শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩ ০০:০০ টা

আমি বিএনপিতেই আছি : নাজমুল হুদা

আমি বিএনপিতেই আছি : নাজমুল হুদা

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেছেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপিতে ছিলাম, এখনো আছি ভবিষ্যতেও থাকব। বিএনপিই আমার শেষ ঠিকানা। দেশের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপে ডাকতে আমি ম্যাডামকে (বেগম খালেদা জিয়া) আহ্বান জানিয়েছিলাম। দেরিতে হলেও তিনি সেই আহ্বান জানিয়েছেন। তাই চেয়ারপারসনকে দেওয়া পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি। এখন দেখা হলে বলব- ম্যাডাম বক্তব্য যা দেওয়ার দিয়েছি। বিএনপি বা আপনাকে নিয়ে আর কোনো বিব্রতকর বক্তব্য দেব না। নাজমুল হুদা তার ধানমন্ডির বাসায় গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনে দোহার-নবাবগঞ্জ থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে রেকর্ড পরিমাণ ভোটে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশাও করেন বিএনপির সাবেক এ ভাইস চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের (বিএনএফ) সমালোচনা করে তিনি বলেন, যখন আমার কাছে মনে হয়েছে বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটি গঠন করা হয়েছে তখনই সরে আসি। মনে হয়েছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে দলের একটি অংশকে নিয়ে নির্বাচনের বৈধতা দিতেই বিএনএফ গঠন করা হয়েছে। যখন বিএনএফের নেতারা দেখলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় নেতা-কর্মী সমর্থক সবাই বিএনপির স্লোগান দিচ্ছে বিশেষ করে শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে। তখন আমাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও আমি এর আহ্বায়ক ছিলাম। বিএনপির এক কর্মসূচির সমালোচনা করে নাজমুল হুদা তোপের মুখে পড়েন। দলীয় অবস্থানের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখায় খালেদা জিয়া ২০১০ সালের ২১ নভেম্বর নাজমুল হুদাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। এর ছয় মাস পর 'অনুতপ্ত' নাজমুল হুদা বিএনপিতে ফেরার আবেদন জানালে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল তার প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরিয়ে দেন বেগম জিয়া। কিন্তু সংলাপ নিয়ে তার পরামর্শ খালেদা জিয়া আমলে না নেওয়ায় এক বছরের মাথায় আবারও পদত্যাগের ঘোষণা দেন। বিএনপি ছাড়ার পর গত বছর শেষভাগে বিএনএফ নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। কিছুদিন পর বিএনএফ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।

সংবিধান সমুন্নত রেখেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব দাবি করে নাজমুল হুদা বলেন, চুল পরিমাণ না নড়েও বর্তমান সংবিধানকে সমুন্নত রেখে একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়ে নাজমুল হুদা নিজের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তার প্রস্তাবনায় রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠিত করতে এবং সেই লক্ষ্যে জাতির স্বার্থে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদান করবেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর এ পরামর্শ অনুযায়ী দুই নেত্রীর সম্মতিক্রমে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অপর চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ৫৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার নির্বাহী ক্ষমতা নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে ন্যস্ত করবেন। প্রধানমন্ত্রী অনুচ্ছেদ ৭২(১) এর দ্বিতীয় শর্ত মোতাবেক রাষ্ট্রপতিকে অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেবেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সংসদ ভেঙে দেবেন। সংসদ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের ৫৭(১) (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে। সংসদ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের ৫৮(১) (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মন্ত্রীদের পদ শূন্য হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশ দেবেন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ-বদলিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর সব দায়িত্ব এবং ক্ষমতা নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাহ করবেন। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সরকারের রুটিন কাজসমূহ সম্পাদন করবেন। সংবিধানের ১২৩(৩) (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কমিশন সংসদ ভেঙে যাওয়ার তারিখ হতে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করবেন এবং নির্বাচিত সংসদের প্রথম অধিবেশনে স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হবে। নাজমুল হুদা বলেন, দুই নেত্রীর নেতৃত্বে দুই জোটের এ বিষয়ে সংলাপ এখন সময়ের দাবি। জাতির প্রত্যাশা সংলাপই দেশকে এক অবশ্যম্ভাবী দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। নিশ্চিত করতে পারে নির্বাচনকালীন শান্তিপূর্ণ সোহার্দপূর্ণ পরিবেশের। এখন প্রয়োজন সদিচ্ছার।

 

 

সর্বশেষ খবর