সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা
রাজউককে এফবিসিসিআইর আহবান

ব্যবসা না করে নিয়ামক ভূমিকা রাখুন

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) ব্যবসা না করে আবাসন ব্যবসায়ীদের জন্য নিয়ামকের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটি বলেছে, রাজউককে আবাসন, হাউজিং ও কনস্ট্রাকশন ব্যবসা মনিটরিং করতে হবে। তবে রাজউক যদি ব্যবসাই করে, তাহলে পৃথক নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে ত্রুটিপূর্ণ ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধনের জন্য বিএলডিএ ও রিহ্যাবের অর্থায়নে এবং এফবিসিসিআইর তত্ত্বাবধায়নে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে এফবিসিসিআইয়ের আবাসন, হাউজিং ও কনস্ট্রাকশন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম বৈঠকে এসব কথা বলা হয় বলে সূত্র জানায়। স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুল কাওনাইন কুতুবের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আলোচনা করেন এফবিসিসিআইর সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএ) মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিএলডিএর সহসভাপতি এম এম এনামুল হক, কনস্ট্রাকশন শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী আফতাব উদ্দিন আহমেদ, রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন, কমিটির সদস্য আনিসুজ্জামান ভূঁইয়া রানা, আবদুল মান্নান, মো. ইউসূফ, হাজী আবদুল আহাদ, প্রকৌশলী এস এম পলাশ, মো. শামসুল হুদা প্রমুখ।

বৈঠক শেষে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশের আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে মহাপরিকল্পনা করতে তারা বৈঠকে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ব্যক্তি আর এই খাতের সমস্যা নয়, পুরো দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। আবাসন খাতের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা মোকাবিলায় রিহ্যাব ও বিএলডিএকে সজাগ থাকতে হবে।

ওই বৈঠক সূত্র জানায়, আবাসন, হাউজিং ও কনস্ট্রাকশন খাতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুল কাওনাইন কুতুব বৈঠকে সবার পরামর্শের ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো উপস্থাপন করে বলেন, রাজউককে প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতা দূর করতে হবে। ওয়ান স্টপ সেবা চালু করতে হবে। প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে, যাতে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অযথা কোনো ভোগান্তির শিকার না হন। এই খাতসমূহের ব্যবসায়ীদের জন্য কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আবাসন, হাউজিং ও কনস্ট্রাকশন খাতের জন্য প্রণোদনা বাবদ তিন হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখতে হবে। ফ্লোর-এরিয়া-রেশিও (ফার) সংশোধন করে জনসাধারণের জন্য অল্প জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করার নিয়ম চালু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজউক আবাসন, হাউজিং ও কনস্ট্রাকশন ব্যবসা মনিটরিং করবে। তারা ব্যবসা করতে পারবে না। তবে রাজউক যদি ব্যবসাই করে তাহলে আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করতে হবে। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে না। বেসরকারি ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা-২০০৪ (সংশোধিত-২০১২)-এ যে সব অসঙ্গতি আছে, তা দূর করতে হবে। রাজউক ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুল কাওনাইন কুতুব আরও বলেন, জমি ও ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আবাস খাতকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা দিতে হবে। সোলার ব্যবস্থা শহরভিত্তিক বাধ্যতামূলক না করে গ্রাম পর্যায়ে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শহরের সুয়ারেজ ব্যবস্থা উন্নত ও তা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিএলডিএর মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, ত্রুটিপূর্ণ ড্যাপ সংশোধনের জন্য বিএলডিএ ও রিহ্যাবের যৌথ অর্থায়নে এবং এফবিসিসিআইর তত্ত্বাবধায়নে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে হবে। কেননা, বর্তমানে যে ড্যাপ আছে তা অবাস্তব ও ত্রুটিপূর্ণ। এটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়। রাজধানী ঢাকাকে একটি তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবসম্মতভাবে সংশোধন করে তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। তার মতে, প্রতি বছর ঢাকা শহরে জনসংখ্যার অনুপাতে এক লাখ ফ্ল্যাট দরকার হলেও সরবরাহ করা যাচ্ছে আট থেকে ১০ হাজার।

আবাসন খাতের সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ড্যাপের কারণে কোনো আবাসন প্রকল্প অনুমোদন করতে পারছে না রাজউক। এ কারণে বেসরকারি খাতে ৫০টিরও বেশি আবাসন প্রকল্প আটকে আছে। এমনকি রাজউকও নিজেদের তিনটি প্রকল্প হস্তান্তর করতে পারেনি। নতুন প্রকল্প অনুমোদন না করায় আবাসন খাত ও সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩০০টি উপখাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আবাসন খাতে প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের একটা বড় অংশ বিনিয়োগ হয়েছে এ খাতে। আবাসন খাতের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আড়াই কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। নতুন আবাসন প্রকল্প না হওয়ায় এ খাতের ২৫ লাখ শ্রমিক ইতোমধ্যে বেকার হয়ে গেছে। উন্নত আবাসন একটি দেশের সভ্যতার মাপকাঠি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ঢাকাকে সুন্দর নগরী করতে অবশ্যই ড্যাপ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তবে তা বাস্তবসম্মত হতে হবে।' রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মিলন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈঠকে পুরো আবাসন খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে তারা কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে তিনি আবাসন ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে ফ্ল্যাটে সোলার প্যানেল সংযোজনের বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কেননা, এটি এখন বিষফোঁড়া হিসেবে কাজ করছে।

 

 

সর্বশেষ খবর