শিরোনাম
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

জাতীয় পার্টিকে সরকারে রাখা না রাখা নিয়ে দ্বিধা

জাতীয় পার্টিকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া না নেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে সরকারপ্রধান। কাল নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ৩৩টি আসন নিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টি বসছে বিরোধী দলের আসনে। এরশাদের শপথ নেওয়ার আগেই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন রওশন এরশাদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, এরশাদের পরামর্শ ও দোয়া নিয়েই তিনি বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছেন। এবার বিএনপিকে বিরোধী দলের বাইরে রেখে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা দৃষ্টিনন্দিত রাখতে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা অনেকেই চাচ্ছেন সংসদে জাতীয় পার্টি সরকারে নয়, কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করুক। জাতীয় পার্টিকে সরকারে নেওয়ার প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনৈতিক ভাষায় বলেছেন, আমরা সব সময় সবাইকে চাই। যারা আসতে চায় নেব। কিন্তু মনে রাখতে হবে একটা বিরোধী দলও থাকতে হবে।

এদিকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভায় সরকার ও বিরোধী দলে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির নেতারা বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। সেসময় আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাও ছিলেন। তাদের কেউ কেউ সরকারে যোগদান প্রশ্নে সংসদীয় রাজনীতির নৈতিক দিকটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জাতীয় পার্টি এ সময় পাকিস্তানের পিপলস পার্টি সরকারে বিরোধী দলের মন্ত্রী রাখার বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে টানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে এরশাদ ও জাতীয় পার্টির ভূমিকা রাজনৈতিকভাবে কতটুকু প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন সেটি স্মরণ করিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন এবং আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। জাতীয় পার্টিতে কেউ এখন বিরোধীদলীয় উপনেতা বা বিরোধী দলের চিফ হুইপ হতে রাজি নন। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকুক। সিএমএইচ থেকে জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও তার ভাই জি এম কাদেরকে উপনির্বাচনে বিজয়ী করে আনাসহ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তার বার্তায় জাতীয় পার্টি সরকারে নয়, বিরোধী দলে থাকতে আগ্রহের কথা আছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী আপাতত জাতীয় পার্টি থেকে দু-একজন দায়িত্বশীল নেতাকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিতে পারেন, নাও দিতে পারেন। রওশন এরশাদ অবশ্য জাতীয় পার্টির কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিতে চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে বিশেষ মর্যাদায় রোমিং অ্যাম্বাসেডর করার চিন্তাভাবনাও প্রধানমন্ত্রী করছেন বলে জানা গেছে।

বিগত মহাজোট সরকারে একজন মন্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিল আওয়ামী লীগ। শেষ মুহূর্তে এরশাদ ও তার জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে সর্বদলীয় সরকারে ৬ জন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টা দিয়ে ছিল। কিন্তু নাটকীয়ভাবে নির্বাচনে যোগদান ও পরবর্তী বর্জন পর্ব সরকারকে বেকায়দায় ফেলে। এরশাদের অবস্থান, তার ডাকে পার্টির অনেকের মনোনয়ন প্রত্যাহার সব মিলিয়ে ভোটের আগে ১৫৩ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে হয়। এরশাদের সঙ্গে সেসময় পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা জি এম কাদের অনড় অবস্থান নেন। অন্যদিকে রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে রেখে কঠিন পরিস্থিতি পাড়ি দিতে ভূমিকা রাখেন। একপর্যায়ে এরশাদের পাশ থেকে কাজী ফিরোজ রশিদও সরে এসে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। অন্যদিকে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ত্রিমুখী চাপে মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব কূল রক্ষা করার চেষ্টা করেন। সব পক্ষ এরশাদের স্বার্থ ও পার্টির ঐক্য রক্ষার পথে হাঁটে।

সর্বশেষ খবর