৬ মে, ২০২৪ ১৭:৫৩

১১ গ্রামের মানুষের ২০০ বছরের ‌‘এগারোগ্রাম বাজার’

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

১১ গ্রামের মানুষের ২০০ বছরের ‌‘এগারোগ্রাম বাজার’

এগারোগ্রাম বাজার। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় অবস্থিত। তবে এগারোগ্রাম নামে কোনো গ্রাম নেই। ১১ গ্রামের মানুষ মিলে বাজার স্থাপন করায় এই নাম দেওয়া হয়েছে। বাজারের বয়স ২০০ বছরের বেশি। 

গত ৫০ বছরে বাজারের ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। ছনের ছানি আর বাঁশের বেড়ার দোকান এখন ৫ তলা ভবন হয়েছে। বাজারে এসেছে ৫টি ব্যাংকের শাখা। এসেছে বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার।

ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সূত্র জানায়, দেবিদ্বার উপজেলার মোগসাইর গ্রামে এগারোগ্রাম বাজারটি গড়ে উঠে। বাজারের পাশেই ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। ১১টি গ্রামের মানুষ বাজারটি গঠন করলেও এখানে আসেন কয়েক উপজেলার ৩৫-৪০ গ্রামের মানুষ। বাজারের ব্যবসায়ীও ৩০-৩৫ গ্রামের। শান্ত ও নিরিবিলি বাজার। কিছু ড্রেনেজ সমস্যা রয়েছে। পুলিশের টহল বাড়লে রাতে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের উৎপাত কমবে। এছাড়া খালে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান করা প্রয়োজন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী বাজার। পূর্ব পশ্চিমে লম্বা বাজার। খালের পাড়ে ও সড়কের পাশে বাজারের নতুন অংশ। গ্রামের মানুষ তার উৎপাদিত ফসল এখানে বিক্রি করেন, প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বাড়ি ফিরেন। গ্রামের নারীরা বাড়ির কাজ শেষ করে বিকালে বা সন্ধ্যায় কাপড় বা কসমেটিকসের দোকানে ভিড় করেন। তরুণরা বিকাল সন্ধ্যায় ভিড় করেন ফুচকা ও ফাস্টফুডের দোকানে। বয়স্করা ভিড় করেন চা দোকানে।

এগারোগ্রামের বাসিন্দা ক্রেতা কাজী কামরুল হাসান সুমন বলেন, এই বাজারে ৩০-৩৫ গ্রামের মানুষের মিলন মেলা বসে। এই এলাকার মানুষের মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এখানে প্রয়োজনীয় সব পণ্য পাওয়া যায়। বাজারের ড্রেনেজ সমস্যা দূরের দাবি জানাচ্ছি।  

বাজারের ব্যবসায়ী মিষ্টি ব্যবসায়ী কবির আহমেদ। তিনি বলেন, তিনি প্রায় ৫০ বছর এখানে ব্যবসা করেন। যখন ব্যবসা করে তখন বাজারে দোকানদার ছিলেন ৭৭ জন, এখন তা বেড়ে সাড়ে তিনশতাধিক। তখন ছনের ছানি আর বাঁশের বেড়ার ঘর ছিল। এখন ৫ তলা ভবন হয়েছে।

বাজারের ভবনের মালিক আবদুল মতিন মাস্টার বলেন, তার বয়স এখন ৭০ বছর। তিনি ১০ বছর থেকে এই বাজারের ব্যবসা করেন। বাজার কবে থেকে প্রতিষ্ঠা তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। তবে তা ২০০ বছরের বেশি হবে। তিনি বাজারের গলি পথে কিছু ব্যবসায়ীর দখল সরানোর আহ্বান জানান।

মোগসাইর এগারোগ্রাম বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, এক সময় ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এই এলাকার মানুষ বাজার করতেন। কখনও কসবার কুটি, কখনও মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ, দেবিদ্বার বা ব্রাহ্মণপাড়ার সদরে। পথের ভোগান্তি কমাতে ১১ গ্রামের মানুষ মিলে এই বাজার গড়ে তোলেন। এখানে শৌচাগার ও পরিচ্ছন্নতার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারেও তারা কাজ করছেন বলে জানান। মসজিদ থেকে পূর্ব দিকে পানি নিষ্কাশনে বড় ড্রেন নির্মাণ করা প্রয়োজন। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিগার সুলতানা বলেন, আমরা উপজেলার বিভিন্ন বাজারের সংকট সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করছি। আগামীতে আমরা এগারোগ্রাম বাজারের সংকট নিরসনেও কাজ করবো। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর