সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

নির্বাচন কমিশনে বিদেশ সফরের হিড়িক

আজ ফিরছেন সিইসি

নির্বাচন কমিশনে বিদেশ সফরের হিড়িক

নির্বাচন কমিশনে বিদেশ সফরের হিড়িক লেগেছে। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে আজ নববর্ষের দিনেই দেশে ফিরছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এদিকে সিইসি ফেরার পরপরই চলতি মাস থেকেই ধারাবাহিকভাবে শুরু হচ্ছে নির্বাচন কমিশনারদের বিদেশ সফর। আগামী মে পর্যন্ত সফরের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আর সফরের তালিকায় খোদ কমিশনারাসহ ইসি সচিবালয়, জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিবন্ধন অনুবিভাগ এবং জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। জানা গেছে, আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যান্ডহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিয়া) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এ দুটি প্রকল্পের অধীনে বিদেশ সফরে ব্যয় হবে প্রায় দুই কোটি টাকা। ইসির সর্বত্র গুঞ্জন রয়েছে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ দেওয়ায় সংশ্লিষ্টদের উপহার হিসেবে বিদেশ ভ্রমণে পাঠানো হচ্ছে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সিইসি, ইসি সচিব ও ভোটার তালিকা প্রকল্পের পরিচালক বিদেশ সফরে রয়েছেন। সিইসিসহ তারা আজ ভোর ৫টার দিকে দেশে ফিরবেন বলে ইসি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রটোকল অফিসারকে সিইসির দেশে ফেরার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এর আগে সিংহভাগ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন রেখে গত ৩ মার্চ সিইসি দেড় মাসের দীর্ঘ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে সিইসি দীর্ঘ সফর নিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সিইসি দেশে থাকাকালে প্রথম দুই ধাপের ভোট হয়। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের ভোটের সময় যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করেন সিইসি। তবে ইতোমধ্যে তার অনুপস্থিতিতে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, সিইসি সফরে যাওয়ার পরেই উপজেলা নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট ও সহিংসতা বেড়েছে। এ ছাড়া এই দুই ধাপের ভোটে কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল মাঠ প্রশাসন। কমিশনের নির্দেশ অমান্য করে সরকারের কথামতো কাজ করেছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। যদিও গত ২১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে চিঠি (ই-মেইল) পাঠিয়েছেন। এরপরে ২৭ মার্চ আবারও এক ই-মেইলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দেন। জানা গেছে, ২ মার্চ সফর নিয়ে সিইসি স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে '৩ মার্চ থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করব। আমি না ফেরা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।' তবে ওই অফিস আদেশে সিইসি কত দিনের সফরে গিয়েছেন বা কবে দেশে ফিরবেন তা উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ আর দায়িত্বে থাকছেন না এমন একটি গুঞ্জন উঠেছিল খোদ নির্বাচন কমিশনেই। তিনি আর দেশে ফিরবেন না বলেও অনেক কর্মকর্তা মন্তব্য করেছিলেন। অন্যদিকে চলতি মাসের ১৮ তারিখে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলীর অস্ট্রেলিয়া সফরের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে ইসির ধারাবাহিক সফর। আগামী মাসে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সুইজারল্যান্ড ও মো. শাহনেওয়াজ ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কমিশনারের একান্ত সচিবরা এ তথ্য জানান। ম্যানেজমেন্ট অব সিটিজেন ডাটাবেজ, প্রোডাকশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন অব আইডি কার্ডস উইথ বায়োমেট্রিক ফিচার্স অ্যান্ড পার্সোনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড প্রটেকশন সিস্টেম সংক্রান্ত সভায় অংশ নিতে শাহনেওয়াজ ১৬ মে থেকে ২৫ মে ফ্রান্সে ও ২৬ মে থেকে ২ জুন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করবেন। জাবেদ আলী ১৮ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া যাবেন। অফিসিয়াল কাজ সেরে তিনি এক মাস অবস্থান শেষে ফিরবেন ১৭ মে। আবু হাফিজ ১ মে সপ্তাহ খানেকের জন্য সুইজারল্যান্ড যাবেন। তাদের এ সফরে ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, ভোটার তালিকা প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে কমিশনারদের সঙ্গে থাকবেন।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগ দিয়ে এ তিন নির্বাচন কমিশনার ও সিইসি কয়েকটি দেশে গেলেও নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক কোথাও যাননি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগে কোথাও যেতে রাজি না হলেও অফিসিয়াল কাজে এবার কোনো দেশ সফরে যেতেও পারেন। এখনো এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সম্মতি মেলেনি। এ ছাড়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে ৬ দিনের সফরে জর্ডান যাচ্ছেন ঢাকা জেলার নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহআলম। আগামী ৬ এপ্রিল গিয়ে ১২ এপ্রিল দেশে ফিরবেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর