শিরোনাম
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা
ভয়েস অব আমেরিকাকে খালেদা

জামায়াতের সঙ্গে জোট কৌশলগত

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নিয়ে আলোচনা পরের বিষয়। জামায়াতের সঙ্গে জোট বা ঐক্যের বিষয়টি শুধুই কৌশলগত ব্যাপার বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। শান্তি, উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন চায় বলেই তরুণরা এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও তিনি দাবি করেন। গতকাল ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। ভয়েস অব আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টুডিও থেকে তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন সরকার কবীরূদ্দীন। এ সাক্ষাৎকারে বিএনপির দলীয় অবস্থান ও আঠারো দলের পরবর্তী ভাবনা তুলে ধরেছেন খালেদা জিয়া। নির্বাচন হয়ে গেল। এখন কী কর্মসূচি নিয়ে এগোবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম কথা আমি বলব যে দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। যা হয়েছে তা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের মানুষ সরকারকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আপনি নিজেই দেখেন যেখানে ১৫৩টি সিটে কেউ পার্টিসিপেট করেনি। কন্টেস্ট করেনি। কেউ আগ্রহীই নয় নির্বাচন করতে। সেখানে শুধু একদলীয় নির্বাচন ১৫৩টা সিটে হয়েছে। কোনো প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। দ্বিতীয়ত যে ১৪৭টা সিটে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের কথা ছিল সেখানেও দেশের ও বিদেশের মিডিয়া কর্মীরা দেখেছেন, ভোট কেন্দ্রে মানুষই নেই। প্রিসাইডিং অফিসার কোনো কোনো জায়গায় ঘুমাচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় নিজেরাই ভোট দিচ্ছেন। ৪৭-৪৮টি কেন্দ্রে কোনো ভোটার ভোট দেয়নি। তারপরে অনেক কেন্দ্র বন্ধ। তার পরও যা হলো তাতে ৫ পারসেন্টও হবে না। তো এতে কী হলো। মানুষের এটাই কি রায়? জনগণের মতামতের কোনো প্রতিফলন এখানে হয়নি। কাজেই একে কোনো নির্বাচন আমি বলব না। এটা ভাগাভাগির নির্বাচন বলতে পারেন। তারা নিজেরা সিট ভাগাভাগি এবং ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ সত্যিকারের একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে সে রকম একটি নির্বাচন দেখতে চায়। সে নির্বাচনটা হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। মানুষ এখন আরও পরিষ্কার ৫ জানুয়ারির পরে যে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না এবং নির্বাচন কমিশন যে একটা মেরুদণ্ডহীন বা দলীয় সরকারের মতো কাজ করেছে, এটা একদম পরিষ্কার। যেখানে ৫%ও ভোট পড়েনি সেখানে কেমন করে ৪০% ভোট বলে? এটা একটা নির্লজ্জ মিথ্যা কথা বলছে এবং এ জন্য তার দুই দিন সময় লেগেছে। সব ঠিকঠাক করে, গুছিয়ে কীভাবে বলবে তা ঠিকঠাক করে। কাজেই এটা পরিষ্কার এবং জাতি এটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। একাদশ সংসদ নিয়ে আলোচনার আহবান প্রশ্নে তিনি বলেন, দশম নির্বাচনই তো মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। একাদশের কথা পরে হবে। আমরা গণতান্ত্রিক দল। আমি অনেক আগে থেকেই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা সত্যিকার গণতন্ত্র চাই। জনগণের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, মানবাধিকার রক্ষার জন্য চাই। শান্তি চাই, উন্নয়ন চাই, দারিদ্র্য বিমোচন চাই, লেখাপাড়া চাই। তরুণরা এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ, জোট, ঐক্য বা আঁতাত কৌশলগত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত বলেন, জোট বলেন বা ঐক্য বলেন তা আওয়ামী লীগই আগে করেছে। এরশাদের আমলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কেউ নির্বাচনে যাব না। 
তারপর মাঝরাতে এরশাদের সঙ্গে তাত করে নির্বাচনে গেল আওয়ামী লীগ। জামায়াতের সঙ্গে কথা বলে তাদের নিয়ে গেল। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিটা আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের। সে জন্য তখন আওয়ামী লীগ অনেক নাশকতা করেছে। আওয়ামী লীগ এখনো জামায়াতের সঙ্গে সেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এ জোট সম্পূর্ণ কৌশলগত। বিদেশিদের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা স্বাধীন দেশ। এ দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বিদেশিরা আমাদের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হিসেবে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলতে পারেন। কিন্তু তারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করলে মানুষ তা সহ্য করবে না। সাম্প্রতিক সময়ে অচলাবস্থা, হত্যা, নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব কিছুর দায় বর্তায় সরকারের ওপর। তাদের একগুঁয়েমি, জেদের ওপর। এ জন্য সরকার দায়ী। দলীয় লোকজনই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর তারা পোড়াচ্ছে। অতীতেও তারা হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সব সময় তারা খারাপ আচরণ করছে। পুলিশের চোখের সামনে এগুলো ঘটলেও তারা কিছু বলছে না। কারণ তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার, মানবাধিকার, স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারও হস্তক্ষেপ নয় এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি চেয়াপারসন অভিযোগ করেন, দেশের পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত খারাপ। অত্যন্ত ভয়াবহ। সারা জীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য হত্যা, গুম করছে আওয়ামী লীগ। যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধেই নির্যাতন চালানো হচ্ছে। আজ জেলখানাগুলো বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

সর্বশেষ খবর