সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

\\\'সাকার নেতৃত্বে টার্গেট করে হিন্দুদের হত্যা করা হয়\\\'

\\\'সাকার নেতৃত্বে টার্গেট করে হিন্দুদের হত্যা করা হয়\\\'

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরু করেছে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। গতকাল বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ। পরে এ মামলার কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

মতিলাল চৌধুরীসহ সাতজনকে অপহরণ, গুডস হিলে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগের সাক্ষী দেবব্রত বিশ্বাসের সাক্ষ্য শুনানিতে উদ্ধৃত করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ। শুনানিতে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, ১৯৭১ সালে সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে টার্গেট করে হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে। ১৩ এপ্রিল এক হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ করার পর যেসব লোক পাশের মুসলমান বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল, তারা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় টুপি মাথায় দিয়ে মুসলমান সেজে পালাতে হয়েছে। তারা হিন্দু পরিচয়ে যেতে পারেনি। শুধু প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে তারা এই পরিচয় দিয়েছেন।

প্রসিকিউটর বলেন, ১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা গহিরা ও মধ্যগহিরায় গিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের হত্যা করা হয়। যদিও পাশর্্ববর্তী মুসলিম বাড়িগুলোতে কোনো আক্রমণ চালানো হয়নি। ওই সব এলাকায় শুধু হিন্দু বাড়িই ছিল না আশপাশে অনেক মুসলমান বাড়ি ছিল, কিন্তু তাদের উপর কোনো ধরনের টর্চার করা হয়নি। একাত্তরে ওই এলাকায় 'হিন্দু পরিচয়টাই তাদের অপরাধ ছিল' উল্লেখ করে প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ বলেন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সাকা চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী কনভেনশন মুসলিম লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নির্বাচনে ফজলুল কাদের চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পরবর্তীতে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। কারণ, এ নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের একটি বড় অংশ ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এসব হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তাই এটি গণহত্যা। নূতন চন্দ্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযোগে প্রসিকিউশনের ছয়জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরার বিভিন্ন অংশ উদ্ধৃত করেন প্রসিকিউটর। এর আগে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলাম সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ করে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক গ্রহণের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের আদেশ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানান। একই সঙ্গে আসামি পক্ষের পঞ্চম সাক্ষী হিসেবে বিচারপতি শামীম হাসনাইনের সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন জানানো হয়। এ বিষয়ে আজ আদেশ দেওয়া হবে।

মোবারকের বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ ১২ আগস্ট

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ১২ আগস্ট প্রসিকিউশনের সপ্তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও অন্য মামলার কার্যক্রম থাকায় তারিখ পুনর্নির্ধারণ ট্রাইব্যুনাল-১।

এবার সাকার ভাই গিকা চৌধুরীকে গ্রেফতারের দাবি জানাল আওয়ামী লীগ : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন_ তাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।

গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. জসিম।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে গিকা চৌধুরী যেসব বক্তব্য ও তথ্য উপস্থাপন করেছেন, সেসবের প্রমাণ দিতে হবে। অন্যথায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা-পূর্বক এসব বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের সহযোগী হিসেবে মুক্তিকামী মানুষ ও নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে রেহাই পাচ্ছেন না জেনে জ্ঞানশূন্য হয়ে অসংলগ্ন কথা বলছেন গিকা চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাসের সঙ্গে সাকা ও গিকা চৌধুরীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, সহ-সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বেদারুল আলম চৌধুরী, ছাত্রলীগ সভাপতি বখতেয়ার সাঈদ ইরানি ও সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব। প্রসঙ্গত, গত শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও জলবায়ু তহবিলের অর্থ আত্দসাতের অভিযোগ করেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।

 

 

সর্বশেষ খবর