মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

সাংবাদিক পুলিশের ওপর বোমা ব্যাপক সংঘর্ষে নিহত ২

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবরোধ বাড়ল

নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুজন নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে পার হয়েছে তৃতীয় দিনের অবরোধ। রাজধানীতে বোমা হামলা হয়েছে সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে এক দফা কোপানোর পর হাসপাতালে গিয়ে দ্বিতীয় দফা কুপিয়েছে অবরোধকারীরা। আরও দুজনকে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সহিংসতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সাতক্ষীরায় অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করার সময় ১১ জনকে দণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সব জেলায় যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে অবরোধকারীরা। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে ৩০০ জন। গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি জেলায় ডাকা হরতাল পালিত হয়েছে। কয়েকটি জেলায় নতুন করে আজ হরতাল পালনের আহবান জানানো হয়েছে। অবরোধের সময়সীমা আজ ভোর ৬টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এদিকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন, রবিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৮৭ জনের বেশি নেতা-কর্মী। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দেড় শতাধিক। আর গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫০ জনকে। 
নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নাটোর : জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে গুলিতে নিহত হয়েছেন সাইফুজ্জামান সুজন নামে এক ছাত্রদল নেতা। সাবেক উপমন্ত্রী, বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মুক্তি দাবিতে গতকাল এ হরতাল পালিত হয়। এ ছাড়া জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এ হাই তালুকদার ডালিম, যুবদল কর্মী আরিফ ও ছাত্রদল কর্মী রনিসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ ও ১৫ জন আহত হন। ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার ফের জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিনের নেতৃত্বে একটি মিছিল শহরের ছায়াবাণী মোড়ে এলে এতে আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এতে দুলুর ভাতিজা ও জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এ হাই তালুকদার ডালিম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। গাইবান্ধা : পলাশবাড়ীতে তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে অবরোধকারীরা। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে সেখানে গিয়ে দ্বিতীয় দফা তাদের কুপিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে মনির ও সুমন নামে দুই ছাত্রলীগ কর্মী ধাপেরহাট থেকে মোটরসাইকেলে পলাশবাড়ী যাচ্ছিলেন। এ সময় ব্র্যাক মোড়-সংলগ্ন পলাশ ক্লিনিকের সামনে তাদের কুপিয়ে জখম করে অবরোধকারীরা। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে দ্বিতীয় দফা তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। 
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : শিবগঞ্জের কানসাটে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়েছে অবরোধকারীরা। আহতরা হলো শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলাম (২৩) ও কানসাট গ্রামের জুয়েল (৩৪)। এদের মধ্যে জুয়েলের হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধকারীরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সাতক্ষীরা : সদরের ঝাউডাঙা এলাকায় রবিবার রাতে অবরোধের সমর্থনে পিকেটিং করার সময় ১১ জনকে ছয় মাসের জেল দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সন্ধ্যায় ১৮ দলের ওই ১১ কর্মীকে আটক করে বিজিবি। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে তাদের হাজির করা হলে এ দণ্ড প্রদান করা হয়। রাজশাহী : মিছিল থেকে অবরোধকারীরা একটি গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশ-অবরোধকারী সংঘর্ষ বেধে যায়। অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়লে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। মেহেরপুর : জেলার ১৬টি স্থান অবরোধ করে রাখে পিকেটাররা। এ সময় তারা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে, আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে ও বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। লক্ষ্মীপুর : কমলনগরের তোরাবগঞ্জ বাজারে দুপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির ও চার পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। চাঁদপুর : সকালে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধকারীদের মিছিলে বাধা দিয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে আহত হন বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ২০ জন নেতা-কর্মী। ঘটনাস্থল থেকে শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সোলায়মান ঢালীসহ পাঁচজনকে আটক করেছে মডেল থানা পুলিশ। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও অবরোধকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজবাড়ী : বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন নির্বাচন অফিস লক্ষ্য করে রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এ সময় অফিসে কেউ ছিল না। এদিকে কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে একটি মসুরি ক্ষেত থেকে গতকাল দুটি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। যশোর : রবিবার নিজ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগে মনিরামপুর উপজেলায় আজ মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে ১৮-দলীয় জোট। