২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ১৯:১০

প্রবারণা পূর্ণিমা; পাহাড়ে রঙের ফানুস

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

প্রবারণা পূর্ণিমা; পাহাড়ে রঙের ফানুস

হরেক রঙের কাগজ আর বাহারি ডিজাইনের তৈরি ফানুস। সন্ধ্যা নামতেই সাই সাই করে উড়ে যায় আকাশের পানে। তখন শুরু হয় আতশবাজির ঝলকানি। পূর্ণিমার আকাশ তখন রঙ বে-রঙের হয়ে উঠে। পাহাড়ি বিহারগুলো থেকে বাতাসের সাথে ভেসে আসে সাধু সাধু সাধু ধ্বনি। সবুজ পাহাড়ের বুক জুড়ে জ্বলে উঠে হাজার প্রদ্বীপ। পাহাড়িবাসির আনন্দ বাড়িয়ে তুলে আরও কয়েকগুণ। 

এরই মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজারো বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী-পুরুষ। পুর্ণ্যার্থীর পাশাপাশি বিহারে বিহারে ঢল সাধারণ মানুষেরও। পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো উৎসবস্থল। এমন এক উৎসব মুখর পরিবেশে এবার পার্বত্যাঞ্চলে পালিত হয়েছে প্রবারণা পূর্ণিমা। শনিবার শুরু হওয়া তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রবারণা উৎসব শেষ হচ্ছে রবিবার।
 
জানা গেছে, প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা, মারমা ও রাখাইয়নরা ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে পালন করে থাকে এ উৎসব। দু’দিন ব্যাপী চলা এ পূর্ণিমা উৎসবের এখনো জোয়ার বইছে পাহাড়ে। টানা দু’দিনব্যাপী চলে পূজা আর প্রার্থনা। বৌদ্ধ পতাকা আর কল্পতরু হাতে দলে দলে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন এলাকার বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী-পুরুষ।  তাদের কণ্ঠে সাধু, সাধু, সাধু ধ্বনি উৎসবের আমেজ ছড়িয়েছে পাহাড়ে। 

রাঙামাটি রাজ বনবিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদ আহবায়ক গৌতম দেওয়ান জানা যায়, রাঙামাটি রাজ বনবিহার, রাঙামাটি বৌদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার, আনন্দ বিহার, সাক্ষ্যমনি বৌদ্ধ বিহার, ধনপাতা বৌদ্ধ বিহারসহ বেশ কয়েকটি বিহারে সংঘ দান, অস্ট পরিস্কার দান, বুদ্ধ মুর্তি দান, মধু দানকার্য সম্পাদন করা হয়। এসময় পুর্ন্যার্থীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছ থেকে পঞ্চশীল গ্রহণ করেন। প্রদীপ প্রজ্জলন করা হয় বুদ্ধ মুর্তির সামনে।

বিকাল ৪টায় শুরু হয় মঙ্গল প্রার্থনা ও আকাশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচি। তাই বিকাল হওয়ার আগে মোমবাতি ও ফানুস হাতে বৌদ্ধ বিহারে হাজির হয় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। মোমবাতির আলোয় রঙিন কাগজের ফানুস আর আতশবাজিতে সজ্জিত হয় পুরো আকাশ। এসময় সবার মুখে একটাই শব্দ উচ্চারিত হয়-সাধু সাধু সাধু। রাঙামাটি রাজ বনবিহারে সংরক্ষিণ বনভান্তের মোমিতেও পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন ভক্তরা। ধর্মীয় দেশনা দেন বৌদ্ধ ভিক্ষরা।

প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে প্রবারণা মানে আমন্ত্রণ। বর্ষাবাস শেষ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিহারে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয় এ প্রবারণা উৎসবের মধ্যে দিয়ে। মূলত এ প্রবারণা উৎসবের মধ্যে দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলে শুরু হয়েছে কঠিন চীবনোৎসব। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কঠিন চীবর দানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে মাস ব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ধর্মীয় উৎসব। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর