শিরোনাম
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

গৃহপালিত বিরোধী দল নিয়ে বেশিদিন টিকবে না সরকার

ড. ওসমান ফারুক

গৃহপালিত বিরোধী দল নিয়ে বেশিদিন টিকবে না সরকার

সাজানো পাতানো একটি গৃহপালিত বিরোধী দল নিয়ে সরকার বেশিদিন টিকতে পারবে না বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক। তার মতে, বিএনপি যে আশঙ্কা থেকে নির্বাচনে যায়নি, আজ বাস্তবে তাই প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের পতন হবেই। দেশে বিদেশে কারও কাছেই দশম জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। সারা বিশ্ব আজ এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ড. ওসমান ফারুক এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিএনপি যে দাবিতে আন্দোলন করেছিল তাতে সফল হয়েছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে একাত্দতা পোষণ করে জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। এর পরও গণমাধ্যমের সুবাদে প্রকাশ্যে জাল, কারচুপি ও প্রহসনের নির্বাচন দেশবাসী দেখতে পেয়েছে। আরও হাস্যকর হলো- জনগণের ভোটাধিকার ছাড়াই ১৫৩ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসেনি। গোটা বিশ্ব এই তামাশার নির্বাচন দেখেছে। সুতরাং বিরোধী দল হিসেবে আমাদের আন্দোলন সফল হতে চলেছে। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবেই। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমনের কথা বলছেন। কিন্তু আমরাও বলতে চাই সরকার যত কঠোর হবে বিএনপির আন্দোলনও তত কঠোর হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চলতেই থাকবে। আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে আবারও দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজপথ, সড়ক পথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি চলবে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী আন্দোলনের কৌশলও পরিবর্তন হতে পারে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সরকার সাহস থাকলে গণভোট দিক। এতে তারা হেরে যাবেন। কারণ কারও কাছেই এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এমনকি ভারতের পত্রপত্রিকাগুলোও এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সংসদের মেয়াদ রয়েছে। এর আগেই নতুন সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈধ। এখন দেশে ৬২৪ জন এমপি রয়েছেন। এটা পৃথিবীর কোনো দেশেই দেখা যায় না। বাংলাদেশে এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহল কী করতে পারে এমন প্রশ্নে ওসমান ফারুক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় সব দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলো এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে তাদের পক্ষ থেকে যে ধরনের বিবৃতি এসেছে তাতে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে না। এটা ক্ষমতাসীনদের বুঝতে হবে। তিনি আরও বলেন, বৈধ ও গণতান্ত্রিক সরকার হলে বিশ্বমতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনে ত্বরিত ব্যবস্থা নিত। কিন্তু এই অবৈধ সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। এ জন্য সরকারকে কঠিন মাশুল দিতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিএনপি যে কারও সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত জানিয়ে তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনা আন্দোলনেরই একটি অংশ। আন্দোলনের পাশাপাশি আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনাও চালাতে চাই। এ ক্ষেত্রে সরকারের স্বদিচ্ছা থাকতে হবে। আন্দোলনে বিএনপির রাজপথে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ থাকলে তাদেরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেত না। মুক্তিযুদ্ধের পর কখনোই এভাবে সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়নি; দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া। কিন্তু বর্তমান সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঠেই নামতে দিচ্ছে না। রাস্তায় বের হলেই প্রকাশ্যে গুলি করা হচ্ছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের আচরণ হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ওসমান ফারুক বলেন, '৯০ এর আন্দোলনের এক পর্যায়ে এরশাদ যেমন একক সিদ্ধান্তে ক্ষমতা ছেড়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চাইলে তার একক সিদ্ধান্তেই বর্তমান সমস্যার সমাধান সম্ভব। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সঙ্গে নতুন করে সংলাপেরও প্রয়োজন পড়ে না।

 

 

সর্বশেষ খবর