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া বিআরটিএ কার্যালয়ে চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নওগাঁ : দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবিতে নওগাঁয় ১৮-দলীয় জোটের ডাকে গতকাল ভোর ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হয়েছে। সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : সোনারগাঁয়ের বস্তল এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে যুবদল। এতে পুলিশ বাধা দিলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘষের্র ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ তিন অবরোধকারীকে আটক করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সরাইল উপজেলা পরিষদের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে অবরোধকারীরা। এ সময় একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় ১৮-দলীয় জোটের মিছিল থেকে নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরের সামনে ককটেল ও ঢিল ছোড়া হয়। সিরাজগঞ্জ : টুকরা ছোনগাছা ও খোকশাবাড়ী পয়েন্টে দুটি মোটরসাইকেল ও ৮-১০টি অটোরিকশা ভাঙচুর এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ২৫-৩০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ ঘটনায় ১০ জন আহত হয়। মুখোশধারী কয়েকজন বেলকুচি পৌর এলাকার শেরনগরে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ-নলকা সড়কের চকশিয়ালকোলে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। বরিশাল : নগরীর বিসিক শিল্পনগরী থেকে রাসেল নামে এক শিবির কর্মীকে আটক করা হয়। সকালে নগরীর নথুল্লাবাদ এবং সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকায় কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। নগরীর করিম কুটির এলাকায় পিকেটিংকালে ছাত্রদলের এক নেতাকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বাবুগঞ্জের সাতমাইলে সাতটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সিলেট : সার্কিট হাউসের সামনে ও নির্বাচন অফিসে বোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যায় পাঁচটি মোটরসাইকেলে ১০-১৫ জন যুবক সার্কিট হাউসের সামনে আসে। তারা বাইরে মোটরসাইকেল রেখে বাউন্ডারি টপকে ভেতরে ঢোকে। পরে সার্কিট হাউসের পুরাতন তিন তলা ভবনের সামনে আটটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : সকালে তারাব এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুনসহ ১২-১৩টি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। বগুড়া : শহরে বেশ কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে জেলা প্রশাসন চত্বরে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এর আগে রবিবার রাতে শহরের স্টেশন রোডে দুটি ককটেলের শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা। গাজীপুর : কালিয়াকৈর উপজেলায় ১৮ দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। ভোলা : সন্ধ্যার পর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপির কর্মীরা সদর রোডে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এর আগে দুপুরে প্রায় দুই ঘণ্টা পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 
বিদেশি সাংবাদিক ও পুলিশকে বোমা : অবরোধের আগুনে রাজধানীতে এবার দগ্ধ হলেন ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিরিনা আক্তার। বিদেশি সাংবাদিক ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। এ ছাড়া মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। গতকাল রাজধানীতে এমনই সব সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে টানা অবরোধের তৃতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে নগরবাসীর মধ্যে। সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। সকালে রাজধানীর পলাশীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কাছে ও ডেমরায় আলাদাভাবে দুটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেন অবরোধ সমর্থকেরা। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, দুটি ঘটনার পরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলেন। সকাল ৮টায় ডেমরার তারাবো বাজার এলাকায় অবরোধকারীরা একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে মারাত্দক অগ্নিদগ্ধ হন ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিরিনা আক্তার। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পোশাককর্মী শিরিনার শরীরের ৪০ ভাগ পুড়ে গেছে। সেই পুড়ে যাওয়া অংশের মধ্যে আছে অনাগত সন্তানকে ছয় মাস ধরে অতি যত্নে ধারণ করা পেট। শিরিনার স্বামী মোহাম্মদ শাহীন জানান, শিরিনা নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের সিনহা গার্মেন্টে কাজ করেন। সকালে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। বিকাল ৫টায় কাকরাইল রাজস্ব ভবনের সামনে টোকিও জাপান টিভির সাংবাদিকদের একটি টিম অবরোধের সংবাদ সংগ্রহের কাজ করছিল। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে পর পর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশি সাংবাদিক টিমের সদস্যরাও ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ রিয়াজ নামে এক যুবককে আটক করেছে। পুলিশ জানায়, কোনো ভবনের ওপর থেকে বিদেশি সাংবাদিক টিমকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর আগে সকাল ৭টার দিকে কারওয়ান বাজার এলাকায় অবরোধের সমর্থনে ৮-১০ জনের একটি দল ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় সিএ ভবনের সামনে পুলিশের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে পর পর তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করেন মিছিলকারীরা। পুলিশ ধাওয়া করলে তারা দ্রুত পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পুলিশের কোনো সদস্য আহত হননি। তবে পুলিশ কাউকে আটকও করতে পারেনি। পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লবকুমার সরকার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ও ঢাকায় গত কয়েক দিন পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ার ঘটনা ঘটছে। এটা হতে পারে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র। কারওয়ান বাজারে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়াও এমন ঘটনা হতে পারে। 
রাতে শাহবাগের জাতীয় সমপ্রচার ভবনের ছাদে তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীর দারুস সালাম রোডে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বাসার সামনে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাউসার আহমেদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে। এ ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর আগে ৯ জুন দুপুরে হরতাল চলাকালে তথ্যমন্ত্রীর ওই বাসার সামনে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পুলিশ তখন পাঁচজনকে আটক করেছিল।
সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভাটারা থানার কাছে কোকাকোলার গলিতে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। বাধা দিলে মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে চার-পাঁচটি ককটেল ছোড়েন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে শটগানের গুলি ছুড়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। এতে কেউ হতাহত হয়নি। কাউকে আটকও করা যায়নি। সকালে গাবতলীর টেকনিক্যাল ও ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকা এবং কল্যাণপুরের খালেক পেট্রল পাম্পের সামনে বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা, মুগদাপাড়া, খিলক্ষেত, বিজয়নগর, খিলগাঁও, বাবুবাজার, মগবাজার, লালবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে বোমাবাজি করা হয়। বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালায়। কোনো কোনো স্থানে পুলিশ গুলিবর্ষণও করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, অবরোধে পুরান ঢাকায় ১৮টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বেলা দেড়টায় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে ফারহান (২২) নামে একজনকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বিকাল ৪টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। বিকাল সাড়ে ৪টায় বংশালে জবির ড. হাবিবুর রহমান হলের সামনে ৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। বিকাল ৫টায় রায়সাহেব বাজার মোড়ে পর পর ৬টি ককটেল বিস্ফোরিত হলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে সকাল ১০টায় ধোলাইখালের গোয়ালঘাট মসজিদের সামনে পর পর ৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় যুবদল। অবরোধে রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে কাছাকাছি দূরত্বের কয়েকটি বাস সকালের দিকে চলতে দেখা গেছে। রাজধানীতে হিউম্যানহলার, অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন চলাচল করলেও নগর পরিবহনের বাসের সংখ্যা ছিল কম। ফলে অফিসগামী যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। স্বল্পসংখ্যক বাস সকাল থেকে চলতে থাকলেও দুপুরের পর এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আতঙ্ক নিয়ে যাত্রীদের বাসে চড়তে দেখা যায়। তবে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে যারা অটো বা রিকশায় চলাচল করতে পারছেন না, তারা হেঁটেই কর্মস্থলে যেতে শুরু করেছেন। সকালে ফুটপাতগুলোয় মানুষের ঢল নামে। অফিসগামী এসব মানুষের অনেকেই বলেছেন, বাসে আগুন দেওয়ায় তারা হেঁটে চলাতেই কিছুটা নিরাপদ মনে করছেন।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবরোধ বাড়ল : ১৮ দলের চলমান অবরোধ আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৫৯ ঘণ্টা বাড়ানো রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের সময় দাঁড়াল টানা ১৩১ ঘণ্টা। প্রথম ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল ৬টায় শুরু হওয়া আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। পুলিশি ধরপাকড়ে আত্দগোপনে থাকা বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সকালে অজ্ঞাতস্থান থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিওবার্তায় অবরোধের সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেন। পরে বিকালে সালাহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে না নেওয়ায় এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল স্থগিত না করায় ১৮ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে অবরোধ কর্মসূচি আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত বাড়ানো হলো। তিনি বিবৃতিতে দেশবাসীকে কষ্ট স্বীকার করে দেশ, জাতি ও গণতন্ত্র রক্ষায় এই কর্মসূচি পালনের উদাত্ত আহ্বান জানান। বিবৃতিতে সালাহউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, রবিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় বিরোধী জোটের তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৮৭ জনের বেশি নেতা-কর্মী।
এ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি। বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫০ জনকে এবং নতুন করে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে আড়াই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর নামে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি মুখপাত্র অভিযোগ করেন, গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন সরকারের হুকুম তামিলে ব্যস্ত। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার দুঃস্বপ্ন দেখছে। চলমান গণ আন্দোলনকে কলুষিত করার কু-মানসে আওয়ামী লীগ সুপরিকল্পিতভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আমরা এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সর্বশেষ খবর