২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ১৫:৪৬

আমদানি নির্ভরতা কমাতে কুষ্টিয়ায় মসলার গ্রাম

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

আমদানি নির্ভরতা কমাতে কুষ্টিয়ায় মসলার গ্রাম

রাস্তায় সারি সারি লাগানো হয়েছে বিভিন্ন মসলার চারা

হঠাৎ বদলে গেছে কুষ্টিয়া সদরের বড়িয়া-ভাদালিয়াপাড়া গ্রাম। সব রাস্তায় এখন সারি সারি রঙিন খাঁচা। এমন ৬ হাজার খাচার মধ্যে লাগানো হয়েছে দারুচিনি, তেজপাতাসহ বিভিন্ন মসলার চারা। উঠান, বাড়ির আঙিনা, পুকুর পাড়সহ পতিত জায়গায় জিও ব্যাগে চাষ হচ্ছে আদা ও হলুদ। এ ছাড়াও আধুনিক পদ্ধতিতে পরম যত্নে চাষ হচ্ছে ক্যাপসিকাম, গোলমরিচ, জিরা, চুইঝালসহ দরকারি ১৩ পদের মসলা। আমদানি নির্ভরতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রণোদনায় কুষ্টিয়ায় এই মসলা গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল নিজে তদারকি করছেন এই উদ্যোগের। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রামের মসলার চাষ হচ্ছে সরকারি প্রণোদনায়। মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে এই একটি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছরের প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন ১০০ কৃষক পরিবার। মাঠে মাঠে চারা ও বীজতলার জন্য শেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। মসলা বীজের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে এই গ্রামকে গড়ে তুলে এর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানোই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আগামী তিন বছর পর এই গ্রামের কৃষকরা এখান থেকে পুরোপুরি লাভ পেতে শুরু করবেন। মসলা উৎপাদনের পাশাপাশি চারা বিক্রি করতে পারবেন। এভাবে সারাদেশে মসলার চাষাবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এসব মসলা বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করা হয়। সেই খরচ সাশ্রয় করাই এর মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মসলার উৎপাদনে পিছিয়ে আছে। এই চাষ বাড়ানো নির্ভর করছে এই গ্রামের সফলতার মাধ্যমে। গ্রামের সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে পারবে, সেই চিন্তা থেকে সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কৃষকদের সঙ্গেই মাঠে কাজ তদারকি করছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, এসব চাষ কৃষকরা আগে করেনি। তাই বিশেষ যত্ন নিতে হচ্ছে। তদারকিও করা হচ্ছে সকাল বিকাল। ঠিকমতো পানি দেওয়া হচ্ছে কি-না? বালাইনাশক দরকার কি-না? নিয়মিত কৃষকদের সঙ্গে থেকে নিবিড়ভাবে দেখিয়ে দিচ্ছি। অন্য গাছ যেমন তেমন লাগানো হলেও এই মসলা গাছের বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে।

কৃষক আজমত মণ্ডল বলেন, আমরা ধান চাষ করতাম। এখন মসলা চাষ করে আমরা লাভবান হচ্ছি। চুইঝাল, ক্যাপসিকাম, গ্রীষ্মকালীন পিয়াজ, মৌরী, আদা, হলুদ, গরম মসলার গাছ, তেজপাতা চাষ শুরু করেছি। এসবের দাম অনেক, তাই আমাদের স্বপ্নও এখন অনেক বড়।

কৃষক নূর আলম বলেন, যেসব মসলার চাষ হচ্ছে তার চারা সরকারই দিয়েছে। তারা জিও ব্যাগও দিয়েছে। আমরা গাছগুলো টিকাতে পারলে পরে আরো বেশি জায়গায় করা হবে। সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। আমরা চারা বিক্রি করেও অনেক টাকা পাবো। তিনি বলেন, জিও ব্যাগে যে আদা-হলুদ চাষ হয় জানতাম না। খুব ভাল হচ্ছে চাষাবাদ। আগামীতে আমি নিজ উদ্যোগেই অনেক বেশি ব্যাগে চাষ করবো।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর