২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১৬:১৬

মা-ছেলের ঘানিতে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝড়ছে তেল

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

মা-ছেলের ঘানিতে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝড়ছে তেল

মা-ছেলের ঘানিতে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝড়ছে সরিষার তেল। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের দাসকান্দি গ্রামে মা ও ছেলে টানছেন এই ঘানি। বাপ-দাদার আমল থেকেই ঘানিতে সরিষা ভেঙে তেল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তারা। 

এক সময় বাবা ছহির উদ্দিনের সাথে মা আঙ্গুর বেগম এই ঘানি টানতেন। আর ছেলে আমিনুল নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। বাবা ছহির উদ্দিন আড়াই বছর আগে মারা যাওয়ায় সংসারের ঘানির সাথে বাবার কাঠের ঘানিও কাঁধে তুলে নিয়েছেন নির্মাণ শ্রমিক আমিনুর। তার মা আগে বাবার সাথে সহযোগিতা করলেও এখন ছেলের সাথে ঘানি টানছেন। এভাবেই চলছে তাদের জীবন। সংসারের বোঝা টানতে তারা কাঁধে তুলে নিয়েছেন কাঠের ঘানি। 

জানা গেছে, ষাটোর্ধ্ব মা আঙ্গুর বেগম ও ৪০ বছর বয়সী ছেলে আমিনুর কাঠের জোয়ান আর বাঁশের লাঠি ঠেলে কাঠের ঘানিতে সরিষা ভাঙছেন। মা-ছেলের হাড় ভাঙা পরিশ্রমে ঘুরছে ঘানি। হতদরিদ্র এই পরিবারের ৫ সদস্যের মুখে খাবার তুলে দিতে উপার্জনের পথই হচ্ছে কাঠের ঘানি। 

প্রতিদিন ঘানিতে ৫ কেজি সরিষা ভেঙে দেড় কেজি তেল আর ৩ কেজি খইল পান, তা দিয়েই চলছে তাদের ৫ জনের সংসার। 

সভ্যতার ক্রমবিকাশে প্রাচীন ঐতিহ্যের তেলের ঘানি, কলুর বলদ, কলু সম্প্রদায় আজ নতুন প্রজন্মের কাছে অচেনা ও অজানা। বর্তমানে বিলুপ্ত হলেও বগুড়ার গাবতলীতে এখনও কলুর এই ঘানি চালাচ্ছেন মা-ছেলে। ঘানির প্রতিটি টানে তাদের শরীরের যেমন ঘাম ঝড়ছে। তেমনি ঘানি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝড়ছে সরিষার তেল। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, কলু হলো তেলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও বলদ হচ্ছে গরু। সরিষা বা তেলবীজ পেষার জন্য পশু দ্বারা চালিত যে দেশীয় যন্ত্রটি কলুরা ব্যবহার করেন সেটিই ঘানি নামে পরিচিত। ঘানি টানবার জন্য কলু মূলত গরু কিংবা ঘোড়া ব্যবহার করেন। ঘানি তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। যেখানে কোনো লোহা ব্যবহার করা হয়নি। এটা তৈরি করতে রীতিমতো একটা গাছ লেগে যায়। 

আমিনুর ইসলাম জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই ঘানি টেনে তেল তৈরি করেন তারা। বাবা-মা কষ্ট করেই এভাবেই তেল তৈরি করেন। তাদের নিজস্ব কোনো জমি জমা নেই। আগে তিনি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। অসুস্থ হওয়ার পর আর সেই কাজ করেন না। এরই মধ্যে তার বাবা ছহির উদ্দিন আড়াই বছর আগে মারা গেছেন। এরপর থেকে সংসারের দায়িত্বের সাথে সাথে এই কাঠের ঘানিরও দায়িত্ব নিয়েছেন। একটা গরু ও যন্ত্রচালিত ঘানি কেনার সামর্থ নেই তাদের। এভাবেই চলছে তাদের জীবন সংসার। 

আমিনুর ইসলামের মা আঙ্গুরি বেগম জানান, বিয়ের পর থেকেই তিনি কাঁধে ঘানি টানার কাজ করছেন। সংসারে অভাব তাই এভাবেই কষ্ট করে দিন পার করছেন। ছেলের কাজে সহযোগিতা করেন তিনি।

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আহসানুল কবির ডালিম বলেন, আধুনিক সভ্যতার এ যুগে মা-ছেলের কাঠের ঘানি টেনে সংসারের বোঝা বইয়ে নেয়া সত্যি অমানবিক। বিত্তবানসহ সামর্থবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন এমন পরিবারের পাশে।

গাবতলীর কাগইল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা জানান, এলাকার মানুষ ও বক্তিগতভাবে সহায়তার পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন তিনি।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর