রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

জাতীয় নির্বাচন কবে

আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চার সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভরাডুবিতে আগাম সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। আর নির্বাচন কমিশনও চাচ্ছে বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ দিকেই সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে। তবে নির্বাচনের দিন-তারিখ নির্ধারণে প্রধান দুই দলের রাজনৈতিক সমঝোতার দিকেই তাকিয়ে আছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে ইসি। অক্টোবরের মধ্যে দুই দলের সমঝোতা হলে ৪৫ দিন হাতে রেখে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাথমিক পরিকল্পনা করেছে কমিশন। একই সঙ্গে আগামী অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নিত্যনতুন বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচনের সময় তত্ত¡াবধায়ক না অন্তর্বর্তী সরকারÑ এ প্রশ্নে চলছে রাজনীতিক বির্তক। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হস্তান্তর ও মেয়াদ নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা রয়েছে বলেও মনে করছেন সংবিধানবিশেষজ্ঞরা। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, আগামী ২৪ জানুয়ারির পরে বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। তার আগেই সংসদ নির্বাচন হবে। তবে ইসি সংসদ নির্বাচনের পরে নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর জটিলতা এড়াতেই সরকারের শেষ সময় নির্বাচন করতে চায়।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৬ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যেই নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। অপর এক নির্বাচন কমিশনার বলেন, চার সিটি নির্বাচন আগেভাগেই করে নির্বাচন কমিশন অনেকটাই বিপাকে পড়েছে। কেননা সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন হওয়ায় নতুন নির্বাচিতদের শপথ ও দায়িত্ব হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচন আর আগেভাগে করতে চায় না।  
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচন হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কোনো সরকার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে গিয়ে নির্বাচন করা। তাতে নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতে অপেক্ষা করতে হবে না। 
তবে সংবিধানবিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হস্তান্তর ও মেয়াদ নিয়ে সাংবিধানিক সমস্যা রয়েছে। সংসদ ভেঙে গেলেও প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে পরবর্তী কয়েক বছর বা ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, সংবিধানই তাকে এ ক্ষমতা দিয়েছে। সংবিধানের ৫৭ (৩) অনুচ্ছেদ মতে, ‘প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে (শেখ হাসিনা) স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এ অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই অযোগ্য করিবে না।’ পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বর্তমান সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ মতে- সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে। তবে শর্ত থাকে যে, এই দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ উক্ত দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’
তুহিন মালিক আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে এ ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি একটি বিরল ঘটনা। কেননা এভাবে তিন মাস আগে নির্বাচিত নতুন এমপিরা আগের এমপিদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। অর্থাৎ একই সময়ে একই আসনে দুজন এমপি থাকবেন। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনের সময় এমনকি নির্বাচনের পরেও ডিসি, এসপি, ইউএনওরা এ সরকারের অধীনেই থাকবেন। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরে বর্তমান সরকারের লোকজন দিয়েই নির্বাচন হবে। আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সরকার কৌশলগত কারণে এ নির্বাচন এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করলেও বর্তমানে তা থেকে সরে এসেছে। ইসি সূত্র জানায়, আগামী অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন করার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সরকারি দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় আসনের সীমানায় তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। চলতি বছরের যে কোনো সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের দিনক্ষণ চ‚ড়ান্ত করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনাররা। এর পরই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন।
কমিশন সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য কেন্দ্র, ভোটকক্ষ, কী কী উপকরণ কত সংখ্যক প্রয়োজন এর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে মালামাল সংগ্রহে। তাই নির্বাচনী মালামাল ক্রয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ইউএনডিপির মাধ্যমে বিদেশ থেকে অমোচনীয় কালি আমদানি করা হবে। কাজের প্রস্তুতি চলছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচনের জন্য ইসি সব সময় প্রস্তুত। নব্বই দিনের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান নির্বাচন কমিশন সব সময়ই প্রস্তুত। আগামীতে কোন ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা রাজনৈতিক বিষয় এবং এটা ঠিক করবে জাতীয় সংসদ। সংবিধান অনুযায়ী, ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আমরা অলওয়েজ রেডি।
ইসির নির্বাচন শাখা জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি মাসেই তা চ‚ড়ান্ত হবে। এ ছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ। নির্বাচনের প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয়ে ইউএনডিপির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে ইসি।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জরিপ কাজও চালানো হচ্ছে। প্রশাসনকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তবে প্রধান বিরোধী দল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা কোনো দলের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টি।

সর্বশেষ খবর