শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪ ০০:০০ টা

সম্পদে পিছিয়ে নেই সংরক্ষিত আসনের নারী এমপি প্রার্থীরাও

সম্পদে পিছিয়ে নেই সংরক্ষিত আসনের নারী এমপি প্রার্থীরাও

সরকারের মন্ত্রী ও নির্বাচিত এমপিদের চেয়ে ধন-সম্পদে পিছিয়ে নেই সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীরাও। তাদেরও রয়েছে অঢেল ধন-সম্পদ। নামে-বেনামে রয়েছে সম্পদের পাহাড়। বেশির ভাগ প্রার্থীর বিনিয়োগ রয়েছে শেয়ারবাজারে। এবার সংরক্ষিত মহিলা আসনে আয়-সম্পত্তি নেই এমন প্রার্থীও যেমন মনোনয়ন পেয়েছেন, তেমনি রয়েছেন শিল্পপতিও। এমনকি ঢাকায় ফ্ল্যাট-বাড়ি ও গাড়ির অভাব নেই অনেকের। এ ছাড়া স্থাবর-অস্থাবর ও স্বর্ণালঙ্কারে ধনীর তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মনোনীত নারীরাই। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ মনোনীত দুই নারীর স্বর্ণালঙ্কারই সবচেয়ে কম। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত ন্যাপের আমিনা আহমেদ ও স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থী কাজী রোজির স্বর্ণালঙ্কার নেই। নিজের ও স্বামীর সম্পদ মিলিয়ে শীর্ষে রয়েছে জাতীয় পার্টির মাহজাবীন মোরশেদ ও আওয়ামী লীগের নিলোফার জাফরউল্লাহ। অন্যদিকে স্বশিক্ষিত, অষ্টম শ্রেণী শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে সর্বোচ্চ বিজ্ঞান, আইন,আর্কিটেকচারের সর্বোচ্চ ডিগ্রিও রয়েছে অনেকের। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নবম সংসদের ৫ পুরনো মুখ এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। তারানা হালিম ছাড়া তাদের সম্পদও বেড়েছে কিছুটা। দশম সংসদে ৫০ আসনের জন্য ৯ মার্চ আওয়ামী লীগের ৩৯ জন, জাতীয় পার্টির ৬ জন, জাসদের ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির একজন ও স্বতন্ত্র জোটের ৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। মঙ্গলবার বাছাইয়ে দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। তাদের আপিল শুনানি ১৬ মার্চ হওয়ার কথা রয়েছে। বাকি ৪৮ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় শেষ হলে বৈধ প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশন বৈধ ৪৮ প্রার্থীর হলফনামা প্রকাশ করেছে।

ইসিতে দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে-

নিলোফার জাফর উল্লাহ : ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার থেকে পড়াশোনা করে বর্তমানে তিনি শিল্পপতি ও সমাজসেবায় নিয়োজিত। বছরে তার আয় ছয় কোটি টাকা। ২ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে তার। ৯ লাখ টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে নিজের নামে, স্বামীর নামে রয়েছে পিস্তল ও গান।

মাহজাবীন মোরশেদ : বিএ পাস। একটি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক ও একটি নেভিগেশন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নিজের বার্ষিক আয় সাড়ে সাত লাখ টাকা হলেও স্বামীর বার্ষিক আয় তার তিনগুণ। নবম সংসদের সংরক্ষিত আসনের এই এমপির অস্থাবর সম্পত্তি দেড় কোটি টাকা হলেও স্বামীর রয়েছে ১৪ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে সাবেক এ এমপির নগদ টাকা ৯৪ লাখ। তার স্বামীর এক কোটি টাকা মূল্যমানের চা, রাবার বাগান ও মৎস্য খামারের পাশাপাশি দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের অকৃষি জমিও রয়েছে। নবম সংসদের চেয়ে এবার তার সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে।

আমিনা আহমেদ : এমএ, রাজনীতি, আয়ের উৎস ও অস্থাবর সম্পত্তির কোনো তথ্য দেননি তিনি। শুধু ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের অকৃষি জমি রয়েছে। ২০০৯ সালে তার আয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কিছু ছিল না বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন। কাজী রোজী : এমএ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। আয়, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও দায় নেই তার।

সেলিনা বেগম : পেশায় রাজনীতিক সেলিমা শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেছেন অষ্টম শ্রেণী। কৃষি ও কুটিরশিল্প থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় আসে তার। বিয়ের উপহার ও পরবর্তীতে উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া ৮০ ভরি স্বর্ণ ছাড়াও ১০ লাখ টাকা এফডিআর, ১৫ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত ও স্বামীর নামে ১৪ লাখ মূল্যমানের স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে তার।

সেলিনা আখতার বানু : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ৫০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে তার। প্রায় দুই লাখ টাকা বার্ষিক আয় আসে কৃষি, বাড়িভাড়া ও পৈতৃক সম্পত্তি থেকে। স্বামীর রয়েছে ১৫ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা। ১৬ বিঘা পৈতৃক সম্পত্তি ও ১৭ লাখ টাকা মূল্যমানের বাড়ি, এপার্টমেন্ট রয়েছে।

লায়লা আরজুমান বানু : এইচএসসি পাস করা বানুর পেশা বাড়িভাড়া ও ব্যবসা। ৮৭ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার থাকলেও নগদ টাকা নেই তার। দুই লাখ বার্ষিক আয় এলেও রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার জমা অর্থ। সাড়ে ৫ লাখ টাকার মতো দেনা রয়েছে। গুলশান, মিরপুর যৌথ মালিখানায় জমি রয়েছে।

শিরিন নাইম : স্বশিক্ষিত শিরিন পেশায় ব্যবসায়ী। সিএমএম কোর্টে ৩৯৭ ধারায় তার নামে মামলা হয়েছিল ২০০৪ সালে। তা নিষ্পত্তি শেষে ২০১০ সালে প্রত্যাহার হয়। বার্ষিক আয় ৪ লাখ টাকা। ৫৭ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। ১৬ লাখ টাকা দেনা ব্যাংক ও ছেলের কাছে। উত্তাধিকার সূত্রে বাড়ি-এপার্টমেন্ট ও কৃষি জমির মূল্য অজানা।

কামরুল লায়লা জলি : এমএসএস ডিগ্রিধারী জলি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা স্বর্ণালঙ্কার, ১৯ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা, ৭২ লাখ টাকার মতো স্থাবর সম্পত্তি এবং যৌথ পরিবারের ১ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দেনায় রয়েছেন তিনি।

হ্যাপী বড়াল : স্বশিক্ষিত হয়ে পেশা হিসেবে নিয়েছেন ব্যবসা। আড়াই লাখ টাকা বার্ষিক আয়। ২০ ভরি স্বর্ণের পুরনো দাম ২০ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

রিফাত আমিন : স্বশিক্ষিত রিফাতের পেশাও ব্যবসা। ২০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। নগদ ১ লাখ টাকা, ৯ একর কৃষি জমির ৩ লাখ টাকার মৎস্য খামার ও ৫ লাখ টাকার দালান রয়েছে।

লুতফুন নেছা : অষ্টম শ্রেণী পাস, লুতফা কনস্ট্রাকশন নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ১৮ লাখ টাকা বার্ষিক আয়, ৩০ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত, ২২ ভরি স্বর্ণ, ১২ একর কৃষি ও অকৃষি জমি ছাড়াও একটি করে বাড়ি ও দালান রয়েছে। ৪০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে তার।

তারানা হালিম : এলএলএম করে আইন পেশায় ছিলেন। ওই পেশা ছেড়ে গতবারও এমপি হন। উত্তরাধিকারভাবে পাওয়া বাড়িভাড়া দিয়ে চলছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ৬ লাখ টাকা বার্ষিক আয় হলেও এফডিআর ভেঙে বর্তমানে সঞ্চয়পত্রও শূন্য। মায়ের ও নিজের কিছু গহনা বিক্রি করেছেন। বর্তমান মূল্যে ২ লাখ টাকার স্বর্ণ রয়েছে। ১৪ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। ২০০৯ সালে সংরক্ষিত আসনের মনোনয়নপত্রে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি।

