রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২ ০০:০০ টা

মুক্তির অপেক্ষায় আরও ১১ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী

শীর্ষ স্থানীয় সন্ত্রাসী বিকাশ জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর আরও ১১ ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী মুক্তির অপেক্ষায় আছে। তারা ঢাকা ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে বন্দী আছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এদের একেক জনের বিরুদ্ধে কম করে হলেও ১৫ থেকে ২৫টি জামিন অযোগ্য মামলা রয়েছে। তারপরও তারা প্রায় সব মামলায় জামিন পেয়েছে। অনেকেই শুধু এখন একটি করে মামলায় আটক আছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তেজগাঁও এলাকার সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম ১৯টির মধ্যে তিনটি, ১২টি হত্যা মামলার আসামি মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্চি হেলাল একটি, একই বাহিনীর সদস্য মনা একটি, খিলগাঁওয়ের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছেলে আলম হত্যা মামলার আসামি বদরুল পাঁচটি হত্যা মামলার মধ্যে (হারুন হত্যা) একটি, ইলিয়াস পাঁচটি হত্যা মামলার মধ্যে (শিল্পপতি বাবুল হত্যা) একটি, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডির পাভেলুর রহমান রতন ২৭টির মধ্যে একটি অস্ত্র মামলায় জামিন পায়নি। সানজেদুল হাসান ইমনের সেকেন্ড ইন কমান্ড পেশাদার খুনি ধানমন্ডির মামুন। মামুনের বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলাসহ মোট ১৭টি মামলা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি মাত্র চাঁদাবাজির মামলা ছাড়া বাকি ১৬টি মামলায়-ই সে জামিন পেয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অধিকাংশ মামলায় সরকার পক্ষের জোরালো জামিনের বিরোধিতা না করায় আদালত তাকে জামিন দিয়ে দেন। শুধু একটি মাত্র চাঁদাবাজির মামলায় তাকে জামিন দেওয়া হয়নি। আরামবাগের কাইয়ুম, টিটিপাড়া বস্তির বুদ্দিন, চীনারাজা, জেল পলাতক কয়েদি আরজুও ভয়ঙ্কর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পুলিশের খাতায় উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়াও জামিনের অপেক্ষায় আছে মনসুর চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামি মোস্তাক, তেজগাঁও বরুণ হত্যা মামলার আসামি সোবাহান, যাত্রাবাড়ীর সম্রাট দীপু, সূত্রাপুরের ইসাহাক, শামসুল হক, অস্ত্র ব্যবসায়ী মিলন প্রমুখ। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী কারাগারে থেকে অপরাধ জগতের কলকাঠি নাড়ছে। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে তারা কোর্ট পুলিশকে ম্যানেজ করে মোবাইলফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার সুযোগ পেয়ে থাকে। সূত্রমতে, মামুন ও পিচ্চি হেলাল জেল থেকে জামিন পাওয়ার পর জেলগেট কিংবা অন্য কোনো স্থান থেকে পুলিশ যেন আবার সন্দেহমূলকভাবে তাদের গ্রেফতার করতে না পারে সে জন্য তারা জেল থেকে বের হওয়ার আগে উচ্চ আদালত থেকে এ রকম একটি রায় তাদের পক্ষে নিয়ে বের হবে। এর আগেও একাধিকবার পুলিশ মামুনকে গ্রেফতার করেছিল। কিন্তু তাকে বেশি দিন আটক করে রাখা যায়নি। প্রতিবারই জেল থেকে জামিনে বের হয়ে সে নানা রকম অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মামুনকে জোয়ার সাহারার ৮ নম্বর সড়কের ৪৪ নম্বর বাসা থেকে ব্যাগভর্তি কাটারাইফেল ও ৯০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করেছিল। একই সঙ্গে পুলিশ মামুনের অপর সহযোগী সন্ত্রাসী হোয়াইট বাবু ও তার প্রেমিকা তনুজাকে গ্রেফতার করে। অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় মামুন জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে বনানীর ক্লাব ট্রামসের নিচে চলচ্চিত্র অভিনেতা সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে। এ মামলায় গ্রেফতার না হতেই সে তার দলের সহযোগীদের নিয়ে ১৯৯৯ সালের ১৩ মার্চ সন্ত্রাসী যোশেফের আপন ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু ও তার বন্ধু ইমরানকে গুলি করে হত্যা করে। কারা সূত্র জানায়, ১৭টি মামলার আসামি হয়েও মামুনের পায়ে ডাণ্ডা বেড়ি লাগানো হয়নি। অথচ জেলহাজতের নিয়মানুযায়ী তিনটির অধিক মামলার আসামিকে দুর্ধর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তার পায়ে ডাণ্ডা বেড়ি লাগানোর কথা। পেশাদার সন্ত্রাসী মামুনের বিরুদ্ধে নগরীর মোহাম্মদপুর থানায় হিমেল, ফরেন কামাল, ধানমন্ডিতে মোক্তার, মোশাররফ, মোস্তফা, কোতোয়ালিতে মোর্শেদ, গুলশানে চলচ্চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরী এবং বাড্ডায় টিপু-ইমরান জোড়া হত্যা মামলা রয়েছে। সূত্রমতে, মামুনের মতো পিচ্চি হেলালের পায়েও কোনো ডাণ্ডা বেড়ি লাগানো হয়নি। জেলে যাওয়ার পর থেকে সে জেল হাসপাতালে রয়েছে। সহযোগীরা বাইরে থেকে প্রায় প্রতিদিন তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং খাবার দিয়ে আসছে। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ১২ জানুয়ারি বিকাল আনুমানিক পৌনে ৫টায় মোহাম্মদপুর আদাবরের ঢাকা হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ পিচ্চি হেলাল এবং তার দুই সহযোগী মাহবুবুল হক শফিক ও এরশাদকে বিদেশি রিভলবারসহ গ্রেফতার করে। পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় যুবলীগ নেতা ইউনুস, অভিনেতা খলিলের ছেলে বাবু, শ্রমিক নেতা সাবি্বর, ফরেন কামাল, হিমেল, বাবুল, তেজগাঁও থানায় শামীম, মামুন এবং রমনা থানায় আশিক, খোকন, মিরপুরে বাহাউদ্দিন জানু হত্যা মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের একজন ঊধর্্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে একের পর এক সন্ত্রাসীরা কারাগার থেকে বের হয়ে আসছে। তাদের বেশি দিন আটক করে রাখা যাচ্ছে না। উপযুক্ত প্রমাণ এবং সংশ্লিষ্ট সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষী দিতে না আসায় আদালত আসামিদের জামিন দিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ নিরুপায়।

সর্বশেষ খবর