রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৩ ০০:০০ টা

সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক এমপি আওরঙ্গসহ নিহত ৬

সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক এমপি আওরঙ্গসহ নিহত ৬

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে পাজেরো জিপের মুখোমুখি সংঘর্ষে সাবেক এমপি ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গসহ ছয়জন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-মাওয়া মহসড়কে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের খানবাড়ি নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত অন্যরা হলেন- বিএনপি নেতা রতন তালুকদার (৪৪), জামাল উদ্দিন মুন্সী (৫০), মো. ইয়াছিন (৪৫) ও এসএম নুরুজ্জামান (৪৫)। অপর একজনের পরিচয় জানা যায়নি। সাবেক এমপি হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের মৃত্যুতে শরীয়তপুরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দলমত নির্বিশেষে সবাই তার মৃত্যুতে গভীর শোকাহত।

জানা যায়, নিহতরা সবাই সাবেক এমপির গাড়ির যাত্রী। অপর আহতরা গাংচিল পরিবহনের যাত্রী। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নিহত পাঁচজনের লাশ শ্রীনগর থানায় রাখা হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিহতদের পরিবারের কাছে শ্রীনগরের পাঁচটি লাশ হস্তান্তর করেছে স্থানীয় পুলিশ। এমপি আওরঙ্গের লাশ তার স্ত্রী ঢাকায় নিয়ে যান। আজ সকাল ১১টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জানাজা শেষে মরহুমের লাশ তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের উদ্দেশে নেওয়ার কথা রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, যাকাত দেওয়ার উদ্দেশে ঢাকা থেকে পাজেরো জিপে শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক এমপি হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গসহ সাতজন শরীয়তপুর যাওয়ার পথে মাওয়া ঘাটের কাছে খানবাড়ি নামক স্থানে এলে জিপটির চাকা ফেটে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তা ডান পাশে চলে যায়। এ সময় মাওয়া ঘাট থেকে আসা গাংচিল পরিবহনের বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটলে ঘটনাস্থলেই এমপি আওরঙ্গসহ পাজেরোর চারজন নিহত হন। পাজেরোর অপর তিন যাত্রীকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে পথিমধ্যে এস এম নুরুজ্জামান (৪৫) মারা যায়। তার লাশ ষোলঘর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সাবেক এমপি যাকাত দেওয়ার উদ্দেশে শরীয়তপুর যাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী মাওয়া ঘাট এলাকার হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, দুর্ঘটনাস্থলেই এমপি হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গসহ চারজন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী অপর সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনা কবলিত পাজেরো গাড়িতে বস্তাবন্দী বেশ কিছু টাকা ছিল। দুর্ঘটনার পরপরই ওই টাকার কিছু অংশ সুযোগ সন্ধানীরা লুটে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বেশ কিছু টাকা স্থানীয় জনতা উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

লৌহজং থানার ওসি জাকিউর রহমান জানান, মাওয়াগামী জিপের সামনের বাম পাশের চাকা ফেটে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাম পাশ থেকে ডান পাশে চলে গেলে গাংচিলের বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। এতে জিপটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এদিকে দুর্ঘটনার পর বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিল। পরে রেকার দিয়ে গাড়িটি সরানোর পর মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। পুলিশ ঘাতক বাসটি আটক করেছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেএম হেমায়েতউল্লাহ (আওরঙ্গজেব) ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ২০০৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ আসনে প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এক সময়ের যুবলীগ নেতা আওরঙ্গের নাম '৮০-এর দশকের পুরোটা সময়ই ছিল আলোচিত। বর্তমানে রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্ক্রীয় ছিলেন। ঢাকার কাঁঠালবাগানের বাসভবনে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন তিনি। এদিকে মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রব মুন্সী বলেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার নাসির উদ্দিন কালু বলেন, তিনি ছিলেন একজন সাহসী যোদ্ধা। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন বিদ্যুৎ বলেন, তার মৃত্যুতে তিনদিনের শোক ঘোষণা করা হবে। তার মৃত্যুতে পুরো জাতি শোকাহত। হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গের চাচাতো ভাই দুলু বলেন, এলাকার মানুষের পাশে থেকে তিনি রাজনীতি করেছেন। আমরা এতিম হয়ে গেলাম। ডামুড্যা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাদু সরকার বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল আওরঙ্গ এমপি হবে, মন্ত্রী হবেন এবং এলাকার সার্বিক উন্নতি করবেন। আমাদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।

খালেদা জিয়ার শোক : কেএম হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, আওরঙ্গসহ বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মৃত্যুতে জাতীয় রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি মরহুম নেতাদের রুহের মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের গভীর সমবেদনা জানান। এ ছাড়াও শোক প্রকাশ করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু।

 

 

সর্বশেষ খবর