বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

তীরে এসে ডুবল তরী

তীরে এসে ডুবল তরী

পারলেন না এনামুল হক বিজয়। পারলেন না সোনালি অক্ষরে ইতিহাস রচনা করতে। এনামুলের মনোযোগের সামান্য ভুলে দুই বছর আগের এশিয়া কাপ ফাইনালের দুঃসহ স্মৃতিটা আবারও উঠে আসল ক্রিকেটপ্রেমীদের মানসপটে। ২০১২ সালে মিরপুরে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অভিষেক টি-২০ ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার কাছে টাইগাররা হারল ২ রানে। কাল এখানেই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলবে দুই দল।

শেষ ওভারে টাইগারদের জয়ের জন্য দরকার ১৭ রান। উত্তেজনায় থরথরে কাঁপছে পুরো স্টেডিয়ামসহ দেশের লক্ষ-কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। টি-২০ ক্রিকেটের এক ওভারে এমন রান উঠছে হরহামেশা। তাই ম্যাচ হেলে আছে দুই দলের দিকেই। এমন সমীকরণে অনেক শলা পরামর্শ করে লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চন্ডিমল বোলিংয়ে আনেন থিসারা পেরেরাকে। ব্যাটিং স্ট্রাইক অ্যান্ডে তখন ৪৪ রানে ব্যাট করতে থাকা এনামুল। প্রথম বলেই থিসারার ফুলটস ব্যাটের কানায় লেগে থার্ড ম্যান দিয়ে বাউন্ডারি। আনন্দে নেচে উঠল পুরো স্টেডিয়াম। পাঁচ বলে দরকার ১৩ রান। পঞ্চম বলে কাভারে খেলেই দুইরান নিলেন এনামুল ও ফরহাদ রেজা। চার বলে ১১ রান দরকার। কিন্তু চতুর্থ বলে বুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন ফরহাদ। রান হয়নি কোনো। তিন বলে টার্গেট ১৩ রান। জিততে টানা তিন বাউন্ডারি হলেই হবে না। ছক্কাও লাগবে। এমন জটিল সমীকরণের চতুর্থ বলেই মাটি কামড়ানো কাভার বাউন্ডারি মারেন এনামুল। পুরো উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়েছে গ্যালারিসহ দুই দলের ড্রেসিং রুমের ক্রিকেটাররা। কি হয় দেখার আশায়। জিততে দুই বলে দরকার ৭ রান। পঞ্চম বলে একইভাবে কাভার দিয়ে বলকে সীমানা ছাড়া করেন এনামুল। টানা দুই বাউন্ডারিতে তখন জয়োৎসবের মঞ্চ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাঠে উপস্থিত হাজার দশেক ক্রিকেটপ্রেমী। শেষ বলে তিন রান। এশিয়া কাপের সেই স্মৃতি আবারও ভেসে উঠে চোখের কোনায়। নার্ভ ঠিক রাখা কষ্টকর এমন মুহূর্তে বল করেন পেরেরা। কিন্তু বলটি হল ফুলটস। সমানে ব্যাট চালালেন এনামুল। লাইন মিস। ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় আকাশে। দলকে টানটান উত্তেজনার অসাধারণ এক জয় উপহার দিতে নিজেই ধরলেন ক্যাচ। এরপর শূন্যে মেলে ধরলেন দুই হাত। আনন্দে মেতে উঠল শ্রীলঙ্কান শিবির। আর কবরের নিস্তব্ধতা নেমে আসল বাংলাদেশের শিবিরে। অবশ্য আম্পায়ার শরফুদৌল্লা ইবনে সৈকত তৃতীয় আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন বলটি আইনসিদ্ধ কি না জানতে। তৃতীয় আম্পায়ার সবুজ বাতি জ্বালালে জয়োৎসবের মাত্রাটা আবার দ্বিগুণ হলো চন্ডিমল, সাঙ্গাকারাদের। অন্যদিকে তীরে এসে তরী ডোবার মতো হেরে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন এনামুল ও সোহাগ গাজী। শ্রীলঙ্কার ৭ উইকেটে ১৬৮ রানের জবাবে বাংলাদেশের স্কোর থমকে দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৬৬'তে। মাঝে ব্যবধান রয়ে যায় মাত্র ২ রানের। অসাধারণ এই ম্যাচটি আরও অসাধারণ হতো যদি জিতে যেত টাইগাররা! তবে অনেক অভিষেকের ম্যাচটি টেস্ট ও ওয়ানডে ফরম্যাটের ক্রিকেটের অভিষেকে প্রতিপক্ষ ছিল এই দ্বীপরাষ্ট্র। কাল টি-২০ ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হলো স্টেডিয়ামের। টাইগারদের জন্য স্মরণীয় না হলেও ম্যাচটি বহুকাল মনের কোঠরে রয়ে যাবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।

ম্যাচ শুরুর আগে তামিম বিতর্ক যেমন মানসিকভাবে কোণঠাসা করে রেখেছিল টাইগারদের। সেই টাইগাররাই দেশের পঞ্চম টি-২০ অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে অসাধারণ ক্রিকেট খেলল ম্যাচের দুই সেসনে। প্রথম সেসনে অসাধারণ চার চারটি ক্যাচ ধরে স্মরণী করে রেখেছে নিজেদের। স্মরণীয় করে রেখেছেন বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত সানীও। ৩ ওভারে ১৭ রান দিয়ে উইকেট নেন ২টি। ২ কোটি ৮০ লাখ ভারতীয় রুপিতে বিক্রি হওয়া সাকিব আল হাসানও দুর্দান্ত বোলিং করেন সকালে। টাইগারদের দুর্দান্ত ফিল্ডিং ও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে লঙ্কান ওপেনার কৌশল পেরেরা খেলেন ৬৪ রানের নান্দনিক ইনিংস। তার ব্যাটিংয়েই মূলত ১৬৮ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ১৬৬।

 

সর্বশেষ খবর