বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা
সাংবাদিক নেতাদের ক্ষোভ

সাংবাদিকদের ওপর হামলায় সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

গত কয়েকদিনে দলীয় কর্মসূচি চলাকালে রাজনৈতিক দলের কর্মীদের আক্রমণের শিকার হয়েছে সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যম অফিস। এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সম্পাদক পরিষদ। গতকাল পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সব সময় সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি চলাচল ও সাংবাদিকেরা ঘোষিতভাবেই হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত। তা সত্ত্বেও গত ২৬ থেকে ৩০ অক্টোবর এই পাঁচ দিনে অন্তত ১৯ জন সাংবাদিক, চারটি মিডিয়া অফিস এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের গাড়ি আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও দুজন সাংবাদিকের বাসভবনের সামনে হামলা হয়েছে। এই ধরনের রাজনৈতিক আচরণ সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর ফলে আমরা সংবাদকর্মীরা গভীরভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীন ও বলিষ্ঠ গণমাধ্যম বাংলাদেশের একটি গৌরবময় অর্জন। অনেক ত্যাগ ও ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এই অর্জন এসেছে। বাংলাদেশের জনগণ এবং আমরা সংবাদকর্মীরা কোনোভাবেই এই অর্জনকে বিনষ্ট হতে দেব না। এই অবস্থায় সম্পাদক পরিষদ সব রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান করছে যেন তারা তাদের কর্মীদের সংবাদকর্মী ও সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ করা থেকে বিরত করেন। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি অনুরোধ সরকার যেন সংবাদকর্মী ও সংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তা প্রদান করেন।

ফরহাদ মজহারকে গ্রেফতারের দাবি সাংবাদিক সংগঠনগুলোর

এদিকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং এর অঙ্গ ইউনিয়নের নেতারা গতকাল অপর এক যৌথ বিবৃতিতে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। আর এ ধরনের হামলায় সরাসরি উসকানিদাতা হিসেবে ফরহাদ মজহারকে 'গণমাধ্যমের শত্রু' হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিএফইএজের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ২৭ অক্টোবর থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে থেকে কর্মসূচি শেষ হওয়া পর্যন্ত অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। পত্রিকাবাহী গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের কর্মসূচি থেকে যখন এভাবে মিডিয়ার ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে, তখন জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ এক টিভি টকশোতে বলেন, মিডিয়া কোনো রাজনৈতিক শক্তির প্রতিপক্ষ হলে সেই শক্তির অধিকার আছে মিডিয়ার ওপর হামলা চালানোর।

একই টকশোতে ফরহাদ মজহার উসকানি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এখনকার যে গণমাধ্যমগুলো তারা নিরপেক্ষ তো নয়ই, একই সঙ্গে তারা গণবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যদি কাউকে দায়ী করতে হয়, আমি তাদেরকেই দায়ী করি। আমি তো মনে করি, এই পটকা ফোটানোটা খুব কমই হয়েছে, আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। তিনি তার মতাদর্শের কতিপয় মিডিয়ার নাম ধরে বলেন, যারা সেই সব মিডিয়ার পক্ষে যাবে না, তাদের বোমা মারাই উচিত। সাংবাদিক নেতারা ফরহাদ মজহারকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি জাতীয় পার্টি নেতা কাজী ফিরোজ রশীদকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানান। সাংবাদিক নেতারা মিডিয়ার ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরই আক্রমণ। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কর্মসূচি চলাকালে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যাতে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সাংবাদিকরা আক্রান্ত না হয়। তারা কর্মসূচি ঘোষণাকারী দলগুলোকে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে গত কয়েকদিনে যারা এসব হামলা চালিয়েছে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার খরচ ও তাদের গাড়ি এবং ক্যামেরা ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বিএনপিসহ ১৮ দলের প্রতি আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর