রবিবার, ২২ জুন, ২০১৪ ০০:০০ টা

আর্জেন্টিনার মেসিময় জয়

আর্জেন্টিনার মেসিময় জয়

মিনেইরাওয়ের স্টেডিয়ামে তখন হতাশার চিত্র। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। ম্যাচ গোলশূন্য ড্র-র পথে! অন্তিম বাঁশি বাজানোর জন্য প্রস্তুত সার্বিয়ান রেফারি মিলোরাড। ততক্ষণে আকাশি-সাদার উচ্ছ্বাস পরিণত হয়েছে হাহাকারে! উৎসবের অপেক্ষায় ইরান। কিন্তু ব্রাজিলের বেলো হরিজন্টোতে শেষ মিনিটে মঞ্চস্থ হলো এক মহানাটক! কেন্দ্রীয় চরিত্রে সেই লিওনেল মেসি। ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক শটে গোল করে ইরানের উৎসবকে পণ্ড করে দিয়ে বার্সা তারকা আর্জেন্টিনাকে টেনে নিয়ে গেলেন দ্বিতীয় রাউন্ডে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় জয়, আর লিওনেল মেসি পেলেন তার দ্বিতীয় গোল। গতকাল ৭০ ভাগ সময়ই বল নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন মেসিরা। মধ্যমাঠও ছিল আর্জেন্টিনার দখলেই। পুরো ম্যাচে তারা ৫১০ পাস সফলভাবে দিতে সমর্থ্য হয়েছে, যেখানে ইরান দিয়েছে মাত্র ১৩৬ পাস। কখনো ডান পার্শ্ব, কখনো বাম, কখনো বা সেন্টার দিয়ে একের পর এক আক্রমণ করেন মেসি-হিগুয়েন-ডি মারিয়া। কাল আলবেসিলেস্তরা ৮৭ বার ইরানের গোলমুখে আক্রমণ করে। প্রতিটি আক্রমণই একে একে ব্যর্থ করে দেয় ইরানের দক্ষ রক্ষণভাগ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মেসিকে আর আটকে রাখতে পারেননি পার্সিয়ানরা। বার্সেলোনা তারকার ক্যারিশম্যাটিক গোলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠে ছাড়ে আলেসান্দ্রোর শিষ্যরা। তবে কাল হারতেও পারত আর্জেন্টিনা। গোলবারের নিচে দক্ষ সার্জিও রোমেরো ছিল বলেই রক্ষা। অন্তত চার চারটি নিশ্চিত গোলের হাত থেকে রক্ষা করেছে আলবেসিলেস্তদের। অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন ইরানের গোলরক্ষক আলী রেজা। কাল বড় ঝড়টা যে গেছে তার ওপর দিয়েই। তবে শেষ মিনিটে মেসি ম্যাজিক না দেখালে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও হয়ে যেত আলী রেজাই। বলতে গেলে, এ ম্যাচে বেশির ভাগ সময়ই নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি। প্রথমার্ধে বলই খুঁজে পাননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। ৫৯ মিনিটে প্রথম চমক দেখান আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। মধ্যমাঠ থেকে একাই বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ইরানের ডি-বক্সে। কিন্তু তার শটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। মেসি নিষ্প্রভ থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তার ভক্তরা। কিন্তু শেষ মিনিটে চমক দেখিয়ে মনজয় করেন মেসি। গতকাল খেলার ১৪ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ইরানের গোলরক্ষর আলী রেজা হাগিগিকে একা পেয়ে বল জালে জড়াতে পারেননি হিগুয়েন। ২২ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করে সার্জিও আগুয়েরো। ৭৫ মিনিটে ডি মারিয়ার শটও রুখে দেয় আলী রেজা। তবে গতকাল দুটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে ইরান। দুবারই ইরানের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক রোমেরো। ৬৭ মিনিটে দিজেগাহর হেডটি বারের ওপর দিয়ে পার করে দেন রোমেরো। ৫২ মিনিটে রেজার হেডটিও আটকে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। ৬৪ মিনিটেও একটি গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছে ইরান। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ইরান প্রথম খেলেছিল ১৯৭৭ সালে। রিয়াল মাদ্রিদের ৭৫ বছর পূর্তিতে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছিল দুই দল। সেবার ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। বিশ্বকাপে প্রথম দেখাতেও কাল ৯০ মিনিট মেসিদের আটকে রেখেছিল ইরান। এ জন্য অবশ্য দলের ১১ জনকেই ডিফেন্সে এসে পাহারা দিতে হয়েছে। প্রথমার্ধের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল জয়ের জন্য নয়, ইরান যেন মাঠে নেমেছিল ড্র করার লক্ষ্য নিয়েই। শিষ্যদের প্রতি কোচ অস্কার তাবারেজের বারতা ছিল এমন- সবাই মিলে আর্জেন্টিনার আক্রমণ ঠেকাও, সুযোগ পেলে পাল্টা-আক্রমণ! গোল দিতে না পার দোষ নেই, তবে হজম করো না।
 ৯০ মিনিটে গুরুর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে ইরানিরা। নির্ধারিত সময়ে তাদের ইস্পাতকঠিন রক্ষণদুর্গ ভাঙতে পারেনি আর্জেন্টিনা। মেসি-আগুয়েরো-হিগুয়েন-ডি মারিয়ারা বারবার আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়েছে।
এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করল আর্জেন্টাইনরা। ‘এফ’গ্রুপ থেকে বাকি তিন দল নাইজেরিয়া, ইরান ও বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনার মধ্যে কারা শেষ ষোলতে জায়গা পাবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মেসিদের প্রতিপক্ষ সুপার ঈগল নাইজেরিয়া। জয় কিংবা ড্র করলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে আলবেসিলেস্তরা।
 

সর্বশেষ খবর