রবিবার, ২২ জুন, ২০১৪ ০০:০০ টা
বিইএফ সম্মেলনে বক্তারা

দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতাই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে। এর জন্য সার্বিক অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে বর্তমান সরকার দেশে ব্যক্তি বিনিয়োগ ও বড় ধরনের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে। তিনি বলেন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবারই কাম্য। বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই জরুরি। গতকাল হোটেল রেডিসনে বাংলাদেশ অর্থনীতিবিদ ফোরামের (বিইএফ) প্রথম সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। এ দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির আরও সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ ও জনশক্তি উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি কাজ করছি, যা ব্যক্তি বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। কারণ বিদ্যুৎ না থাকলে ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়বে না। আবার দক্ষ জনশক্তি না থাকলে বড় ধরনের উৎপাদনও সম্ভব নয়। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এলে আবারও অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও সংকট সৃষ্টি হবে। সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ ঘটনা পুরো ব্যাংক খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির কোনো আশঙ্কা নেই। 'ভিশন ২০৩০ : ফ্রেমওয়ার্ক ফর ইকোনমিক পলিসি মেকিং অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক ফরমুলেশন ইন এ প্লুরালিস্টিক ডেমোক্রেসি'- এ স্লোগান সামনে রেখে দুই দিনব্যাপী সম্মেলন আজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অধ্যাপক রেহমান সোবহানের পরিচালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রিটেনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অধ্যাপক মাইকেল লিপটন। মাইকেল লিপটন তার মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত অর্থনীতির বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি সেখানে দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তেমন অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়নি। তবে পরে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আলমগীরের সভাপতিত্বে সম্মেলনের প্রথম দিন গতকাল ১০টি সেশন পরিচালিত হয়। প্রতিটি সেশনে একাধিক বক্তা বক্তব্য দেন।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকা উচিত নয় : অধ্যাপক রেহমান সোবহান

অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, রাজনীতির ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মতপার্থক্য থাকা উচিত নয়। সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক মতপার্থক্য স্থান পেতে পারে না। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আর এর জন্য একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার। আর এ লক্ষে আমাদের দরকার শক্তিশালী একটি নির্বাচন কমিশন। দেশবরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত এগিয়ে রয়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য পরিবেশ দরকার। কেননা ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে। এ রেমিট্যান্স কীভাবে, কোথায় ব্যবহার হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব্ব রয়েছে। যদিও এসব রেমিট্যান্স উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হতে পারত। কিন্তু এ নিয়ে সুষ্ঠু কোনো পরিকল্পনা চোখে পড়ে না। যে-যার মতো ব্যবহার করছে। প্রতি বছর রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ছে। রেমিট্যান্স দিয়েও বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন করা যেত।

বাংলাদেশে এত পাবলিক ব্যাংকের দরকার নেই : পরিকল্পনামন্ত্রী

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশে এত পাবলিক ব্যাংকের দরকার নেই। সরকারি কাজ পরিচালনা করার জন্য সোনালী ব্যাংকই যথেষ্ট। আর অন্য ব্যাংকগুলোকে ধীরে ধীরে ব্যক্তি-মালিকানায় দিয়ে দেওয়া উচিত। এতে ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বাড়বে এবং হলমার্ক, ডেসটিনির মতো ঘটনা ঘটবে না। পুঁজিবাজারের প্রধান সমস্যা আস্থার সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোনো আস্থা নেই। আমরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ, সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, জাতিসংঘের সিনিয়র উপদেষ্টা হামিদ রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফায়েকুজ্জামান, বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রমুখ। এ উপলক্ষে নৈশভোজের আয়োজন করেন বাংলাদেশ মহিলা উদ্যোক্তা ফেডারেশনের সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বক্তা ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ।

 

 

 

সর্বশেষ খবর