১০ নভেম্বর, ২০২৩ ১৪:২৬

জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে কাঠমিস্ত্রির লাইব্রেরি

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া:

জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে কাঠমিস্ত্রির লাইব্রেরি

মাত্র ১০০ বই নিয়ে বাড়িতে শুরু করা লাইব্রেরি এখন তিন হাজারের বেশি বইয়ে ঠাসা। কাঠমিস্ত্রী জসিম উদ্দীন ও তার স্ত্রী পালা করে সময় দেন লাইব্রেবিতে। দ্বিতীয় শ্রেণি পাশ লাইব্রেরিয়ান জসিম এখন গান-কবিতা লেখেন, আসর বসান। আমন্ত্রণ পান দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও লেখক সাহিত্যিকদের আসরে। বইয়ের সংখ্যা বাড়ায় মেঝে পর্যন্ত পাকা করা ছোট্ট টিনের ঘরের লাইব্রেরির আকার কিছুটা বড় করছেন তিনি।

জ্ঞানের আলো ছড়ানো এই লাইব্রেরির নাম খোকসা কমিউনিটি লাইব্রেরি। ২০১৫ সালে খোকসার পাইকপাড়ায় নিজ বাড়িতে এর যাত্রা শুরু করেন কাঠমিস্ত্রি জসিম উদ্দীন। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বাড়িতেই এখন লাইব্রেরির জন্য টিনের ঘর করে দিয়েছেন তিনি। ২০২০ সালে এসে এটি কমিউনিটি লাইব্রেরি হিসেবে অনুমোদন পায়। আকারে ছোট হলেও এই লাইব্রেরির ফলাফল অনেক। নির্ধারিত পাঠক তৈরি করেছে লাইব্রেরিটি, গড়েছে মানুষের পাঠোভ্যাস। ৫শ ৬৪ জন পাঠক এখান থেকে বই নিয়ে পড়েন। এর মধ্যে শিশু কিশোরের সংখ্যাই বেশি।

বাইরে থেকে টিনের সাধারণ ঘরের মতো দেখতে এই জ্ঞানের ভান্ডারে থরে থরে সাজানো বই আর বই। কাঠমিস্ত্রি জসিম নিজেই তৈরি করেছেন বইয়ের র‌্যাক। আর এর সবগুলোই বইয়ে ঠাসা। মুজিব, মুক্তিযুদ্ধ এমন কর্ণারে ভাগ করেছেন লাইব্রেরির অংশ। কাঠমিস্ত্রি হিসেবে জসিমের যা উপার্জন হয়, তা থেকে বাঁচিয়ে ব্যয় করেন লাইব্রেরিতে। দিন দিন এলাকার মানুষের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। কেউ লাইব্রেরিতে বসেই পড়েন, কেউ নিয়ে যান বাসায়। বিনামূল্যে। লাইব্রেরির প্রবেশ মুখে এমনভাবে ফুল গাছ লাগানো থাকে যেন আকর্ষণীয় অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে।  
জসীম দিনে যখন কাঠমিস্ত্রির কাজে থাকেন তখন তার স্ত্রী পপি খাতুন পাঠকদের সময় দেন। তাদের বই বের করে দেয়া, রেজিস্টারে টুকে রাখা এসব তিনি করেন হাসিমুখেই।

এই লাইব্রেরিতে প্রায়ই বসে পাঠচক্র, কবিতা আবৃতি ও গানের আসর। জসিম উদ্দীন তা প্রচার করেন ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন তিনি। জসিম নিজে কবিতা-গান লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেন। দেশ বিদেশের পত্রিকায় ছাপাও হচ্ছে তার গান-কবিতা।

জসিমের এই লাইব্রেরি বড় করার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। এখানে বই দিয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন, মোহাম্মদ জাফর ইকবালসহ খ্যাতিমান লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ। পরিদর্শনও করেছেন অনেক খ্যাতিমান। এসব স্মৃতি ধরে রাখতে তিনি লাইব্রেরিতে পরিদর্শন বুক রেখেছেন। আগতদের সঙ্গে ছবি তুলে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস লাইব্রেরির জন্য সরকারি অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। তা দিয়ে রাস্তার পাশে কিছুটা বর্ধিত করা হচ্ছে ঘর।

জসিম উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যদি লাইব্রেরির জন্য নিজস্ব জমি ও ভবন থাকতো তাহলে ভবিষ্যতে এটি টিকবে কি-না এই দুশ্চিন্তা দূর হতো।

বিডি প্রতিদিন/এএম

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর