শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

অনেক এমপি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন

খায়রুজ্জামান লিটন

অনেক এমপি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন

রাজশাহীতে গত নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছিলেন তারা সবাই অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এটা স্বীকার করতেই হয় যে কয়েকজন এমপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। অনেকে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাই সার্বিকভাবে বলতে গেলে আমরা যে বিপুল ভোটে ছয়টি আসনে জয়ী হয়েছিলাম, এবার হয়তো তেমনটি হবে না। আশাও করছি না। মোটামুটি তিন-চারটি আসন টার্গেট করে এগোচ্ছি। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লিটন বলেন, 'অনেক এমপি এলাকায় সময় দেননি। বিশেষ করে প্রবীণ ভোটার ও সমর্থকদের খোঁজখবর রাখেননি। অনেক সময় নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। তবে নির্বাচন ঘিরে এমপিরা তাদের ভুল শুধরানোর পাশাপাশি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কে কতটুকু সফল হতে পারবেন, তা তাদের দক্ষতা-যোগ্যতা এবং মানুষের বোঝার ক্ষমতার ওপরই নির্ভর করবে। তবে অনেকে এখনো গুছিয়ে নিতে পারেননি। কিছু ভুলের কারণে, এই অল্প সময়ে তাদের জন্য গুছিয়ে ওঠা বেশ কঠিন হবে।' রাজশাহীর কয়েকটি আসনে একাধিক প্রার্থী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই, তা বলব না। তবে নিয়ম অনুযায়ী একজনই তো মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ পাবেন।' শোনা যাচ্ছে, সদর আসনে নির্বাচন করার জন্যই আপনি দলের জন্য এত খাটছেন; লিটন বলেন, 'এত ঘন ঘন নির্বাচন করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই।'

নগরীতে যথেষ্ট উন্নয়ন করা সত্ত্বেও ১৫ জুন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত খায়রুজ্জামান লিটন। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় ইস্যুটি অন্যতম কারণ ছিল বলে তিনি মনে করেন। সাবেক এই নগরপিতা বলেন, 'হেফাজতে ইসলামের সরাসরি মাঠে নামা ও দলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ধর্মীয় অপপ্রচার কাল হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা এ বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠক করছি। বিশেষ করে নারী ভোটারদের এসব অপপ্রচার থেকে দূরে রাখতে দলের নারী কর্মীদের কাজে লাগাচ্ছি।' লিটন বলেন, 'সম্প্রতি হেফাজত চট্টগ্রামসহ সারা দেশে যে ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাতে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ বুঝে গেছে, এটা কী ধরনের সংগঠন। সিটি নির্বাচনেও যে তাদের সব প্রচার মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, তা মানুষ টের পেয়েছে। তবে জামায়াত-শিবির-বিএনপি যেখানে আছে, সেখানে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে অপপ্রচার হতেই পারে। এ কারণে তাদের অপপ্রচার রুখতে খুব দ্রুত জেলা কমিটি থেকে শুরু করে ওয়ার্ড বা মহল্লা পর্যন্ত শক্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

নতুন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের শুরুটা কেমন দেখছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এত অল্প সময়ে মূল্যায়ন করা কঠিন। সিটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর গ্যাস এবং দু-একটি ছোটখাটো বিষয় ছাড়া তার বিরুদ্ধে বলার মতো তেমন কিছু দেখিনি। তবে তিনি তার দল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। বুলবুল নিজে যুবদলের নেতা হয়েও এই সংগঠনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারছেন না। এতে নগরীর শান্তিপূর্ণ অবস্থা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে।' নগরীর সাবেক অভিভাবক হিসেবে নতুন মেয়রের প্রতি পরামর্শ প্রসঙ্গে বলেন, 'বড় ভাই হিসেবে আমি তাকে অনেক ধরনের পরামর্শই এরই মধ্যে দিয়েছি। সহযোগিতার চেষ্টাও করছি। প্রায় আড়াই শর মতো মসজিদের জন্য সাড়ে ১২ কোটি টাকা এবং শহীদ কামরুজ্জামান স্মৃতিস্তম্ভ ও কেন্দ্রীয় উদ্যানের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকার একটি অতিরিক্ত বরাদ্দ আনতে হবে। যা তার পক্ষে একেবারেই দুষ্কর। এ ব্যাপারে তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন। আমি নিজেও দায়িত্ব মনে করে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। শীঘ্রই এটি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।' সাবেক এই মেয়রের স্বপ্ন ছিল একটি আইটি পার্ক নির্মাণের। এ কাজেও তিনি বুলবুলকে সহযোগিতা করছেন বলে জানান।

লিটনের সহধর্মিণী সমাজসেবী শাহিন আক্তার রেণী জানান, নির্বাচনে পরাজয়ের পর সাবেক মেয়র অভ্যাসবশত অনেক ভুল করে ফেলতেন। কখনো গভীর রাতে হাতের কাছে ওয়াকিটকি খুঁজতেন। আবার কখনো প্রধান সড়কে বাতি বন্ধ দেখলে নগর ভবনে সংশ্লিষ্টদের ফোন দিয়ে ফেলতেন। এখন কোনো অসংগতি দেখলে কী করেন- জানতে চাইলে লিটন বলেন, 'এখন আর কিছুই করার নেই। শুধু কষ্ট লাগে যখন দেখি, রাত্রিকালীন আলোকসজ্জার যে সৌন্দর্য আমি দিয়েছিলাম, যা বাংলাদেশের মধ্যে অনন্য, তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে যত্রতত্র বিলবোর্ড, পোস্টার আর ব্যানারে পুরো নগরী ছেয়ে যাচ্ছে। শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে যা আমি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতাম।'

 

 

সর্বশেষ খবর