শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

মালিকানা দ্বন্দ্বে পাঁচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম অস্থিরতা

মালিকানা দ্বন্দ্বে চরম অস্থিরতা চলছে পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মালিকরা বিভক্ত হয়ে পৃথক ক্যাম্পাস স্থাপন করে চালাচ্ছেন শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছেন না কোন ক্যাম্পাস বৈধ। এ নিয়ে প্রায়ই অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকারের তরফ থেকে কয়েক দফা তাগাদা দেওয়া হলেও মালিকরা তা আমলে নেননি। মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এক পক্ষ ম্যনেজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) অন্য পক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার কারণেই অবৈধ মালিকরা ক্যাম্পাস পরিচালনা করার সাহস পাচ্ছেন বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, শেষ মুহূর্তে হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান যাচাইসহ বৈধতা দেখা হবে। কারা থাকবেন কারা থাকবেন না তা গণমাধ্যমকে স্পষ্ট করে জানানো হবে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয়ে কেউ প্রতারিত হোক তা আমরা চাই না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিকানা দ্বন্দ্ব চলছে, সেগুলো হলো- প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বহুল বিতর্কিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কমপক্ষে পাঁচজন ব্যক্তি নিজেদের প্রকৃত মালিক দাবি করে ক্যাম্পাস স্থাপন করে সনদ বাণিজ্য করছেন। শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে অবৈধ ক্যাম্পাসকে বৈধ বলে তাদের উচ্চশিক্ষার সোনালি স্বপ্ন ভেঙে দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ট্রাস্টি বোর্ড এবং সিন্ডিকেট থাকার কোনো বিধান নেই। কিন্তু দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ দুটি করে ট্রাস্টি বোর্ড এবং সিন্ডিকেট আছে। স্বার্থের দ্বন্দ্বে মালিকরা বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর ১৫ ধারায় উল্লেখ আছে, প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (ট্রাস্টি বোর্ড) থাকবে এবং বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রত্যেকটিতেই দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত বোর্ড অব ট্রাস্টিজ আছে। তারা নিজ নিজ উদ্যোগে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা ও সনদ বাণিজ্য করছেন। অভিযোগ আছে, অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো এক পক্ষকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহায়তা করলে, অপর পক্ষকে সহায়তা করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রকৃত মালিকানা শনাক্তের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ইউজিসি কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা অবৈধ সুবিধা নিয়ে সেই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার সাহস দেন। জানা যায়, ইবাইস ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর ড. জাকারিয়া লিংকন। তিনি ২০০২ সালের ৬ আগস্ট সরকার থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু ২০১১ সালের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি জোরপূর্বক দখলে নেন জাকারিয়া লিংকনের ভাই কাওসার হোসেন কমেট। সর্বশেষ গত ৪ জুন সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ইবাইস ইউনিভার্সিটির সব কার্যক্রম মোহাম্মদপুর, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির প্রধান সড়কের ২৭নং বাড়িতে পরিচালনার রুল নিশি জারি করেন। এতে এখন প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডির ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়বারের মতো উপাচার্য হতে ব্যর্থ হয়ে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী প্রফেসর আনোয়ারা বেগম ২০১১ সালের শেষের দিকে কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে গত বছর ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ধানমন্ডির ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে এবং ক্যাম্পাস দখলের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এরপরই বনানীর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ওই বিরোধ আজও নিষ্পত্তি হয়নি। অন্যদিকে প্রাইম ইউনিভার্সিটি উত্তরা বিএনএস সেন্টারে এবং মোহাম্মদপুরে আলাদা ক্যাম্পাস খুলে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। উচ্চ আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা এবং ইউজিসি থেকে গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে সতর্ক করা হলেও কোনো পক্ষই তা মানছেন না। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সিএম শফি সামী বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা দ্বন্দ্ব সমিতি নিরসন করতে পারে না। কোনো প্রতিষ্ঠানে দ্বন্দ্ব থাকলে কিংবা আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চললে সেটা সরকারই নিরসন করতে পারে।

সর্বশেষ খবর