বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

নির্বাচন সম্পর্কে জানতে চান দাতারা

নির্বাচনের আগে উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। লোকাল কনসালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি) এ বৈঠকটি ৪ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ ও জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, এলসিজি গ্রুপের কো-চেয়ার নেল ওয়াকার যৌথভাবে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।

দাতাদের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠকে সাধারণত উন্নয়ন সহায়তার সদ্ব্যবহার, সুশাসন, দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থিক খাতের সংস্কার, দুর্নীতি দমন, বেসরকারি খাত উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হলেও এবারের বৈঠকটি গুরুত্ব পাচ্ছে ভিন্ন কারণে। বৈঠকে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের অবস্থান কী হবে সে ব্যাপারে দাতা সংস্থাগুলোর প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, তারা জানতে চাইলে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে। সরকার তো অবস্থান পরিষ্কার করে রেখেছে। সংবিধান ও আইন অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। পরিকল্পনা কমিশন সদস্য প্রফেসর শামসুল আলম বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে দাতাদের অজানা কিছু নেই। তারা হয়তো জানতে চাইতে পারে সংকটকালীন সরকারের কৌশল কী হতে পারে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, এলসিজির সঙ্গে সরকারের এটি তৃতীয় বৈঠক। এর আগে জানুয়ারিতে ও জুনে বৈঠক হয়। এবারের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী অংশ নেবেন। জানা গেছে, শুধু নির্বাচন নয়, প্রতিশ্রুতি দিয়েও দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আইন পাস না করায় সরকার জবাবদিহিতার মুখে পড়তে পারে। দাতারা সরকারের উন্নয়নে আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো দিয়েছিল দুদককে শক্তিশালী করার বিষয়টি ছিল প্রথম দিকে। অথচ মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে গেলেও দুদক শক্তিশালী করার আইনটি পাস হয়নি। উপরন্তু চলতি অধিবেশনে আইনটি উপস্থাপন করেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, দুদক আইন করার সময় এখনো আছে। ৪ নভেম্বর আইনটি আবারও সংসদে উপস্থাপন হতে পারে।

এদিকে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর 'বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম' শিরোনামে ২০১০ সালে উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঢাকায় বড় আকারের বৈঠক হয়। সেখানে দুদক, সংসদীয় কমিটি এবং বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করে সরকার। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উন্নয়ন ফোরামের ওই বৈঠকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, আইএমএফ, ডিএফআইডি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফর সাউথ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, সিডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, জাপান, কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সহকারী মিশন পরিচালকসহ ৩০টি উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। বৈঠকে রূপকল্প-২০২১, দ্বিতীয় সংশোধিত দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতসহ দাতাদের সামনে সরকারের উন্নয়ন কৌশল তুলে ধরা হয়। কথা ছিল সরকারের উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নে দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে প্রতি বছর বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে, যাতে উন্নয়ন সহযোগীরাও তাদের দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগের পর্যালোচনা করতে পারে। তবে পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন সৃষ্টি হওয়ায় উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকটি আর হয়নি। এ অবস্থায় স্থানীয় পরামর্শক গ্রুপ এলসিজির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা করেছে সরকার।

সর্বশেষ খবর