বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা
১৮ দলীয় জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

সোমবার থেকে ফের ৬০ ঘণ্টার হরতাল

সোমবার থেকে ফের ৬০ ঘণ্টার হরতাল

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আগামী সোমবার থেকে টানা তিন দিন হরতালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। গতকাল রাতে ১৮ দলীয় জোটের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মসূচিতে পরিবর্তনও আসতে পারে।
জানা গেছে, আগামীকাল বিকালে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বৈঠক শেষে জোটের একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। জোটের এক শীর্ষনেতা জানান, বৈঠকে শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, সোমবার থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬০ ঘণ্টার হরতাল ও ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সারা দেশে আলোচনা সভা, জিয়াউর রহমানের মাজারে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি নেওয়া হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে যে কোনো সময় কর্মসূচি পরিবর্তনের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ১৮ দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়া জোট নেতাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকারের অধীনে ১৮ দল নির্বাচনে যাবে না। আর প্রধানমন্ত্রী যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমন্ত্রণ জানান, সেক্ষেত্রে নির্দলীয় সরকারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা দিলেই কেবল তার (প্রধানমন্ত্রী) ডাকে সাড়া দেওয়া হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে একচুলও নড়া হবে না বলে জোট নেতাদের জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য আবদুল হালিম, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, খেলাফত মজলিস সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা, বাংলাদেশ ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গাণি, ইসলামিক পার্টির এম এ মবিন, ন্যাপ ভাসানীর শেখ আনোয়ারুল হক, মুসলিম লীগের কামরুজ্জামান খসরু, জমিয়তে ওলামা ইসলামের মুফতি মো. ওয়াক্কাস, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি প্রমুখ। এদিকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ থেকে আর এক পাও পিছু হটতে রাজি নন। মঙ্গলবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক শেষে তিনি কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে এ মনোভাব ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। ১০ নভেম্বর থেকে টানা পাঁচ দিনের হরতালের পরিকল্পনা রয়েছে। এতেও কাজ না হলে পরের সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে অবরোধ ও অসহযোগের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। বিরোধীদলীয় নেতা এসব কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া ২৭, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর তিন দিনের হরতালে দলের নেতাদের পারফরমেন্স পর্যালোচনা করেছেন। তিনি এতে মহানগরীর নেতাদের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ। সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন মহানগরীকে চার ভাগ করে চারজন সিনিয়র নেতার নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেছেন। এরা হলেন মির্জা আব্বাস, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও সাদেক হোসেন খোকা। দীর্ঘদিন ধরে যারা বঞ্চিত ও অবহেলিত সে ধরনের সহস্রাধিক তৃণমূল নেতাকে সংগ্রাম কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এদের মূল্যায়নের বিষয়টি বেগম খালেদা জিয়া নিজেই তদারকি করবেন। অবশ্য এ জন্য দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থাকা মধ্যস্বত্বভোগী ধরনের কিছু নেতা কিছুটা নাখোশ। তারা আন্দোলনের চেয়ে সরকারের সঙ্গে আপসকামিতার উপরে বেশি জোর দিচ্ছেন। কোনো শর্ত ছাড়াই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা তাকে পরামর্শ দেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী নব্বইয়ের আন্দোলনের মতো এবারও কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছেন। তিনি পরিষ্কার ভাষায় একাধিক সিনিয়র নেতাকে বলেছেন, জনগণের ওপর কোনো শক্তি নেই। সেই জনগণই এই সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বেগম জিয়া প্রশ্ন রেখে বলেছেন, সারা দেশে যেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রাস্তায় নেমে পড়েছে এবং নিজেদের জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিচ্ছে, সেখানে আন্দোলনের মূল জায়গা ঢাকা নীরব কেন? বিশেষ করে জনগণকে মাঠে নামতে উসকে দিয়ে নিজেরাই হাওয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনার কথা তিনি উল্লেখ করেন। এসব নেতা এখন খালেদা জিয়ার 'ক্লোজ মনিটরিংয়ে' আছেন। এক মাসের মধ্যে ওভারকাম করতে না পারলে তারা দল থেকে ছিটকে পড়বেন বলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।
১৮ দলের বিক্ষোভ আজ : টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকাল ৩টায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) 
১৩ দফা শর্তসাপেক্ষে এ অনুমতি দেয়। ঢাকা মহানগর ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোটের নেতারা বক্তব্য রাখবেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সমাবেশে পুলিশের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে সারা দেশের সব জেলা, উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হবে। মঙ্গলবার হরতাল পালন শেষে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল। এ ছাড়া আগামীকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর