোলার ব্যবহার করা হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে তিনশ’টি প্রতিমা প্রদর্শনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন আয়োজকরা। মূল পূজার সাথে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী ও কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের লীলাসহ বেশ কয়েকটি কাহিনী তুলে ধরা হবে। গত তিন মাস ধরে ২০ জন নির্মাণ শ্রমিক মণ্ডপগুলো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসছেন। প্রতিমাগুলোতে চলছে রংয়ের কাজ। আয়োজকরা মনে করছেন ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে দেশে ও বিদেশ থেকে আসবেন কয়েক লাখ মানুষ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে দিয়ে দেখা যায়, পানির ওপর বাঁশ দিয়ে ৬টি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে প্রতিমা। মন্দিরে প্রবেশ করলে ১৪শ’ ফুট পায়ে হেঁটে শেষ করতে হবে প্রতিমা প্রদর্শন। মন্দিরে প্রবেশের সময় চোখে পড়বে শিবের বিশালকৃতির মূর্তি।
 
এরপর মূল প্রবেশ পথ দিয়ে কিছু দূর আগালে দেখা যাবে বড় মন্দির। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী। দক্ষযজ্ঞ থেকে শুরু করে সতীর পুনর্জন্ম ও ৫১টি শক্তিপীঠের কাহিনী সাজানো হয়েছে মূর্তিগুলো দিয়ে। এরপর পুকুরের ওপর তৈরি করা হয়েছে ওভারব্রিজ। ব্রিজের দুই পাশে ফোয়ারার মধ্য দিয়ে সামনের মণ্ডপে মেট্রোরেলের ভেতরে রাখা হয়েছে ২০ জন মনীষী। সেগুলো দেখে সামনে আগালে দেখা যাবে সনাতন ধর্মের আরেক কাহিনী। সেটি শেষ করতে পরের মণ্ডপে দেখা যাবে কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের শৈশব। এরপর দেবির ঘটকে বিদায়ের আরেকটি দৃশ্য। সেটি শেষে পৌঁছে যাওয়া যাবে মূল দুর্গা মণ্ডপে।

এরইমধ্যে আয়োজন দেখতে আসতে শুরু করেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থীরা। তাদের দাবি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির এই আয়োজন ব্যতিক্রমী। পূজার আগে কিভাবে মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি দেখতে এখানে আসা। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে মন্দিরগুলো সজ্জিতকরণ হলে অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। সনাতন ধর্ম সম্পর্কে শেখা যায় আলোকদিয়ার এই পূজা থেকে। এই আয়োজন বাংলাদেশর জন্যই জন্য গর্বের।

বাঁশ দিয়ে মন্দির তৈরির কারিগর বালিয়াকান্দি উপজেলার তুলসীবরাট গ্রামের জ্ঞানেন্দ্র নাথ মন্ডল। তিনি বলেন, আমরা ২০ জন শ্রমিক তিন মাস ধরে কাজ করে শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসছি। কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কাঠের পাটাতন দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন কাপড় আর সোলা দিয়ে মন্দিরগুলোর সজ্জিতকরণ করা হবে। ষষ্ঠীর আগের দিন সকল আয়োজন শেষ করা হবে। এবছর মন্দির তৈরি করতে ১০ হাজার বাঁশ ও অনেক কাঠের তক্তা ব্যবহার করা হয়েছে। এই আয়োজন দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়োজন।

গ্রাম জামালপুর ও আলোকদিয়া মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রতি বছর এখানে ব্যতিক্রমী আয়োজন করি। করোনার পর তিন বছর বড় পরিসরে এই আয়োজন করতে পারিনি। এবছর আবার শুরু করেছি। ৬ টি মণ্ডপে সনাতন ধর্মের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হবে। বাঁশ, কাঁঠ, কাপড় ও সোলা দিয়ে মণ্ডপগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের ভেতরে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে মেট্রোরেলের ভেতরে মাটির তৈরি মনীষীদের ভাস্কর্য রাখা হয়েছে। তাদের জীবনাদর্শ সম্পর্কে মানুষ যেন জানতে পারেন। সেই তথ্য রাখা হয়েছে। লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত এই আয়োজন থাকবে বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি. এম. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজবাড়ীতে এ বছর ৪৪৬ টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তবে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামলপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে বড় পরিসরে দুর্গা পূজা হবে। সেখানে আমাদের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির আলোকদিয়া গ্রামের মন্দির কমিটি ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছেন। তাদের আয়োজন সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। সনাতন ধর্মের কয়েকটি দিক সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেখান থেকে মানুষ ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই আয়োজন আমাদের সবার জন্য গর্বের।

 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর