বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

ন্যান্সির বাড়িতে পুলিশ

ন্যান্সির বাড়িতে পুলিশ

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সির নেত্রকোনার ছোটগাড়া এলাকার বাসায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে পুলিশ হানা দিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর মডেল থানার পুলিশের একটি দল তার থাকার ঘর তল্লাশি করতে যায়। ন্যান্সি সন্ত্রাসী পোষেন এমন অভিযোগে তার বাড়িতে তল্লাশির কথা জানায় পুলিশ। এ নিয়ে ন্যান্সির সঙ্গে পুলিশ বাজে ও আপত্তিকর আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এই কণ্ঠশিল্পী। পাশাপাশি বলেছেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ করার কারণেই তাকে এ হেনস্তা।

ন্যান্সি বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে ন্যান্সির নেত্রকোনার বাড়িতে ২৫ থেকে ৩০ সদস্যের পুলিশের একটি দল প্রবেশ করে। যদিও বর্তমানে ন্যান্সি থাকেন তার শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহে। নেত্রকোনার বাড়িতে শুধু তার ছোট ভাই সানি ও মামা একটি এনজিওর পরিচালক ইকবাল হাসান তপু থাকেন। বাসায় এসে পুলিশ সানিকে জানায়, তারা ন্যান্সির ঘর তল্লাশি করবেন। বিষয়টি ন্যান্সিকে ফোনে জানালে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ জানায়, গোপন ও বিশ্বস্ত সূত্রে তাদের কাছে খবর আছে ন্যান্সি সন্ত্রাসী পোষেন। এখন তার বাড়িতে তল্লাশি করা হবে। কোন সার্চ ওয়ারেন্ট আছে কি না, জিজ্ঞেস করা হলে পুলিশ জানায়, বিশেষ পরিস্থিতিতে সার্চ ওয়ারেন্টের প্রয়োজন হয় না। এ সময় ন্যান্সি ওয়ারেন্ট ছাড়া তার ঘরে ঢুকতে দেবেন না বলায় পুলিশের সংশ্লিষ্ট সদস্য ফোনে আপত্তিকর মন্তব্য করেন এবং বিষয়টি ভলো হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

পরে ন্যান্সিকে আলমগীর নামে এক এসআই ফোন দেন। তিনিও খুব উত্তেজিত হয়ে 'ওই মাইয়া' স্বরে কথা বলেন। একপর্যায়ে কয়েকজন পুলিশ তার বাসার ছাদে উঠে পড়ে। ফোনে ন্যান্সিকে পুলিশ বলে, 'এখন আর শুধু সন্দেহ না, আমরা নিশ্চিত এখানে সন্ত্রাসী আছে।'

এরপর ন্যান্সি পুলিশকে বলেন, 'ওয়ারেন্ট আর আমার অনুমতি ছাড়া ঘর ভাঙার আইন যদি থাকে, তবে আপনারা ঢোকেন।' এরপর পুলিশ বলে, 'আমরা জানতাম না আপনি অসহযোগিতা করবেন। নয় তো ঘর ভাঙার জিনিসপত্র নিয়েই আসতাম।' পরে রাত ৩টার দিকে পুলিশ চলে যায়।

ঘটনার সময় উপস্থিত ছোট ভাই সানি দু-তিনজন পুলিশকে নেত্রকোনা সদর থানার এসআই বলে চিনতে পারার কথা জানিয়েছেন ন্যান্সিকে। কয়েক দিন আগে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করেন ন্যান্সি। সেখানে বিএনপিকে সমর্থন করার কথা জানান তিনি। এর পর থেকে ফোনে, ফেসবুকে এবং উড়োভাবে অনেকে কয়েক দিন ধরে ন্যান্সিকে হুমকি দিচ্ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। ন্যান্সি বলেন, 'এখন আমি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে, আমাকে কোনো একটা অভিযোগে অভিযুক্ত করে ফাঁসিয়ে দিতে পারে পুলিশ। আমার স্বামী বা ভাইকেও হয়রানি করতে পারে তারা।'

এ ঘটনায় থানায় এখনো থানায় কোনো জিডি করেননি ন্যান্সি। তিনি বলেন, 'কার বিরুদ্ধে জিডি করব! তারা কি আপন জাতের বিরুদ্ধে কোন জিডি নেবে?'

ন্যান্সি বলেন, 'এত দিন আমি সন্ত্রাসী ছিলাম না। কোনো অভিযোগও ছিল না আমার বিরুদ্ধে।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছি। আর এখন রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ করায় সন্ত্রাসী হয়ে গেলাম! আমার ভয় হচ্ছে আমার জন্য না-জানি কোন ভয়ংকর বিষয় অপেক্ষা করছে।' এদিকে বাড়িতে থাকা ন্যান্সির মামা ইকবাল হাসান তপু বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

এ সময় তিনি দুঃখ নিয়ে বলেন, 'আমি তল্লাশির বিষয়ে ফোন করে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তা এড়িয়ে যান।' এ ব্যাপারে মডেল থানার ওসি এস এম মফিজ উদ্দিনের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত বলে জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে জানাবেন বলে উল্লেখ করেন।

 

 

সর্বশেষ খবর