মাহজাবিন খালেদ : খালেদ মোশাররফের মেয়ে মাহজাবিন বিএ সম্মান। রাজনৈতিক, সমাজকর্মীসহ ব্যবস্থাপনা পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ২০০ তোলা স্বর্ণ উপহার হিসেবে পেয়েছেন তিনি। স্বামীর নামে রয়েছে লাখ টাকার স্বর্ণ। ব্যাংকে স্বামীর ১ কোটি টাকা, নিজের নামে ৫৬ হাজার টাকা ও উত্তরাধিকার সূত্রে ১০ একর জমি রয়েছে।

ফজিলাতুন নেসা : এমএসসি, পেশায় সমাজসেবা। ২০০৭ সালে জরুরি ক্ষমতা আইনে সিএমএম আদালতে মামলা হয়েছিল। বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। শেয়ার, সঞ্চয় ও দোকান ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকা।

পিনু খান : স্বশিক্ষিত, পেশা রাজনীতি। ৮০ ভরি স্বর্ণ, ১০ কাঠা জমি, ৩০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। ২০০৯ সালের হলফনামায় তার স্বর্ণ ৩০ ভরি উল্লেখ করা হয়। সানজিদা খানম : এমএ, পেশায় সুপ্রিমকোর্ট বিভাগের আইনজীবী। বার্ষিক আয় ৩১ লাখ টাকা। ২৪ লাখ টাকার মূল্যমানের অস্থাবর সম্পত্তি, ৮৭ হাজার টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার ও প্লট-ফ্ল্যাট রয়েছে তার।

ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি : এলএলএম, আইনজীবী, সিএমএম আদালতে চারটি মামলা। একটিতে অব্যাহতি, তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন। ৩৫ ভরি স্বর্ণ উপঢৌকন। ২০ লাখ টাকা দেনা। ওয়াসিকা আয়শা খান : ব্যাচেলর অব কমার্স স্নাতক, বেসরকারি সংস্থায় চাকরি। ১০৭ তোলা স্বর্ণ।

সংরক্ষিত আসনে এবারও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নূরে-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী নবম সংসদেও তিনি সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। নবম সংসদের হলফনামায় তিনি ১৫ ভরি স্বর্ণের তথ্য দিলেও এবারে তিনি স্বর্ণালঙ্কারের খাতে অজ্ঞাত লিখেছেন। এ ছাড়া আগে তার নামে ১০ কাঠা কৃষি জমি দেখালেও এবারে তা উল্লেখ করেননি। তবে তিনি শুধু রাজউক থেকে প্রাপ্ত ৫ কাঠার প্লটটির হিসাব দিয়েছেন। অন্যদিকে নবম সংসদের হলফনামায় তার স্বামীর নামে অকৃষির জমি মূল্য ২৫ লাখ টাকা, ১০ শতাংশ জমি দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এবার স্বামীর নামে কোনো সম্পদই উল্লেখ করেননি।

মেরিনা রহমান : বিএসসি বিএড করা মেরিনা গৃহিণী ও সমাজকর্মী পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা বার্ষিক আয় আছে বাড়ি, এপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া থেকে। উপহার হিসেবে পাওয়া ৮০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। ৬ লাখ টাকা মূল্যমানের ফ্ল্যাট ছাড়াও নগদ টাকা-ব্যাংকে ১১ লাখ টাকার মতো রয়েছে তার।

রওশন আরা মান্নান : রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ। বাড়িভাড়া ও ব্যবসা হচ্ছে পেশা। স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা মূল্যমানের। স্থাবর সম্পত্তি ৪৪ লাখ টাকার বাড়ি ছাড়াও সাড়ে ৯ লাখ টাকার মতো অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর