বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

যমুনার বর্জ্যে নারদ নদের সর্বনাশ মানববন্ধন ক্ষোভ

যমুনার বর্জ্যে নারদ নদের সর্বনাশ মানববন্ধন ক্ষোভ

নাটোরের যমুনা ডিস্ট্রিলারিজ কোম্পানির দূষিত ও বিষাক্ত বর্জ্য শোধন না করে ঐতিহ্যবাহী নারদ নদে ফেলার প্রতিবাদে ও জনজীবন রক্ষার দাবিতে এবং যমুনার বিষাক্ত স্পিরিট পানে দেশের ১০টি জেলায় মাদক ট্র্যাজেডির শিকার হয়ে ৬০০ মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত দেশের বিতর্কিত শিল্পপতি ও গডফাদার নুরুল ইসলাম বাবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে 'নারদ বাঁচাও আন্দোলনের' ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে স্থানীয় সচেতন মানুষ। গতকাল দুপুরে নাটোর শহরের হগোলবাড়িয়া ব্রিজে নারদ নদের দুই পাড়ের অসংখ্য মানুষ কর্মসূচিতে অংশ নেন। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল শহরের তেবাড়িয়া হাটে নারদ বাঁচাও আন্দোলনের ব্যানারে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে। কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করলে প্রতিবাদী মানুষকে বিতর্কিত শিল্পপতি নুরুল ইসলাম বাবুলের ভাড়াটে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী এবং জনবিচ্ছিন্ন কিছু রাজনীতিবিদ প্রোগ্রাম বানচাল করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা আয়োজকদের পাশাপাশি নারদ নদের পাড়ে বসবাসরত মানুষকে হুমকি-ধমকি এবং দেখে নেওয়া হবে বলে শাসানো শুরু করে। হুমকি-উপেক্ষা করে সোমবার সকাল থেকেই নারদ নদ সংলগ্ন তেবাড়িয়া হাটে সমবেত হতে থাকে নারদ নদের দূষিত ও বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা প্রতিবাদী মানুষকে হুমকি-ধমকি দিয়ে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় যমুনার ভাড়া করা পেটুয়া বাহিনীর হুমকি উপেক্ষা করে তেবাড়িয়া হাট থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নারদ নদের হুগোলবাড়িয়া ব্রিজে মানববন্ধন করে। মানববন্ধন চলাকালে নারদ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবী মঞ্জুরুল মোর্শেদ লুলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন আবদুল কাইয়ুম, আলহাজ আবু হানিফ মামুন, মাওলানা জুলফিকার আলী, ইয়াছিন খান, আবুল হোসেন, সিঙ্গাপুর প্রবাসী জানে আলম শাহীন, মাসুদ রানা মাসুম। বক্তারা বলেন, নাটোরের ঐতিহ্যবাহী নারদ নদ দূষণের কারণে শহরবাসী আজ বুকভরে নিঃশ্বাসও নিতে পারে না। দূষিত বর্জ্যের উদ্ভট গন্ধে মানুষের জীবন আজ ওষ্ঠাগত। দিনে মশা রাতে মাছি এই নিয়ে আছি নাটোরবাসী। নারদ নদের পানিতে যমুনা ডিস্ট্রিলারিজের দূষিত ও বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে নাটোরে অবস্থিত নাটোর চিনিকল আখের উচ্ছিষ্ট অংশ ও চিটাগুড় পানিতে ফেলে এবং প্রাণ কোম্পানি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে বর্জ্য শোধন করে নদীতে ফেলে- যা মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় কিন্তু যমুনা ডিস্ট্রিলারিজ কোম্পানির অতিমাত্রায় ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলার ফলে প্রতিবছর শুধু টিন বা গ্রিলই পাল্টাতে হচ্ছে না, মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে দুরারোগ্য ব্যাধি। এই দূষণের প্রতিবাদে ইতিপূর্বে অনেক বার আন্দোলন গড়ে উঠলেও টাকার কাছে অনেকেই বিক্রি হয়ে গেছে। তাই আর কোনো আপস নয়, জীবন বাঁচাতে যমুনা ডিস্ট্রিলারির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ৬০০ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত বাবুলের জিম্মিদশা থেকে নারদ নদের ৪০ কি. মি. এলাকায় বসবাসরত লাখ লাখ মানুষকে বাঁচাতে আন্দোলন চলছে এবং চলবে। বক্তারা আরও বলেন, যমুনা ডিস্ট্রিলারিজ কোম্পানির অতিমাত্রায় ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলার ফলে বছরের পর বছর আমাদের শুধু টিন বা গ্রিলই পাল্টাতে হচ্ছে না, চুলকানি, ঘা, পাঁচড়া, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ব্যাধি। যমুনা ডিস্ট্রিলারিজ লিমিটেড কারখানার দূষণ সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। নারদ নদের দুই পাড়ে ৪০ কিলোমিটারে বসবাসরত কয়েক লাখ মানুষ কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছে এই কোম্পানির কাছে। বছরের পর বছর মুখ বুজেই সইতে হচ্ছে মারাত্দক ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রভাব। সরকার যায়, সরকার আসে কিন্তু এই নাটোরবাসী যমুনার বর্জ্য দূষণ থেকে রক্ষা পায় না। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা মুনাফা করার পরও বর্জ্য শোধনের কোনো ব্যবস্থা করে না বিতর্কিত শিল্পপতি নুরুল ইসলাম বাবুলের মালিকানাধীন কোম্পানিটি। নাটোরবাসীর প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। নিজেদের লাভ ছাড়া তারা নাটোরবাসীর মানবিক বিপর্যয় বা ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে চিন্তিত নয়। দূষণের প্রতিবাদে ইতিপূর্বে অনেক বার আন্দোলন গড়ে উঠলেও টাকার কাছে অনেকেই বিক্রি হয়ে গেছে। অনেকে আবার প্রভাবশালী মহলের ভয়ে আন্দোলনে শুরুতে এসেও থমকে গেছে। তাই আর কোনো আপস নয়, জীবন বাঁচাতে আমাদের নারদ নদকে বাঁচাতে হবে। নারদ বাঁচলে আমরা বাঁচব। তা ছাড়া দেশে সংঘটিত ১০টি মাদক ট্র্যাজেডির ঘটনায় যমুনার স্পিরিট খেয়ে ছয় শতাধিক মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। যমুনা গ্রুপের এই স্পিরিট সেবন করে গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঢাকাসহ ১০টি জেলায় এত মানুষের মৃত্যুকে গণহত্যা বললে ভুল হবে না। ট্র্যাজেডির শিকার পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ না পেলেও যমুনা গ্রুপ হাজার হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে মাদক ট্র্যাজেডির ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছে। আমরা গণহত্যাকারী গডফাদার বাবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

 

 

সর্বশেষ খবর