রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৩ ০০:০০ টা

আবারও সেরা রাজউক

ব্রি. জেনারেল ইমামুল হুদা

আবারও সেরা রাজউক

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে পরপর তিনবার দেশের শীর্ষস্থান অধিকার করা রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইমামুল হুদা বলেছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এ সাফল্যের নেপথ্যে কাজ করেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মেধা আর শ্রম, শিক্ষকদের ত্যাগ এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানের প্রতি যত্নশীল হওয়ার কারণেই এ আশাতীত ভালো ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গতকাল পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সঙ্গে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। কলেজের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধান সম্পর্কে তিনি বলেন, ভালো ফলাফল করার জন্য আমাদের আলাদা টিম ওয়ার্ক সারা বছর সক্রিয় থাকে। তাছাড়া শিক্ষকদের একটি বোর্ড ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। কলেজ প্রশাসনের উদারতা এবং শিক্ষকদের গাইড লাইন সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শীর্ষ মেধাবীরা ভর্তি হয়। ভর্তি হওয়ার পর গরিব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, বিনা মূল্যে হোস্টেল সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে, সব শ্রেণীর-পেশার মানুষের সন্তান এখানে পড়ালেখার সুযোগ পায়। এখানে রিকশা চালকের ছেলে যেমন পড়া লেখা করে তেমনি শীর্ষ ধনীর সন্তানও পড়া লেখা করে। অর্থাৎ এখানে পড়তে আর্থিক অবস্থা নয় মেধাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।

গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের মোট ১ হাজার ২১৭ জনের মধ্যে ১ হাজার ১২৭ জন শিক্ষার্র্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে বাংলা মাধ্যমে (প্রভাতী ও দিবা) বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬৩১ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৬২৩ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৫৫ জনের মধ্যে ৩৩২ জন, মানবিক বিভাগে ১১০ জনের মধ্যে ৫৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমে বিজ্ঞান বিভাগে ৮৮ জনের মধ্যে ৮৬ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৩ জনের মধ্যে ২৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে ২০১১ সালে ৮৯১ জন, ২০১২ সালে ১১০৬ জন এবং সর্বশেষ গতকাল প্রকাশিত ২০১৩ সালের ফলাফলে ১১২৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

গতকাল সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে ফলপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের উৎসবমুখর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সময় যত গড়ায় তাদের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে। দুপুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুঠোফোনে ফল দেখে হঠাৎ একেক জনকে আনন্দে লাফিয়ে উঠতে দেখা যায়। অবশেষে আসে ফলাফলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইমামুল হুদা পুনরায় সেরাদের সেরা হওয়ার এ ঘোষণা দেন। এরপর থেকে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে শিক্ষার্থীদের আনন্দ উচ্ছ্বাস যেন থামছেই না।

অসাধারণ অর্জনের আনন্দঘন অভিব্যক্তি প্রকাশ করে কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ইমামুল হুদা আরও বলেন, ফলাফলে আমরা এবারও শীর্ষস্থান লাভ করেছি। এ সফলতার পিছনে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মেধা আর পরিশ্রম, শিক্ষকদের ত্যাগ এবং অভিভাবকদের যত্নশীলতা। এরপর শুরু হয় ডাকডোল নিয়ে শিক্ষার্থীদের এ উৎসবের মুহূর্তকে চিরস্মরণীয় করে রাখার পালা। ঢোলের তালে তালে কেউ গ্যাংনাম স্টাইলে আর কেউবা গোল করে নেচে গেয়ে উপভোগ করে তাদের এ অর্জন। হঠাৎ এক পসলা বৃষ্টি আর হঠাৎ প্রখর রোদ। কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তারুণ্যের এ উল্লাসকে। কথা হয় নুসরাত জাহান নামের এক ছাত্রীর সঙ্গে। তিনি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তিনি বলেন, কলেজ প্রথম হয়েছে, আমিও জিপিএ-৫ পেয়েছি। সবমিলিয়ে খুবই ভালো লাগছে। কলেজ ভবনের সামনে দেখা যায় এক শিক্ষার্থীকে খালি পায়ে হাঁটতে। জিপিএ-৫ অর্জনকারী আশিকুজ্জামান নামের এ ছাত্র বলেন, আমরা দেশসেরা হওয়ার হ্যাটট্রিক করেছি। এ সফলতা আমাদের বাবা-মা এবং শিক্ষকদের উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম। আনন্দ উল্লাসে পিছিয়ে নেই অভিভাবকরাও। তাদের অনেককে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে অংশ নিতে দেখা যায়। এমনই এক অভিভাবক আবদুর রউফ। মেয়ে রুবাইয়া রউফ জিপিএ-৫ পাওয়ায় এই অভিভাবকও খুশিতে হাত-পা দুলিয়ে নাচছিলেন । তিনি বলেন, এ অর্জনে আমি আনন্দে উদ্বেলিত।

 

 

সর্বশেষ খবর